ফেনীসহ সারাদেশে মহামারী করোনা সম্মুখ সমরে প্রাণবাজি রেখে লড়ে চলেছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। নিজের জীবন তুচ্ছ করে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে লড়াই করতে গিয়েই নিজের অজান্তেই আক্রান্ত হচ্ছেন করোনাভাইরাসে।

প্রথমদিকে করোনা রোগীর শনাক্তের হার ধীরগতি হলেও গত সপ্তাহ হতে ফেনীতে লাফিয়ে বাড়ছে শনাক্তের সংখ্যা। গত এক সপ্তাহের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ফেনী ৫৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। আজ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ৬১, কোভিড শনাক্তকৃত স্বাস্থ্যকর্মী ২২, যারা দায়িত্ব পালনকালেই সংক্রমিত হয়েছেন।

আশংকাজনক হারে ফেনীর স্বাস্থ্যকর্মীদের করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় একসাথে অনেকসংখ্যক স্বাস্থ্যকর্মীকে যেমন কোয়ারেন্টিন ও আইসোলেশনে যেতে হচ্ছে, তেমনি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো ক্রমশই করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। যা জেলার স্বাস্থ্য বিভাগের জন্য বড় ধরনের হুমকি বলে মনে করছেন ডাক্তার এবং সচেতন মানুষ। একই সাথে চিকিৎসা কার্যক্রম নিয়েও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ এ বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, শনিবার ফুলগাজীর ২ করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হয়েছেন বলে উপজেলা করোনামুক্ত ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু রাতেই আমাদের জন্য আরেকটি দুঃসংবাদ আসে। একই সাথে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন সিনিয়র চিকিৎসক ও অপর একজন সিনিয়র স্বাস্থ্যকর্মীর করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়। এতে করে তাদের সাথে সংস্পর্শে আসা পুরো হাসপাতালের অন্যান্য চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝেও করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা রয়েছে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শিহাব উদ্দিন বলেন, গতকাল ছাগলনাইয়া শনাক্ত হওয়া ৪জনের মধ্যে ২জনই আমাদের হাসপাতালে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মী। এ মুহুর্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সবাই ঝুঁকিতে রয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, গতকাল শনিবার পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৪জন সেবিকার করোনা শনাক্ত করা হয়। প্রতিবেদন পজিটিভ জানার সময়ও তার হাসপাতালেই দায়িত্বপালন করছিলেন বলে জানা গেছে।

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আবদুল খালেক মামুন জানান, এ পরিস্থিতিতে হাসপাতালের চিকিৎসা কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চালু রাখা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে অল্প সংখ্যক ভর্তি রোগী আছে। তাদের আলাদাভাবে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা দিয়ে যাব আমরা।

অন্যদিকে সোনাগাজী উপজেলা নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের হেলথ প্রোভাইডার শারীরিক জটিলতায় ভুগে মারা গেলেও তার নমুনায় কোভিড-১৯ শনাক্ত হয়। উপজেলা স্বান্থ্য ও পরিবার-পরিকল্পনা কর্মবর্তা ডা. উৎপল দাস জানান, গত প্রায় একমাস তিনি ছুটি নিয়ে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ মে তার মৃত্যু হয়। পরে তার নমুনা পজিটিভ আসে।

স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আক্রান্তদের বেশিরভাগেরই কোন উপসর্গ নেই। তার শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। তাদের হোম আইসোশেলনে রেখেই চিকিৎসা দেয়া হবে। তবে আক্রান্ত স্বাস্থ্যকর্মীরা কার মাধ্যমে বা কিভাবে সংক্রমিত হয়েছে তা জানা না গেলেও তাদের সংস্পর্শে আসা সকল ব্যক্তিই ঝুঁকির মুখে রয়েছেন।

জেলার ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ও দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, করোনা আক্রান্ত চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়তে থাকবে যদি সাধারণ মানুষ সতর্ক না হয়। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার যে বিধিনিষেধ তা যদি কঠোরভাবে পালন না করা হয় তাহলে আপনি আক্রান্ত হবেন, আপনার দ্বারা আরেকজন আক্রান্ত হবে। ফলে এ চিত্র আরও খারাপের দিকে ধাবিত হবে।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, আজ রবিবার ফেনীতে কোন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়নি। মোট আক্রান্ত ৬১ জনের মধ্যেফেনী সদরে মোট ২০ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩জন, দাগনভূঞায় ৮জন, পরশুরামে ৪জন, ফুলগাজীতে ২ জন এবং সোনাগাজীতে ২জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে তিনজন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা। ফেনীতে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।