বুধবার (৬ মে) ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত এক রোগী কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে। এতে তার চিকিৎসায় হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তারসহ স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার ঝুঁকিতে পড়েছে। একটি সূত্র জানায় কিছু স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিনে গেছেন। জানা যায়, আগামীকাল পঁচিশের অধিক স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা সংগ্রহ করা হবে।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ আবুল খায়ের মিয়াজী তার ফেইসবুকে দেয়া এক পোস্টে লিখেন, 'জেলা সদর হাসপাতাল ফেনী'র ফ্লু আইসোলেশান ওয়ার্ডে ভর্তিকৃত মিরসরাই নিবাসী রোগিণীর কভিড-১৯ পজিটিভ!!!'। অপর এক পোস্টে তিনি বলেন, 'আজ ওই রোগীর সংস্পর্শে আসা গ্রুপের স্বাস্থ্য কর্মীদের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তী গ্রুপ দায়িত্ব পালন করবে।'

একসাথে অধিকসংখ্যক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টিনে গেলে হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার যেমন ব্যাঘাত ঘটবে, তেমনি ঝুঁকির পরিমাণও কম নয় বলছেন স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা। সব মিলিয়ে হাসপাতালের পরিস্থিতি কি হতে যাচ্ছে সে নিয়ে কর্মকর্তারা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারও রয়েছেন ঝুঁকির তালিকায়।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, গত ২ মে শ্বাসকষ্ট নিয়ে ফেনী জেনারেল হাসাপাতালে ওই মিরসরাইয়ের কিশোরীকে আনা হয়। সেদিনই তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম পাঠানো হয়। তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে বললে তার পরিবার সম্মত হয় নি। এরপর ৪ মে তার অবস্থা খারাপ হলে তাকে আবার হাসপাতালে নিয়ে আসে তার পরিবার। আইসোলেশনে ওয়ার্ডে রেখে তার চিকিৎসা শুরু হয়। তার বুকের এক্সরে করে দেখা যায় ফুসফুসে পানি জমেছে। অবস্থা সংকটাপন্ন হয়ে উঠছে। শ্বাসকষ্ট বেড়ে চলেছে।

ডাঃ ইকবাল হোসেন ভূঞা জানান, বুধবার বিকালে তার কোভিড-১৯ সংক্রমণের প্রমাণ মেলে। ওইদিন তাকে সন্ধ্যা ৭ টার দিকে করোনা ডেডিকেটেড এ্যাম্বুলেন্সযোগে চট্টগ্রামে পাঠানো হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ওই রোগীর চিকিৎসায় নিয়োজিত এক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ কয়েকজন স্বাস্থ্যকর্মী খুব কাছ থেকে তার চিকিৎসা করেছে।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, যতই সুরক্ষা পোশাক পরে চিকৎসা দেয়া হোক না কেন, তবু আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে। নমুনা পরীক্ষায় যদি চিকিৎসকগণের করোনা পজিটিভ হয়, তাহলে হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা ব্যহত হবে।

বিএমএ ফেনীর সভাপতি ডাঃ সাহেদুল ইসলাম কাওসার কমিউনিটি সংক্রমণের আশংকা প্রকাশ করেছেন। বুধবার সন্ধ্যায় ফেইসবুকে প্রকাশ করা এক স্ট্যাটাসে তিনি আশংকা প্রকাশ করে বলেন, ফেনী জেনারেল হাসপাতালে গত কয়েকদিন যাবৎ ভর্তিকৃত একজন রোগীর কোভিড-১৯ পজিটিভ মানে বেশ কিছু চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মী কোয়ারেন্টাইন এ যেতে হচ্ছে। এমতাবস্থায় ট্রান্সমিশন রোধের একমাত্র উপায় হলো সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা।

ওই পোস্টে তিনি আরও বলেন, ফেনী জেলা অন্য অনেক জেলা থেকেই ভালো অবস্থায় ছিলো এতদিন। একটি খারাপ টার্ন এর দিকে মোড় নিচ্ছে হয়তোবা। তাই এক্ষুনি সর্বোচ্চ সতর্কতা প্রয়োজন।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যানুযায়ী, বুধবার (৬ মে) পর্যন্ত ফেনীতে ৭ জনের দেহে করোনা পজিটিভ এসেছে। এদের মধ্যে ৪জন নারী ও ৩ জন পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে ২জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।