শুক্রবার সন্ধ্যা। ইফতারের সময় সমাগত। এমন সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে একটি পণ্যবাহী ট্রাক এসে থামল। গাড়ি থেকে চালক নেমে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগলেন। কোথাও ইফতারি নেই। করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সব বন্ধ রয়েছে। বিপাকে পড়লেন ওই চালক। সারাদিন রোজা রেখে ইফতারি করবেন কোথায় তা নিয়ে চিন্তিত তিনি। এসময় সময় এগিয়ে এল কয়েকজন যুবক। তাদের হাতে খাবারের প্যাকেট। তারা গিয়ে ওই চালক ও সহকারির হাতে তুলে দিল সেগুলো। আর তা পেয়ে তাদের মুখে ফুটে উঠল প্রসন্ন হাসি।


এভাবে রমজানে এভাবে প্রতিদিন ফেনীর মহিপালে গাড়ি থামিয়ে চালক ও চলাচলকারী পথচারীদের ইফতারি করাচ্ছেন ফেনী পৌর প্যানেল মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী। তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে প্রতিদিন ২৫০ জন রোজাদারের মাঝে ইফতার বিতরণ করছেন তিনি।


আর এ কার্যক্রমে স্বেচ্ছায় অংশ নিচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীর ৩০ জনের একটি দল। বিকাল হতেই মহিপাল ফ্লাইওভারের পূর্ব অংশের সড়কের গিয়ে খাবারের প্যাকেট হাতে রোজাদারদের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকে তারা।


কার্যক্রম সম্পর্কে স্বপন মিয়াজি জানান, রোজাদারদের ইফতার করানো পূণ্যের কাজ। সেই চিন্তা থেকেই আমার এ ক্ষুদ্র আয়োজন।


তিনি বলেন, আমার ওয়ার্ডের পাশে ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক। প্রতিদিন এই পথে অসংখ্য যানবাহন ও পথচারী চলাচল করে থাকে। মহাসড়কে রোজাদার গাড়ীর চালক ও পথচারীরা ইফতার করতে অসুবিধায় পড়েন। তাদের কথা চিন্তা করে বিগত কয়েক বছর ধরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ইফতারের আয়োজন করে আসছি। বিগত বছরগুলোতে আমার কার্যালয়ের সামনে বসে ইফতার করতে পারতো রোজাদাররা। এবার করোনার কারণে সামাজিক দুরত্ব বিবেচনা করে প্যাকেট করে হাতে হাতে ইফতারী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।


চলমান সংকট সম্পর্কে স্বপন মিয়াজী বলেন, সমাজের সকল বিত্তবানরা যদি নিজ নিজ অবস্থান থেকে সামর্থ্য অনুযায়ী এগিয়ে আসেন তাহলে যে কোন সংকট মোকাবেলা সহজ হয়ে যায়।


এছাড়াও পৌর ১৩ নং ওয়ার্ডের কর্মহীন মানুষদের সাধ্যমত সহযোগিতা করে যাচ্ছেন তিনি।


ইফতার বিতরণের দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবক ও সমাজ কর্মী মাঈন উদ্দিন সুমন বলেন, জনন্দিত নেতা নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজির ভাইয়ের অর্থায়নে প্রতিদিন রোজাদার গাড়ীর চালক ও পথচারীদের মাঝে ইফতারী বিতরণ করা হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি মহতী উদ্যোগ। এতে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।


কাভার্ডভ্যান চালক মনোয়ার হোসেন বলেন, আমি রোডে গাড়ী চালায় আজ অনেক বছর। মহাসড়কের আরও কোথাও এ ধরনের কার্যক্রম চোখে পড়েনি।


তিনি বলেন, মহাসড়কের পাশে বেশিরভাগ মানুষ ব্যবসায় মত্ত থাকে। এক গ্লাস পানিও বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। সেখানে ভিন্ন চিত্র ফেনীর মহিপালের এই জায়গার। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এখানে রোজাদারদের ইফতার করানো হয়। এমন উদ্যোগের জন্য তিনি আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।


জানা গেছে, প্রতিদিন ইফতার মেন্যুতে থাকে বুট, পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনী, মুড়ি, খেজুর ও একটা পানির বোতল। আর প্রতি শুক্রবার ইফতারি হিসেবে বিরানী ও পানি দেওয়া হয়।