বৈশ্বিক মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত দেশ। দিনের পর দিন বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর সংখ্যা। জনজীবন হয়ে পড়েছে স্থির। ১ এপ্রিল থেকে ৪মে পর্যন্ত এইচএসসির তত্ত্বীয় এবং ৫ মে থেকে ১৩ মের মধ্যে সব ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষ করার সূচি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে পরীক্ষা স্থগিত করা হয়।

এতে করে পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সৃষ্টি হয়েছে উদ্বেগ আর উৎকন্ঠা। এর মধ্যে পরীক্ষা পিছিয়ে পড়াকে হাতিয়ার করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিছু দুষ্টচক্র ছড়াচ্ছে গুজব। গত ২৩ এপ্রিল ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন চ্যানেলে এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি এবং করোনা পরিস্থিতিতে শিক্ষার সংকট নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রচার হয়।


এই প্রতিবেদনের একটি স্ক্রিনশর্ট নিয়ে সেখানে জালিয়াতি মাধ্যমে এডিট করে লেখা হয়, এই বছর বাতিল হতে পারে এইচএসসি পরীক্ষা, এসএসসি অনুযায়ী দেয়া হবে জিপিএ যা সম্পূর্ণ ভুয়া এবং এ ধরনের কোনো তথ্য ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন প্রচার করেনি বলে জানা যায়।

৭ জুন ফেসবুকে সংশোধিত আকারে একটি রুটিন প্রকাশ পায়। তাতে আগামী ১৫ জুলাই থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে বলে ফেসবুকে গুজব ছড়ানো হয়। আন্তঃশিক্ষা বোর্ড বলে, ফেসবুকে যে রুটিন ঘুরছে তা সত্য নয়, এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।

ফেসবুকে একের পর এক ভুয়া নিউজ ছড়ানোতে বিভ্রান্তির মাঝে আছে পরীক্ষার্থীরা। অলস সময় পার করছে বাসা-বাড়িতে। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পরিবর্তে সময় কাটাচ্ছে অনলাইন, ফেসবুকে।

ফেনী মহিপাল সরকারি কলেজের ব্যবসা বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মোঃ শাহ নেওয়াজ ইমন। পরীক্ষা স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে ইমন বলেন, পরীক্ষা নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ এখন পর্যন্ত জানি না পরীক্ষা কবে হবে। এতে করে পরীক্ষার প্রস্তুতি নষ্ট হয়ে গেছে। এ অনেক মানসিক টেনশনে রয়েছি।

নানারকম দুশ্চিন্তায় পড়ালেখা তেমন হচ্ছে না জানিয়ে মহিপাল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌস অর্পা বলেন, ইন্টারনেটে সময় দিচ্ছি, কিন্তু পড়াশোনা আগের মত করে করতে পারছিনা। শুধু আব্বু-আম্মু বললে বাধ্য হয়ে টেবিলরে বসি।

কলেজের আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল হালিম রাকিব বলেন, পরীক্ষা পিছিয়ে নেয়াতে লেখাপড়া একদমই করছি না। লম্বা সময় কাটছে ফেসবুকে। বাকি সময় পারিবারিক ব্যবসায় দিচ্ছি। পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা কাজ করছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সময়টা বেশি দেয়া হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থী শেখ মোঃ জাহেদুল ইসলাম বলেন, দুশ্চিন্তায় আছি পরীক্ষা নিয়ে। এখন শংকা জীবনের একবছর নষ্ট হয়ে যাচ্ছে কিনা।

দিনাজপুর আমেনা বাকী রেসিডেন্সিয়ান মডেল স্কুল এন্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ শিক্ষার্থী মীর নিশাত রহমান বলেন, পরীক্ষা না হওয়াতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এতদিনের প্রস্তুতিও লেখাপড়া গতি কিছুটা হলেও স্তিমিত হয়ে গেছে। এ ছাড়াও করোনার পরবর্তীতে পরীক্ষার মান ও পরীক্ষা কিভাবে নেওয়া হবে তা নিয়ে প্রচুর দুশ্চিন্তা হচ্ছে।

অভিভাবকরাও সন্তানদের পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। ফেনী মহিপাল সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এইচএসসি পরীক্ষার্থী উম্মে কুলসুম রিপার মা জাফরিন চৌধুরী নিলু বলেন, বিভ্রান্ত হয়েছিলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া পরীক্ষার সময় সূচি দেখে। পরীক্ষা নিয়ে মেয়ে মানসিকভাবে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মেয়ে আগের চাইতে পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে যেমন ভয়, আতংকে আছি, তেমনি মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠায় রয়েছি।

করোনায় এইচএসসি শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন বিপদগ্রস্ত করেছে বলেন মহিপাল সরকারি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মোঃ সাইফুর রহমান চৌধুরী। তিনি বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার পর বিনা মেঘে বজ্রপাতের মত এ বছর এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের মাথায় হাত, ঘর থেকেও বের হতে পারছে না, তাঁদের সামনে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। কখন পরীক্ষা হবে তাও তাদের জানা নেই। পরীক্ষার্থীদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়াচ্ছে পরীক্ষা নিয়ে নানান বিভ্রান্তিকর গুজব, যা পরীক্ষার্থীদের রীতিমতো বিভ্রান্ত করছে। এমন পরিস্থিতিতে যেভাবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গত ৩ মাস করোনা পরিস্থিতির সাথে মিলিয়ে নিয়ে চলতে শিখেছি, সেইভাবে পরীক্ষার্থীরা কাজকর্মের পাশাপাশি পড়ালেখা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে।