পরিবারের সদস্যদের রিপোর্ট এখনো না পাওয়ায় ফেনীর সোনাগাজীতে কোভিড-১৯ শনাক্ত ব্যক্তি বলেন, করোনায় নয়, মনে হচ্ছে স্ট্রোক করে মরে যাব। বাবা-মা স্ত্রী সন্তানরা আক্রান্ত কিনা এ চিন্তায় অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।


আজ সোমবার ২৭ এপ্রিল) বিকালে ফেনীর করোনা ডেডিকেটেড হসপিটাল ট্রমা সেন্টার হতে মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে নিজের সুস্থতার কথা বলতে গিয়ে এসব কথা বলেন।


তিনি বলেন, চলতি মাসের ২১ তারিখ বাবা-মা, দুই বোন, স্ত্রী ও দুই সন্তানের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ এখনো জানি না ভাগ্যে কি আছে।


জেলায় প্রথম শনাক্ত ছাগলনাইয়ার কোভিড আক্রান্ত ব্যক্তি পরিবারের সদস্যদের অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, ১৭ এপ্রিল নমুনা সংগ্রহ করা হলেও এখনো রিপোর্ট জানি না। আজ আবার পরিবারের সদস্যের নমুনা সংগ্রহ করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ।


ট্রমা সেন্টারের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও ফেনী করোনা সমন্বয়ক ডাঃ কাজি সানজিদা জানান, ট্রমায় ভর্তিকৃত দুইজন কোভিড রোগির দ্বিতীয় দফায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা দুজনেই সুস্থ আছে। ছাগলনাইয়ার শনাক্তকৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের ফলাফল নেগেটিভ এসেছিল। যেহেতু তারা একই পরিবারের অন্তর্ভূক্ত তাই বাড়তি সতর্কতা হিসেবে আবার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।


সোনাগাজীতে শনাক্ত ব্যক্তি স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ল্যাব টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করেন। ক্লিনিকের মালিক ডাঃ মোঃ নুর উল্লাহ জানান, স্বাস্থ্য বিভাগ বিভিন্ন তারিখে ক্লিনিকের ১৩জনের নমুনা সংগ্রহ করে এবং প্রশাসন তা লকডাউন করে।


মোঃ নুর উল্লাহ বলেন, ২১ এপ্রিল আমার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে কিন্তু এখনো রিপোর্ট পাইনি। কোন রকম অসুস্থতা না থাকলেও মানসিকভাবে খুব অস্থির লাগছে রিপোর্ট না পেয়ে।

সোনাগাজীর কোভিড রোগীর সহকর্মী ল্যাব টেকনিশিয়ান সালাহউদ্দিন বলেন, সুস্থ আছি কিন্তু অজানা ভয়ে ঘুমাতে পারি না। জানতে পারছি না আমি আক্রান্ত কিনা। একইভাবে নিজেদের সুস্থ দাবী করে রিপোর্টের বিলম্বে মানসিক অসুস্থতার কথা বলেন ল্যাব এসিসট্যান্ট শাহীন আক্তার ও ফার্মাসী ম্যানেজার জুয়েল।


সিভিল সার্জন সূত্র জানায়, রবিবার রাত পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ ২৬১টি। ফলাফল পাওয়া গেছে ১১৫টি। বাকী আছে ১৪৬টি। এর মধ্যে ২টি পজিটিভ।


রিপোর্ট বিলম্বের কারন হিসেবে ফেনী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, চট্টগ্রামের ফৌজদার হাটে বিআইটিআইডিতে ফেনীসহ ছয় জেলায় সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা হয়। একটিমাত্র টেস্টিং সেন্টার হওয়ায় সেখানে ক্যাপাসিটির চেয়ে অনেক বেশি নমুনা জমা পড়ছে। ফলে ফেনী থেকে যা পাঠানো হচ্ছে তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, দ্রুততর সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেস্ট সেন্টার চালু হচ্ছে। তখন রিপোর্ট পেতে ঝামেলা কমে আসবে।


বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সমন্বয় সভায় জেলার করোনাভাইরাস মোকাবেলা ও ত্রাণ কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ফেনীসহ আশেপাশে জেলাগুলোতে টেস্টিং সেন্টার নেই। কোভিড টেস্ট সহজলভ্য করতে ফেনী অথবা ফেনীর কাছাকাছি কোথাও টেস্টিং সেন্টার করবার জন্য আমরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করব।