ফেনী শহরের সর্বত্র হানা দিয়েছে আতংক সৃষ্টিকারী করোনাভাইরাস। শহরের গুরুত্বপূর্ণ আবাসিক এলাকাসহ উত্তর থেকে দক্ষিণে, পূর্ব হতে পশ্চিমে সব জায়গায়ই পাওয়া গেছে করোনা আক্রান্ত রোগী। আর কোথাও বাকি নেই তেমন।


সূত্র জানায়, ফেনী শহরের লাফই লাইন খ্যাত মাষ্টারপাড়া, ডাক্তারপাড়া, মিজান রোড, নাজির রোড, উকিল পাড়া, শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়ক, রামপুর, হাজারী রোড, শান্তি কোম্পানী রোড, কদলগাজী রোড, বিরিঞ্চি, বারাহীপুর সব এলাকাতেই করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এছাড়া ফেনী সদরের ফরহাদনগর, ধর্মপুর ও শর্শদী ইউনিয়নে পাওয়া গেছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী।

শুক্রবার (২৯ মে) দুই ধাপে ফেনীতে মোট ৪৭ করোনার আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড গড়ে ফেনীতে করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো ১৩৬ জনে। এর মধ্যে আজ ফেনী সদরের দুই ধাপে শনাক্ত করা হয়েছে ১৮ জন।


শুক্রবার রাতে ফেনী সদরে নতুন করে আরও ৪জন শনাক্তের কথা জানায় স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া ফুলগাজীর আনন্দপুরের খিলপাড়া গ্রামের করোনা আক্রান্ত একজনের ২ নমুনা পজিটিভ এসেছে। এর আগে দুপুরে ৪৩জন শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে সদরের ছিলো ১৪জন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, শুক্রবার শনাক্তকৃতদের মধ্যে দাগনভূঞা উপজেলায় ১৮ জন, সদরে ১৮ জন, সোনাগাজীতে ৯ জন, ছাগলনাইয়া ও ফুলগাজীতে ১জন করে মোট দুইজন রয়েছে। 


সূত্র জানায়, নতুন আক্রান্তদের মাঝে সরকারী কর্মকর্তা, ট্রাফিক পুলিশ, ব্যাংক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ রয়েছেন।

শনাক্তকৃতদের আবাস্থল লকডাউন করেছে প্রশাসন।


স্বাস্থ্য বিভাগের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক রয়েছে ৪৭জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দাগনভুঞা উপজেলায়। এ উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৩৭জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ১৯জন, ছাগলনাইয়ায় ১৫জন, পরশুরামে ৭জন, ফুলগাজীতে ৬জন।

এছাড়া আরও ৫জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।


সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩৫৫ নমুনা পরীক্ষার পর উল্লেখিত সংখ্যক রোগী শনাক্ত হন।


সিভিল সার্জন কার্যালয়ে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ শরফুদ্দিন মাহমুদ জানান, আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫৫ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে ফেনী সদরে ২০ জন, সোনাগাজীতে ৬ জন, ছাগলনাইয়ায় ১৩ জন, দাগনভূঞায় ৮ জন, পরশুরামে ৪ জন ও ফুলগাজীতে ৪ জন রোগী সুস্থ হয়েছেন। এছাড়া বর্তমানে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৭৪ জন। জেলায় এ পর্যন্ত মারা গেছেন ৩জন।

পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেনীতে চলতি মে মাসেই ১৩১ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ক্রমান্বয়ে সংক্রমণের হার উর্ধ্বগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।

গত ১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। মাঝখানে আক্রান্তের হার সীমিত থাকলেও মে তে এসে তা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এর মধ্যে গত ১৬ মে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৩১জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। এর আগে ১৬ এপ্রিল হতে ৯ মে পর্যন্ত ফেনীতে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা সীমাবদ্ধ ছিল ৭ জনে।

এ প্রসঙ্গে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, নমুনা সংগ্রহ বাড়ছে তাই শনাক্তের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি বলেন, আমরা সংক্রমণের চতুর্থ পর্যায় অতিক্রম করেছি। এখন যে কেউ আক্রান্ত হতে পারেন ফলে যত টেস্ট বাড়বে, তত শনাক্তের সংখ্যা বাড়বে। এতে করে সংক্রমণের হারও বাড়বে।

বর্তমানে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের বেশিরভাগই ঈদ উপলক্ষ্যে ফেনীতে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন বলে জানা গেছে।


দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রুবাইয়েত বিন করিম বলেন, দাগনভূঞা বর্তমানে যাদের শনাক্ত করা হচ্ছে, তারা ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান হতে আসা ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন।