১৩ নভেম্বর,২০১৯

।। ফিচার ডেস্ক।।

তিনি রিপোর্টার। তিনিই এডিটর। তিনিই প্রকাশক এবং হকারও। সংবাদ সংগ্রহ করেন লেখেনও। তারপর বের হয় সংবাদপত্র। না, কোনও ছাপাখানা থেকে নয়। সাদা কাগজে কালো মার্কার পেন দিয়ে তিনি নিজে হাত লেখেন সংবাদপত্র। তারপর সেঁটে দেন জনবহুল কোনও জায়গায়। টানা ১৭ বছর ধরে সংবাদপত্র প্রকাশ করছেন দীনেশ কুমার।


দীনেশের বাড়ি ভারতের উত্তরপ্রদেশের মুজাফফরনগরের গান্ধী কলোনিতে। ৫১ বছরের দীনেশ পেশায় হকার। ঘুরে ঘুরে টফি, চকোলেট, আইসক্রিম বিলি করেন। সেই টাকায় কেনেন কাগজ, কলম। তারপর সংগ্রহ করা খবর লিখতে বসেন। তাঁর সংবাদপত্রের কপি পৌঁছায় মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরেও।

দীনেশের হাতে লেখা সংবাদপত্রের নাম ‘বিদ্যা দর্শন’। সমসাময়িক খবর, অপরাধ এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ই জায়গা পায় তাঁর সংবাদপত্রে। কীভাবে সেই সমস্যা থেকে মুক্তি মিলতে পারে সে ব্যাপারে নিজের মতামত দেন। হাতে লেখা সংবাদপত্র কয়েক কপি জেরক্স করান। তারপর সাইকেলে ঘুরে সেগুলি বিলি করেন গ্রামে গ্রামে। সেঁটে দেন জনবহুল রাস্তার মোড়ে।

এই ‘বিদ্যা দর্শণ’ দীনেশের প্রাণ। কাগজ চালাবেন বলে বিয়ে করেননি। কারও সাহায্য নেন না। তাঁর সংবাদপত্র সম্পর্কে উৎসাহিত হয়ে কেউ টাকা দিতে চাইলে দীনেশ তাঁকে হাসি মুখে নিরস্ত করেন। তাঁর সাফ কথা, ‘আমি নিজের মতো বাঁচতে চাই। আর্থিক সহায়তা পেলে স্বার্থপর হয়ে যেতে পারি।’


একটি কালো রঙের সাইকেল দীনেশের বাহন। সেটা নিয়ে খবরের খোঁজে প্রায় সারা উত্তরপ্রদেশ চষে ফেলেন তিনি। যেখানেই অন্যায়ের খবর পান সেখানেই পৌঁছে যান। তারপর গর্জে ওঠে তাঁর প্রতিবাদী কলম। দীনেশ আরও একবার প্রমান করলেন, অসির চেয়ে মসীর জোর সবসময় বেশী।
এখানে আমরা তুলে দিলাম ৫১ বছরের দীনেশ কুমারের সঙ্গে কথোপকথনের কিছু অংশ।


প্রঃ সংবাদপত্র লেখা ছাড়া সময় কাটে কী করে?
উঃ আমি হকারি করি। ছোটদের জন্য টফি, লজেন্স, চকোলেট, আইসক্রিম বিক্রি করি। সেই টাকায় কালি-কাগজ কিনি।

প্রঃ মূলধারার সংবাদপত্র এবং টিভি চ্যানেলের সঙ্গে আপনার সংবাদপত্রের পার্থক্য কোথায়?
উঃ সমাজের সঙ্গে জড়িত বিষয়ই জায়গা পায় আমার সংবাদপত্রে। কোনও সমস্যা নিয়ে আমার মতামত এবং কীভাবে সামাধান মিলতে পারে সেই ব্যাপারেও আলোচনা থাকে। অপরাধ কমাতে উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন বিদ্যালয় এবং পরিবহনক্ষেত্রে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর কথা আমি বলেছিলাম। সেটা মানা হয়েছে। অপরাধও কমেছে।


প্রঃ হাতে লেখা সংবাদপত্রেরও ক্ষমতা আছে, এটা বুঝলেন কখন?
উঃ আমার ‘ব্লেড ম্যানে’র কথা মনে পড়ছে। ২০০৮ সালে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায় মুজাফফরনগরের শামলিতে। সেই রহস্যময় ব্যক্তি ব্লেড হাতে স্কুলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়। শিশুদের আক্রমণ করে। আমি গোটা ঘটনার কথা কাগজে লিখে এলাকার বিভিন্ন জায়গায় সেঁটে দিয়েছিলাম। সাধারন মানুষ সচেতন হয়েছিলেন। সেই সময় আমি বুঝতে পারি কলমের ক্ষমতা।

মুজাফফরনগরের ডিএম অফিসের বাইরে বসে ছিলেন মাস্টার বিজয় সিং। উত্তরপ্রদেশের জমি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে একাই বুক চিতিয়ে লড়ে যাচ্ছেন। সমাজসেবী বিজয় ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে দীনেশের কাজের সঙ্গে। তিনি দীনেশের বন্ধুও। বললেন, ‘সংবাদপত্র নিয়ে দীনেশ খুব আবেগী। সবসময় কাছে থাকে কাগজ-কলম। দুপুরে হকারি হয়ে গেলে খবর লিখতে বসে যায়। সমাজ এবং মানুষের সঙ্গে জড়িত ঘটনাই জায়গা পায় দীনেশের কাগজে।’

ছবি ও তথ্যঃ ichorepaka.in