কিট সংকটে পাঁচদিন বন্ধ থাকার পর নোয়াখালীর আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে গতকাল হতে পুনরায় নুমনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ওই ল্যাবে ফেনীর ৯৮টি নুমনা পরীক্ষা করা হয়েছে বলে স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে। এর মধ্যে ফেনীতে নতুন করে আরও ১৮ জনের দেহে কোভিড-১৯ শনাক্ত করা হয়েছে বলে আজ বুধবার (২৪ জুন) স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে।

এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬৭১ জনে। এছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মোট ১৪জনের মৃত্যু হয়েছে। আজ আরও ৯জন সুস্থ হয়েছে। সুস্থ হয়েছেন মোট ১৯৩জন।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, গতকাল আব্দুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজে ফেনীর ৯৮টি নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। তার মধ্যে ১৮টি নমুনা পজিটিভ। নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ফেনী সদরে ৯জন, দাগনভূঞায় ৫জন, সোনাগাজীতে ১জন, ছাগলনাইয়ায় ১জন এবং মিরসরাইয়ের ২জন বাসিন্দা রয়েছেন, ফেনীতে যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল।

সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে দাগনভূঞার ইউএনও মোঃ রবিউল হাসান ও তার স্ত্রী রয়েছেন। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এছাড়া এক চিকিৎসকের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি ফেনী জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত আছেন। নতুন শনাক্তকৃতদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রও রয়েছে। তিনি সোনাগাজীর আমিরাবাদ ইউনিয়নের বাসিন্দা।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত জেলায় মোট শনাক্তকৃত রোগীদের মধ্যে সদরে সর্বোচ্চ সংখ্যক শনাক্ত হয়েছে ২৬০জন। শনাক্তকৃত সংখ্যার ভিত্তিতে জেলায় দ্বিতীয় অবস্থানে দাগনভুঞা উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ১৩৯ জন শনাক্ত হয়েছে। এরপরে রয়েছে সোনাগাজীতে ১০৫জন, ছাগলনাইয়ায় ৯০জন, পরশুরামে ৩১জন ও ফুলগাজীতে ৩৪জন। এছাড়া আরও ১২জন রয়েছেন ফেনী জেলার বাইরের বাসিন্দা, ফেনীতে তাদের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল।

জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, বর্তমানে ৪০ জন করোনা রোগী ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। অন্যরা স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনে হোম আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১৭জনকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে। সূত্র আরও জানায়, এ পর্যন্ত সংগৃহীত মোট ৪ হাজার ৪৫০টি নমুনার মধ্যে মধ্যে ৩ হাজার ৩৬৯টি নমুনার ফল পাওয়া গেছে।

এর আগে গত এক সপ্তাহে ফেনীতে সর্বোচ্চ সংখ্যক ২২৬জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। গত ১২ জুন থেকে ১৮জুন পর্যন্ত মোট নুমনা পরীক্ষার করা হয়েছে ৭২৫টি। অর্থাৎ প্রায় ৩টি নুমনার মধ্যে একজন পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে। মোট শনাক্তের হার প্রায় ৩১শতাংশ।

১৬ এপ্রিল জেলার ছাগলাইনাইয়া উপজেলায় এক যুবকের শরীরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর আগে ১৩ জুন ফেনীতে একদিনে সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫৫জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়।

অন্যদিকে ৫দিন ধরে নমুনা পরীক্ষা বন্ধ থাকায় যেমন সৃষ্টি হয়েছে নমুনা জটের, তেমনি নমুনা সংগ্রহ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাসহ ও সাধারণ মানুষরা। অনেকে নমুনা পরীক্ষার ফল না পাওয়ায় ভুগছেন তীব্র মানসিক যন্ত্রণায়। আবার কেউ পরীক্ষার রিপোর্ট পাবার আগেই অসুস্থ হয়ে ছুটছেন হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে। কিন্তু করোনা রিপোর্ট না থাকায় তাদের চিকিৎসা দিতে পারছেনা চিকিৎসকরা। এ ভোগান্তিতে পড়েছেন শুধু সাধারণ মানুষ না, রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও।

ফেনী সদর উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন উপজেলার আমাদের অনেক সহকর্মী করোনা সাসপেক্টেড। অনেকে নমুনা দিয়েও ১০-১৭ দিনেও ফলাফল পাননি। অনেকে নমুনা দিতেই পারছেন না। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি বিভাগে কর্মরত হয়েও এবং আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও সহকর্মীরা হন্যে হয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন টেস্টের জন্য নমুনা দিতে বা ফলাফল পেতে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?