পরশুরামে পরীক্ষামূলকভাবে নতুন জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ এর আবাদ করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (১২ মে) উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবনগর গ্রামে প্রদর্শনীর আওতায় এ ধানের জমির ফসল কর্তন করা হয়।


কৃষি অফিস সূত্র জানায়, উপজেলা কৃষি অফিসের তত্ত্বাবধানে মির্জানগর ইউনিয়নের পশ্চিম সাহেবনগর গ্রামের ৩ একর জমিতে ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে পরীক্ষামূলক চাষের জন্য প্রতি উপজেলায় ১ জন কৃষককে বাছাই করা হয়েছে।


উৎপাদিত ধান বীজ সম্পর্কে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ কামরুজ্জামান বলেন, কৃষি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বীজ, সার, প্রশিক্ষণ ও নিয়মিত তদারকির মাধ্যমে প্রদর্শনী ট্রায়াল হিসেবে নতুন জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ এর উৎপাদন করা হয়েছে। তিনি বলেন, পরীক্ষামূলক উৎপাদনে পুরো সময়জুড়ে এ ধানে অন্যান্য বীজের মত কোন ধরনের রোগের চিহ্ন লক্ষ্য করা যায়নি। যার ফলে কৃষক উপকৃত হয়ে ভবিষ্যৎএ এ ধান চাষে অন্যান্য কৃষক উদ্বুদ্ধ হয়েছে।


কৃষি কর্মকর্তা বলেন, এ ধানের আয়ুষ্কাল ১৪৫ দিন। যা আমাদের ব্রি ধান ২৮ জাতের প্রতিস্থাপক হিসেবে মাঠে উৎপাদন করতে পেরেছি।


ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ বীজ থেকে উৎপাদিত ধান কোনমতেই বীজ হিসেবে রাখা যাবেনা কিংবা পরবর্তীতে বীজ হিসাবে ব্যবহার করা যাবেনা বলেও জানান কৃষি কর্মকর্তা।


ধানচাষী কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাকে ৩ একর জমির জন্য ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ এর বীজ দেওয়া হয়েছিল। সাথে সার ও কীটনাশকও দিয়েছে। তিনি বলেন, এতদিন অন্যান্য জাতের ফসল করে আমি বিভিন্ন রোগ আক্রমণের জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছি। কিন্তু এ মৌসুমে এমন কিছুর সম্মুখীন না হওয়ায় এ ধান চাষ করে আমি লাভবান হব বলে আশা করছি।


পাশের জমির ইউছুপ নামের অন্য এক কৃষক বলেন, এ ধান চাষে সবদিক থেকে সুবিধা পাওয়া যায়।ব র্তমানে আমাদের এইদিকে ধানে ব্লাস্টসহ অনেক রোগের আক্রমণ করলেও এ ধানে তেমন কোন রোগবালাই দেখা যায়নি।


আবুল কাশেম নামে অন্য আরেক কৃষক বলেন, কৃষি অফিস থেকে যদি আমাদের এ ধানের বীজ ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা প্রদান করা হয় তাহলে আমরা আগামীতে এ ধান চাষ করতে চাই।


উপজেলা কৃষি অফিসের মির্জানগর ইউনিয়নের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামছুল হুদা বলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, হাইব্রিড রাইস বিভাগের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আনোয়ারা আক্তার ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার সহযোগীতায় মির্জানগরের নির্বাচিত কৃষকের মাধ্যমে নতুন জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ চাষ করা হয়েছে। তিনি বলেন, এ ধান চাষ করতে গিয়ে আমরা দেখেছি এটি অন্যান্য ধানের তুলনায় অধিক ফলন হয়, এ ধানের কান্ড শক্ত বিধায় ঢলে পড়ে না। ধানের শীষের দৈর্ঘ্য অনেক লম্বা যা অন্যান্য হাইব্রিড জাতের তুলনায় ফলন বেশি হয়।


আগামী মৌসুমে যদি উপজেলায় এ বীজ আরও প্রদান করা হয় তা আগ্রহী কৃষকের মাঝে বিতরন করে মাঠ পর্যায়ের এ নতুন জাতের ব্রি হাইব্রিড ধান- ৫ এর উৎপাদন সম্প্রসারণ করতে পারবে বলেও আশা প্রকাশ করেন উপ-সহকারী এ কর্মকর্তা।

উপজেলা উপসহাকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা খোরশেদ আলম বলেন, এ নতুন ব্রি হাইব্রিড ধান-৫ চাষে প্রথম থেকে তদারকি করে যা দেখা গেছে এজাতের ধানের পোকার আক্রমণ অনেকাংশে কম বা নাই বললেই চলে। তিনি বলেন, বিশেষ করে আমাদের এ উপজেলায় চলতি বোরো মৌসুমে অনেক জমিতে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ হয়েছে যা এ জাতের ধানে আক্রমণ করেনি।


ধান কর্তনকালে মির্জানগর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সামছুল হুদা, উপসহাকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা খোরশেদ আলমসহ উপজেলা কৃষি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।