চলে গেলেন বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবার আরেক অগ্রদূত অধ্যাপক ডাঃ এসএএম গোলাম কিবরিয়া। বৃহস্পতিবার (৪ জুন) দিবাগত রাত ১২টা ৪০ মিনিটের দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করছেন ফেনীর এ প্রথিতযশা কৃতি সন্তান (ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।


তার এক নিকট আত্মীয় এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। শুক্রবার সকাল ১০ টায় ফেনী পৌরসভার ১০নং ওয়ার্ডের ঐতিহ্যবাহী মনির উদ্দিন ভূঞা দারোগা বাড়ির সামনে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে পরিবার সূত্রে জানা গেছে।


বৃহস্পতিবার বিকালে ফেনী বিএমএ’র সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ সাহেদুল ইসলাম কাওসার জানান, তাঁকে শতভাগ অক্সিজেন দেয়া হচ্ছিল। কিন্তু তার শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা মাত্র ৫০ শতাংশের বেশি বাড়েনি। ডাক্তারি পরিভাষায় এটি খুবই বিপদজ্জনক অবস্থা ছিল। তিনি জানান, এছাড়া ডাঃ কিবরিয়ার ফুসফুসে সংক্রমণের হার ছিল প্রকট।


তিনি বলেন, কিবরিয়া স্যার শুধু ডাক্তারই না, তিনি ডাক্তারদের শিক্ষক। বাংলাদেশের সার্জারী বিভাগের অনেক চিকিৎসকই তার ছাত্র। তিনি বাংলাদেশের একজন ‘সম্পদ, একইসাথে ফেনীর কৃতি সন্তান।


পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত। বুধবার (৩ জুন) দুপুরে শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।


একই সূত্র জানায়, ঈদুল ফিতরের দিন থেকে তার জ্বরসহ একাধিক করোনা উপসর্গ দেখা দেয়। পরবর্তীতে নমুনা পরীক্ষার পর রিপোর্ট পজিটিভ আসে।
ডাঃ কিবরিয়া ঢাকা শমরিতা হাসপাতালে কর্তব্যরত ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইউরোলজি বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত ছিলেন।


তিনি ১৯৪৮ সালে ফেনী পৌরসভার ১০ নম্বর ওয়ার্ডে ঐতিহ্যবাহী মনির উদ্দিন ভূঞা দারোগা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।


১৯৭৩ সালে তিনি সিলেট মেডিকেল কলেজ হতে এমবিবিএস ও ১৯৭৯ সালে এফসিপিএস সম্পন্ন করেন। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে সিলেট মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইউরোলজী বিভাগের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি বিভিন্ন চিকিৎসক সংগঠনের সাথেও সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইউরোলজিকাল সার্জনস এর প্রেসিডেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি ছিলেন একাধারে বাংলাদেশ জার্নাল অব ইউরোলজীর সম্পাদক, সার্ক ইউরোলজি এবং নেফ্রোলজির কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ মেডিকেল কাউন্সিলের সদস্য, বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিশিয়ান এন্ড সার্জন (বিসিপিএস) এর পরীক্ষক কমিটির চেয়ারম্যান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের সদস্য, বিএমডিসির বর্তমান কমিটির চেয়ারম্যান।


এছাড়া দেশে ও দেশের বাইরে জার্নালে তার ৪০টি প্রকাশনা রয়েছে।

অধ্যাপক ডাঃ এস.এ.এম. গোলাম কিবরিয়া দেশের মেডিকেল শিক্ষার উন্নয়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ইউরোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান থাকাকালীন ইন্ডো ইউরোলজিক ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাঠদান কর্মসূচিতেও জড়িত ছিলেন এবং পাকিস্তানে এক্সটারনাল পরীক্ষক হিসেবেও কাজ করেছিলেন। বাংলাদেশে প্রথম রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন করা দলের একজনও ছিলেন ডাঃ গোলাম কিবরিয়া।


দেশ-বিদেশের একাধিক সেমিনারে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। নিজের অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, যুক্তরাজ্য, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, ভারত ইত্যাদি বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার অংশ নিয়েছিলেন। ইউরোলজিতে তাঁকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহযোগী করা হয়েছিল।