করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেজ (বিআইটিআইডি) ল্যাবের প্রধান অধ্যাপক ডাঃ শাকিল আহমেদ করোনামুক্ত হয়েছেন। শুক্রবার (৫ জুন) রাতে বিআইটিআইডি ল্যাব থেকে প্রকাশিত রিপোর্টে তার করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসে।


এর আগে গত ২৬ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হন চট্টগ্রামের করোনা যুদ্ধেও এই কমান্ডার ডাঃ শাকিল আহমেদ। এরপর ১৪ দিনের জন্য বাসায় আইসোলেশনে চলে যান তিনি। মাত্র ১১ দিনের মাথায় করোনাকে পরাজিত করে সুস্থ হয়েছেন তিনি। কিন্তু কিভাবে? সে বিষয়ে  আজ রবিবার (৭ জুন) নিজের ফেইসবুকে সেসব বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি।


তা দৈনিক ফেনীডটকমের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলঃ


করোনা কালঃ

এখন সুস্থ বোধ করছি। করোনা আক্রান্তের এগারো দিনে আমার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। আমার বয়স সাতান্ন, বারো বছর ধরে প্রেশার আর কিছু হার্টেরও সমস্যা আছে কিন্তু ডায়াবেটিস নেই। সেই হিসেবে আমি রিস্কি গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত। সবাই জানতে আগ্রহী করোনা মোকাবেলায় কি করেছি তাই এই লেখাঃ

১) মনোবল ঠিক রাখতে হবে। প্রথম দিকে বাসাতেই একরুমে আলাদা থাকতে হবে। রাতে ঘুমানো ছাড়া সারাদিন ঘুমিয়ে বা শুয়ে থাকা যাবে না। কিছু বিশ্রাম বাদে বাকি সময় পায়চারি করে, বসে, বই পড়ে, মোবাইল টিপে বা নামায কালামে ব্যস্ত থাকতাম।

২) হালকা ব্যায়ামঃ উঠবস করে, কোমর বাকিয়ে ও হাত প্রসারিত করে দুবেলা ব্যায়াম করতাম।

৩) ফুসফুসের ব্যায়ামঃ করোনা শ্বাসযন্ত্রের অসুখ হওয়ায় এই ব্যায়াম জরুরী। সোজা দাড়িয়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষন ধরে রেখে ছেড়ে দিতাম। ৫/৬ বার করে একটু থেমে আরেকবার রিপিট করতাম। একবার বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে বুকে বালিশ রেখে পিঠের দিকটা ফুলিয়ে জোরে শ্বাস নিয়ে ছাড়তাম তিনবার। বন্ধ হয়ে থাকা এলভিওলাই গুলো সচল করতে এটা খুব উপকারী।

৪) শ্বাসনালী পরিস্কার রাখাঃ পানি ফুটিয়ে বাষ্প লম্বা শ্বাস টেনে গ্রহন করতাম দিনে ২/৩ বার। নাক বন্ধ থাকলে মেন্থল বা কিছু মসলা দিতে পারেন। আমি কিছুই দেই নাই।

৫) গলা পরিষ্কার রাখাঃ বাষ্প নেওয়া শেষ হলে সেই পানিতেই একটু লবন মিশিয়ে গরগরা করতাম ৩ বার।

৬) পানীয়ঃ গরম আদা চা ৩/৪ বার খেতাম। প্রচুর পানি (গরম নয়) খেতাম, লেবু চিপে চিনি লবন দিয়ে শরবত খেতাম। মালটার রস খেয়েছি।

৭) খাবারঃ কিছু বেছে খাইনি। প্রচুর প্রোটিন খেয়েছি। সকালে দুটো ডিম, দুপুরে ও রাতে মাংস, মুরগী বা বড় মাছ। ফাঁকে সবধরনের ফল খেয়েছি।

৮) চিকিৎসাঃ করোনার কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নাই। লক্ষন অনুযায়ী ওষুধ খেতে হয়। আমার সর্দি আর গায়ে ব্যাথা ছিলো যার জন্য কোন ওষুধ নেই নাই। প্রেশারের ওষুধ আর এসপিরিন ছাড়া নিয়মিত কিছু খাই নি। ওষুধের ব্যাপারে আমার পরামর্শ হলো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ খাবেন আমি কোন ওষুধই রিকমেন্ড করবো না।

৯) সতর্কতাঃ সবচেয়ে জরুরী বিষয় হলো ওয়ার্নিং সাইন বুঝা। পালস অক্সিমিটার সাথে রাখবেন ও চারবার চেক করবেন। অক্সিজেন স্যাচুরেশন কমে গেলে বা শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। বয়স কম হলে বাসায় অক্সিজেনের ব্যবস্থা রাখতে পারেন। কিন্তু ৬০ এর বেশি বয়স বা অন্যান্য রোগ থাকলে অবশ্যই হাসপাতালে নিবেন কারন যে কোন সময় ভেন্টিলেটর লাগতে পারে। রিস্ক গ্রুপের অন্তর্ভুক্তরা ডাক্তারের পরামর্শে কিছু বেজলাইন পরীক্ষা করিয়ে রাখতে পারেন।

আমি সেরে উঠছি, ইনশাআল্লাহ আপনারাও সুস্থ হয়ে যাবেন। মনে রাখবেন করোনা আক্রান্ত ৯৭% মানুষই সুস্থ হয়ে যান যাদের ৮০% এরই তেমন কোন চিকিৎসা লাগে না। তাই ভয় নয় সাহস দিয়ে করোনাকে জয় করুন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে এই মহামারি থেকে রক্ষা করুন।