'একজন পুলিশ সদস্য বলেছিলেন কবরে লাশ নামাতে নামাতে একদিন হাঁপিয়ে উঠবো। আজ সত্যিই মনে হচ্ছে একদিন হয়তো অনুভূতিহীন হয়ে যাব।'


কথাগুলো বলছিলেন করোনা কিংবা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফন কাজে নিয়োজিত ফেনী জেলা ইসলামী আন্দোলন সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক ভূঁইয়া।


করোনায় মৃত ব্যক্তির শরীয়ত সম্মত দাফনে 'জানাযা ও দাফন টিম' গঠন করেছেন ইসলামী আন্দোলন ফেনী জেলা। এ কর্মসূচির প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন জেলার সাধারণ সম্পাদক নিজেই।


চলতি বছরের ১০ এপ্রিল ফাজিলপুরের শিবপুরে প্রথম একজন ব্যক্তির দাফন কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবী দলের একটি অংশ। একরামুল হক জানান, শুক্রবার পর্যন্ত ১৪ জনের শরীয়ত অনুযায়ী দাফন সম্পন্ন করেছেন তারা। এদের মধ্যে ফেনী সদর উপজেলায় ৪জন, সোনাগাজীতে ৬জন এবং দাগনভূঞায় ৪জন।


দাফনের কাজ করতে গিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতার কথা জানান একরামুল হক। তিনি আক্ষেপ করলেন আশপাশের মানুষের অমানবিক আচরণ নিয়ে। তিনি বলেন, দাফন শেষে আমরা যখন ঘরে ফিরি, প্রতিবেশীদের কেউ কেউ বাঁকা চোখে দেখে। পেছনে কটু মন্তব্য করে, আমাদের জীবাণুবাহক বলে এড়িয়ে চলে।


ব্যতিক্রমী এ কাজের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৪জন মৃতদেহের সৎকার সম্পন্ন হয়েছে রাতে। এর মধ্যে রাতে এবং গভীর রাতে দাফন করা হয়েছে ১০জনকে। ফেরার সময় গোসলের সমস্যা, যানবাহনের সমস্যা, এমনকি অনাকাঙ্খিত আচরণ করেছেন যারা সহযোগিতা দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন।

এতকিছুর পরও কাজগুলো চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, স্বেচ্ছায় দাফনের কাজ করছি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। তাই কোন প্রতিকূলতাকে কাজ থেকে বিরত থাকা মত কারণ মনে করিনা।


একরামুল হক বলেন, আমরা ইসলামের কথা বলি, ইসলামী আন্দোলন করি। তাই কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর শরীয়তের হুকুম পালন অবশ্যই আলেমদের দায়িত্ব কর্তব্য। আমরা আমাদের কর্তব্যপরায়নতা রক্ষা করছি।


সবগুলো দাফনের ক্ষেত্রে আত্মীয়দের অনাহুত আচরণ একই হলেও মোটবীতে লাশ দাফনের অভিজ্ঞতাকে আলাদা করে মনে রেখেছেন একরামুল হক। তিনি বলেন, দাফনের জন্য কবর খুঁড়তে রাজি নয় কেউ। অনভিজ্ঞ মানুষের হাতে কবর খোঁড়ায় এটি সরু হয়ে গিয়েছিল। ফলে কবরে না নেমেই উপর থেকে অনেকটা ঝুলিয়ে লাশ কবরে নামানো হয়েছিল। বিষয়টি মনে হলেই বিষন্নতা ছড়িয়ে পড়ে।


একরামুল হক ভূঁইয়া জানান, জেলার ৬ উপজেলায় ৫জন করে মোট ১৩টি টিম তারা তৈরি করেছেন। এর মধ্যে সদরে ৩টি টিম কাজ করছে। এ পর্যন্ত ১৭ জন ব্যক্তি সরাসরি মৃতদেহ সৎকারে অংশগ্রহণ করেছে।


তিনি জানান, রাতে যানবাহনজনিত সমস্যার কারনে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষ থেকে পৃথক স্বেচ্ছাসেবী টিম করার পরিকল্পনা রয়েছে। দ্রুততর সময়ের মধ্যে এ কাজটি বাস্তবায়ন করা হবে।