‘সুনশান নীরবতায় জানাযায় দাঁড়িয়েছি মাত্র সাতজন মানুষ। মৃতের ছেলে ও জামাতা ছাড়া আমাদের জানাযায় কেউ আসেনি।’


বৃহস্পতিবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত তিনটায় ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরে করোনাভাইরাস উপসর্গ নিয়ে মৃত নুরুন নবীর জানাযার বর্ণনাকালে স্বেচ্ছাসেবী দলের প্রধান ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ একরামুল হক ভূঁঞা এ কথা বলেন। তার নেতৃত্বে পাঁচজনের স্বেচ্ছাসেবী দল মৃতের গোসল, জানাযা ও দাফন সম্পন্ন করে।


মোহাম্মদ একরামুল হক ভূঞা পেশায় ব্যবসায়ী। নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আবাসন লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আরবী সাহিত্যে সর্বোচ্চ ডিগ্রী গ্রহণ করেছেন হাটহাজারী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় হতে। দলের অন্য সদস্যরা হলেন, সালেহ উদ্দিন, সাখাওয়াত হোসেন, আবু হানিফ, নুরুল আফছার।


একরামুল হক ভূঞা জানান, রাত ১২টায় আমরা যখন মৃতের বাড়িতে পৌঁছাই চারপাশে যেন অন্ধকারের প্রলয় নেমেছে। ভয়, শংকা আর অজানা আতংকে পুরো জনপদে নেমেছে সুনশান নিরবতা।


তিনি বলেন, জানাযার প্রস্তুতিকালে কেউ নেই পাশে। অন্ধকার যেন জেঁকে ধরছিল আমাদের। যেন একটি মৃত্যু উপত্যকার ফাঁদে পড়ে আছি, আমাদের সাহস দেয়ারও কেউ নেই।


তিনি বলেন, মৃতের আপন বড় ভাই ও ভাজিতা দুর হতে উঁকি দিচ্ছিলেন। এমন মৃত্যু আল্লাহ কারও ভাগ্যে যেন না রাখেন।


ব্যতিক্রমী এ কাজে নিজেদের নিয়োজিত করা প্রসঙ্গে একরামুল হক বলেন, যেসকল মানুষ মহামারীতে মারা যাবেন তাদের দাফন, জানাযা ও শরীয়ত নির্দেশনা পালনে ওলামা-একরাম এগিয়ে আসবেন, এটি ঈমানী দায়িত্ব।


তিনি বলেন, সরকারের নির্দশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে আমরা সাংগঠনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি দায়িত্ব পালনে।


একরামুল হক জানান, এ কাজের জন্য সকল উপজেলায় ৭ হতে ১০ জনের কমিটি করা হচ্ছে, আজকের মধ্যে তা সম্পন্ন হবে।


তিনি বলেন, পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার আহবানে আমাদের উপজেলা দল তার সাথে ইতোমধ্যে সাক্ষাত করেছে। করোনায় মৃত ব্যক্তির যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় রীতিতে জানাযা ও দাফন সকল উপজেলা কমিটি স্ব স্ব উপজেলায় স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে কাজ করবে। ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত হয়ে শহীদ হন তবে তার দাফন কাফন আমরা করবো।

মৃতের ধর্মীয় রীতি পালনে নিজেদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের একজন ডাক্তারের সাথে ফোনে পরামর্শ নিয়ে মৃতদেহের গোসল সম্পন্ন করি। এরপর একটি বিশেষ পলি ব্যাগ এ লাশ রাখি, তারপর কাফন পরাই। দাফন পর্যন্ত ডাক্তারের দেয়া পরামর্শের ভিত্তিতে প্রতিটি ধাপ সম্পন্ন করি।


তিনি বলেন, এর আগে স্বাস্থ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা ফেনীতে আমাদের পিপিই পরিধান ও খোলার নিয়ম দেখিয়ে দিয়েছিলেন এবং পিপিই সরবরাহ করেন। দাফনের পর পরামর্শ অনুযায়ী পরিধেয় পিপিই, গ্লাভস ও অন্যান্য সরঞ্জাম কেরোসিন দিয়ে আগুনে পুড়ে ফেলা হয়।