প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের অন্যান্য এলাকার মত পরশুরামের পোল্ট্রি শিল্প ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। কমে গেছে ডিম ও মুরগির মাংসের দাম। উৎপাদিত মুরগি, ডিম সময়মত বিক্রি করতে না পারায় বিপাকে খামারিরা।


উপজেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত মিলে উপজেলায় প্রায় ৫ শ মুরগির খামার রয়েছে। এতে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালি (কক) মুরগির উৎপাদন ও বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়।


মির্জানগর ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন নামে এক খামারি বলেন, কয়দিন আগে ব্রয়লার মুরগি কেজি প্রতি পাইকারী বিক্রি হত ১০০-১১০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৭৫ টাকা। আবার লেয়ার মুরগি যেখানে বিক্রি হত ১৮০ -২০০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫৫ টাকা। তিনি বলেন, যথাসময়ে পরিবহন সংকটের জন্য বড় ধরনের ক্ষতি মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের।


নুরুল আবছার রুবেল নামের ইউনিয়নের অন্য খামারি বলেন, দৈনিক খামারের সবধরনের কার্য সম্পাদনে ১৫ হাজার টাকা খরচের বিপরীতে বর্তমানে আমার প্রায় ৩ হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে।
তিনি উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় ক্ষতির সম্মুখীন হলেও সরকারিভাবে গুটিকয়েক চিহ্নিত ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কাউকে তেমন প্রণোদনামূলক কোন সহায়তা দেওয়া হয়না।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সোনালি (কক) মুরগি খামারি বলেন, কয়দিন আগেও প্রতি কেজি ২৭৫-২৯৫ টাকা বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন তা ২০০-২৩০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, খাদ্য এবং ঔষুধের দাম অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে আবার মুরগির দাম কমে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের খামার বন্ধ করে দিতে হবে।


চিথলিয়া ইউনিয়নের জিক্কু নামের আরেক খামারি বলেন, কয়দিন আগে প্রতি ডিম আমরা ৬'টাকায় বিক্রি করলেও তা এখন ৪'টাকা ৫০ পয়সা বিক্রি করতে হচ্ছে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় মুরগি ও ডিমের চাহিদাও অনেক কমে গেছে।


পশ্চিম সাহেবনগর গ্রামের খামারি সাইদুল ইসলাম বলেন, প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগিতে খরচ হচ্ছে প্রায় ১'শ টাকা। কিন্তু এখন তা ৩০-৪০ টাকা লোকসানে বিক্রি করতে হচ্ছে।


উপজেলার শীর্ষ পোল্ট্রি খাদ্য বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান আল আমিন পোল্ট্রি ফিডের স্বত্বাধিকারী মনিরুল কবির মাসুদ বলেন, পরিবহন স্বল্পতা এবং ভুল তথ্য দিয়ে ছড়ানো করোনা গুজবে বিক্রি আশংকাজনকহারে কমে গেছে।


খামারে উৎপাদিত ডিম বিক্রয়ে দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৫ দিনের বেশি ডিম সংরক্ষণ করা যায়না। আগের তুলনায় ডিমের চাহিদাও নেই তেমন। ফেনী ও চট্টগ্রামে ৩ টাকা দরে সীমিত ডিম বিক্রি হচ্ছে। এভাবে আর এক সপ্তাহ চললে ব্যপক লোকসানের মুখে খামার বন্ধ করে দিতে হবে মালিকদের।


উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ ঈসমাইল হোসেন বলেন, করোনার প্রভাবে উপজেলার খামারিরা আর্থিকভাবে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, তাদের সহায়তার জন্য আমি দ্রুত সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করব।


উপজেলার পোল্ট্রি খামার সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা এ সংকট উত্তরণে সরকারের সহায়তার দাবি জানান।