ফেনীতে বিভিন্ন দেশ হতে আগত ২২ ব্যক্তি কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। একইসাথে তাদের পরিবারের ৯৪জন সদস্যকেও কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। আজ সোমবার (১৬ মার্চ) দুপুরে করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন এসব তথ্য জানান।


সিভিল সার্জন জানান, ইতালি হতে ১২ জন, কাতার হতে ৩ জন, কুয়েত হতে ১ জন, গ্রীস হতে ১ জন, কোরিয়া হতে ১, চীন ১ জন, ভারত হতে ৩জনসহ প্রবাস ফেরত মোট ২২ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। তাদের সাথে পরিবারের সদস্যরাও কোয়ারেন্টিনে আছেন। এদের মধ্যে সদর উপজেলায় ৪ জন, ছাগলনাইয়া উপজেলায় ৪ জন, ফুলগাজীতে ৮জন, দাগনভূঞায় ৫জন, সোনাগাজীতে ১জন রয়েছেন।


তিনি জানান, এ ২২জনের তালিকা পুলিশ প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সাথে সমন্বয় করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি করে নজরদারি করবে। যাতে কেউ বাইরে বেরোতে না পারে। কোয়ারেন্টিনে থাকার নীতিমালাগুলো তাদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেছি। নীতিমালা অনুযায়ী তারা চলবেন। তাদের মধ্যে কারো যদি করোনা ভাইরাসের লক্ষণ প্রকাশ পায় তারা আমাদের সাথে অথবা আইইডিসিআর’র হটলাইনে যোগাযোগ করবে। আইইডিসিআর হতে একটি টিম এসে তাদের নমুনা সংগ্রহ করবে। আইইডিসিআর যদি নিশ্চিত করে তিনি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হবে। তাদের চিকিৎসার সম্পূর্ণ খরচ সরকার বহন করবে।


তিনি জানান, বিমানবন্দরে তাদের কারো শরীরে করোনা ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। তবু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এসব প্রবাসীদের নাম ঠিকানা নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রত্যেককে ১৪ দিন পারিবারিক কোয়ারেন্টাইনে থাকা নিশ্চিত করা হয়েছে।


ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, করোনা ভাইরাসের সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ও সেবিকাদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি জানান, ফেনীতে ১০৫ শয্যার বিশেষ ব্যবস্থার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আইসোলেটেড ওয়ার্ডে ৩০ বেড, মহিপালে ট্রমা সেন্টারে ৩০ বেড, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০ বেডসহ ৫টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৫ বেড করে ২৫ বেডের বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।


সিভিল সার্জন জানান, ইতোমধ্যে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল ও মঙ্গলকান্দির আইসোলেশন ইউনিট সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়াও ফেনীর মহিপালের ট্রমা সেন্টারের প্রস্তুতির এর কাজ চলছে। তিনি জানান, ট্রমা সেন্টারে বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা না থাকায় প্রস্তুত করতে সময় লাগছে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে চিঠি দিয়েছি এবং কাজগুলো দ্রুত সম্পন্ন করতে বলেছি। এছাড়া বাকি সব আইসোলেশন ইউনিট প্রস্তুত আছে।


তিনি জানান, করোনা ভাইরাস সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে জেলাব্যাপী ৫ হাজার পোস্টার ও ৩০ হাজার লিফলেট বিতরণের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ে ২৪ ঘন্টা একটি রেসপন্স টিম নিয়োজিত করা হয়েছে। যে কোন প্রয়োজনে ০১৭৩৩০৬১৩৫৬, ০১৯৫৬৩৭৬৩৮৫, ০১৯৯১৭৯৭৭৮০, ০১৩১২৫২২৬৭৭ নাম্বারে যোগাযোগ করা যাবে। এছাড়া প্রতিদিন সকাল ১০টায় করোনা ভাইরাসের আপডেট সম্পর্কে সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে সাংবাদিকদের অবহিত করা হবে বলে জানান তিনি।


এসময় সিভিল সার্জন অফিসের ফেনী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এস.এস.আর মাসুদ রানা, সিভিল সার্জন অফিসের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ফাহিম হোসেনসহ সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।