ঢাকা কলেজের ইতিহাস বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলো শাহপরান। গতবছর (২০১৯) হঠাৎ হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া বন্ধা হয়ে মারা যায় সে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানায় তাদের বাড়ি। শাহপরানের মৃত্যুর আগে ২০১৮ সালে তার পিতা মারা যান। স্বামী ও সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা তার মা। এ খবর পেয়ে দেরি করেন নি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)'র স্বাধীনতার সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) সে অসহায় মায়ের জন্য উপহার পাঠিয়েছেন তিনি।


যশোর থেকে একজন ফোন দিলে সাদকে। বললেন, ভাইয়া বাসায় বাচ্চার খাওয়ার জন্য দুধ কিনতে পারছিনা, বাসায় খাবারও নাই। কিছু করা যায় আমার জন্য? তিনিও বাদ গেলেন না। যশোর লকডাউন থাকায় তার জন্যও সহযোগিতা পাঠানো সহজ বিষয় না। তবু দমলেন না তিনি। উপায় বের করে যশোরে সেই সাহায্য চাওয়া পরিবারের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দিলেন তিনি।

এভাবেই যখন খবর পেয়েছেন কোন অসহায় মানুষের কথা, সেখানেই সহযোগিতার হাত বাড়াতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন তিনি।

দেশের বিভিন্ন স্থানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অসহায় ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের পরিবারের পাশাপাশি সহযোগিতা পাচ্ছে সাধারণ মানুষও। তিনি এ কার্যক্রমের নাম দিয়েছেন ‘মানুষের পক্ষ হতে উপহার’।

‘দিনের বেলা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শিক্ষার্থীদের নিকট খাদ্যসামগ্রীর উপহার পাঠানোর কাজ করি, আর রাতে বিভিন্ন গ্রামে। আমাদের কাছে আসতে হয়নি, আমরা পৌঁছে দিয়েছি। এইভাবে চলতেছে, এই কাজে কোন ক্লান্তি নেই’- বললেন সাদ বিন কাদের চৌধুরী।


আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিনশোর অধিক পরিবারের কাছে পৌঁছানো হয়েছে এ সহযোগিতা। সাদ বলেন, অনেক স্থান আছে বৃষ্টির কারণে কাদামাটির রাস্তায় সিএনজি যেতে পারে না, সেসব স্থানগুলাতেও আমরা উপহার সামগ্রী পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি।


তিনি বলেন, বিশ্বাস করুন এতো সুন্দরভাবে মানুষের পাশে থাকার সুযোগ সবসময় আসে না। করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট দুর্যোগের শুরু হতেই এভাবে নিরলস মানুষদের সহায়তার জন্য পরিশ্রম করে চলেছেন সাদ। এ কাজে সাহায্য করছেন অনেকেই।


এ কাজের প্রাপ্তি সমপর্কে বলতে গিয়ে সাদ বলেন ‘দিন শেষে অন্যের হাসি আমাদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়। একজন অস্বচ্ছল বন্ধুর পরিবার যখন আমাদের উপহার পেয়ে খুশি হয়, সেটিই আমাদের তৃপ্তি। এই সংকটে দলমত আমরা বুঝি না, আমরা বন্ধু হয়ে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে চাই। সকলে মিলে এ সংকট মোকাবেলা করতে চাই। ’


কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের এ নেতা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠের নির্বাচিত সংসদের প্রতিনিধি হিসেবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা রয়েছে। আমি চাইনা, কোন শিক্ষার্থী কোন দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করুক। যার কারণেই এমন উদ্যোগ। যেহেতু আমি একজন ছাত্র, তাই সবার সহযোগিতা নিয়ে এই কাজে নেমেছি।’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম চালিয়ে যাবার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সাদ।


এ কার্যক্রমের প্রশংসা করে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফ খান রায়হান বলেন, মেধাবী, সাহসী, লড়াকু এক তরুণ সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তার এ কার্যক্রম অন্যান্যদের জন্য প্রেরণা স্বরূপ। তিনি বলেন, বর্তমান সমাজে যখন বোদ্ধারা প্রায়সই তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্নতা প্রকাশ করেন, বর্তমানের তরুণ সমাজকে আত্মকেন্দ্রিক বলে আখ্যা দেন। সেই সময়ের এক ব্যতিক্রমি উদাহরণ সাদ বিন কাদের চৌধুরী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীদের যেকোন বিপদে বন্ধুর মত সবার আগে এগিয়ে গেছেন তিনি।