প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসা মানেই ব্যক্তি করোনামুক্ত নয়। নানা কারণে আক্রান্ত ব্যক্তিরও ফলাফল নেগেটিভ দেখাতে পারে। তাই এ অবস্থায় পরীক্ষার ওপর নির্ভর না করে উপসর্গ, রোগীর ইতিহাসসহ সব বিষয়ে নজর দিতে হবে।

রোববার (১২ এপ্রিল) বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী পত্রিকা ওয়াশিংটন পোষ্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উন্নত ও সুসংগঠিত চিকিৎসাব্যবস্থার দেশগুলো করোনভাইরাস আক্রান্তদের শনাক্তে মেডিকেল পরীক্ষার আওতা যথাসম্ভব বাড়িয়েছে। সংক্রমণ নিশ্চিত হলে তার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি আক্রান্ত ব্যক্তির মেডিকেল পরীক্ষায় ভাইরাস না পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আর এ ধরনের ঘটনায় বাড়ছে সংক্রমণের ঝুঁকি।

যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা অঙ্গরাজ্যের মায়ো ক্লিনিকের সংক্রামক রোগ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ প্রিয়া সম্পতকুমার বলেন, ‘পরীক্ষায় ভাইরাস ধরা পড়বে কি না, তা নানা বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।’ এ ব্যাখ্যায় তিনি জানান, হাঁচি-কাশি বা এজাতীয় শারীরিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি কতটা ভাইরাস বের করছেন, মেডিকেল পরীক্ষার নমুনা কিভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে, অভিজ্ঞ ব্যক্তির মাধ্যমে যথাযথভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে কি না, নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার জন্য আনতে রাস্তায় কতটা সময় লেগেছে, এমন অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে পরীক্ষার ফলাফল।

বাল্টিমোরের জনস হপকিন্স হসপিটালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড্যানিয়েল ব্রেনার জানান, এক ব্যক্তির মধ্যে কভিড-১৯ রোগের সব উপসর্গ ছিল, অথচ তার নমুনা তিনবার পরীক্ষা করার পরও নেগেটিভ ফল পাওয়া যায়। এরপর তার শ্বাসনালির মধ্য দিয়ে ক্যামেরা ঢুকিয়ে ফুসফুস পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং বিশেষ ব্যবস্থায় সেখান থেকে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার পর ভাইরাসের উপস্থিতির ব্যাপারে পজিটিভ ফল পাওয়া যায়। এ রোগীর পরীক্ষার ফল নেগেটিভ পাওয়ার পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হলে তার মাধ্যমে আরো বহু লোক আক্রান্ত হতে পারত। তাই শুধু প্রাথমিক মেডিকেল পরীক্ষার ওপর নির্ভর না করে উপসর্গ, রোগীর ইতিহাসসহ সব বিষয়ে নজর দেওয়ার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।

নিউইয়র্ক সিটি বিভাগের স্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্যবিধি বিভাগের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার দেমেত্র দাশালাকিস জানান, সম্প্রতি তিনি হালকা লক্ষণযুক্ত একটি রোগীকে পরীক্ষা করে নেতিবাচক ফলাফল পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনার মহামারীতে জ্বর বা কাশি থাকলে প্রথম সম্ভাবনা - আপনার যদি জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট হয় তবে এটি কোভিড -১৯। এমনকি পরীক্ষা নেতিবাচক হলেও।’

উল্লেখ্য, রবিবার সকাল পর্যন্ত করোনায় বিশ্বব্যাপী নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৮ হাজার ৮২৭ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ লাখ ৮০ হাজার ৩১৪ জন। আক্রান্ত ও নিহতের সংখ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫ লাখ ৩২ হাজার ৮৭৯ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ২০ হাজার ৫৭৭ জনের। আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে স্পেন। সেখানে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৩ হাজার ৪২৭ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ হাজার ৬০৬ জনের। মৃত্যুর দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইতালি। দেশটিতে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৫২ হাজার ২৭১ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৯ হাজার ৪৬৮ জনের।

সূত্রঃ মেডিভয়েস