দৃঢ় মনোবল আর সাহসিকতা নিয়ে লড়াই চালিয়ে করোনা হতে মুক্ত হয়েছেন ফেনীর দুই গণমাধ্যমকর্মী। তারা হলেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ ও ডেইলি ইন্ডাস্ট্রিজ এর ফেনী জেলা প্রতিনিধি জহিরুল হক মিলন ও দৈনিক আমাদের নতুন সময় এর প্রতিনিধি ও সাপ্তাহিক 'ফেনী বার্তা' এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক এম. এমরান পাটোয়ারী। আজ বৃহস্পতিবার ( ২৫ জুন) তাদেরকে সুস্থ বলে ঘোষণা দিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

এম. এমরান পাটোয়ারী জানান, গত ২৫ মে তার নুমনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। একই দিন নোয়াখালীর আবদুল মালেক উকিল মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রাপ্ত ফলাফলে আমার করোনা পজিটিভ আসে। সেই থেকেই নিজ বাসায় আইসোলেশনে ছিলাম।

করোনা আক্রান্ত হয়ে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, দীর্ঘ ২৫দিন পবিরার, পরিজন আত্মীয় স্বজন সকলের কাছ থেকে বিছিন্ন ছিলাম। একই ঘরে থাকতাম অথচ নিজের সন্তানদের কাছেও যেতে পারতাম না। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা নিয়েছি, সেই সাথে দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতির মোকাবেলা করেছি। কখনো ভেঙ্গে পড়িনি। এজন্য মহান আল্লাহর কাছে লাখো শুকরিয়া।

অন্যদিকে গত ৪ জুন নমুনা দেন জহিরুল হক মিলন। গত ৮ জুন তাঁর করোনা পজিটিভ আসে। নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, করোনা যেন আমার চিরশত্রুকেও আক্রান্ত না করে। আমি আক্রান্ত হবার খবর শুনে আমার গ্রামের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গেছিল। এমনি অনেকে গ্রাম ছেড়েও পালাচ্ছিল। আমার পরিবারের লোকজন একপ্রকার অস্পৃশ্য হয়ে উঠে ছিল বাড়ির আশেপাশের লোকেদের কাছে। মিলন বলেন, জীবনে এ ধরনের বাস্তবতার মুখোমুখি আগে কখনো হইনি।

তিনি বলেন, নমুনা দেবার পর থেকেই আইসোলেশনে ছিলাম। স্বাস্থ্য বিভাগের পরামর্শ মেনে চলেছি। আল্লাহর রহমতে তেমন কোন শারীরিক সমস্যা হয়নি। সবসময় মনোবল ধরে রেখেছিলাম। আজ সুস্থ হবার পর থেকে নিজেকে অন্যমানুষ বলে মনে হচ্ছে।


সেই কঠিন মুহুর্তে যারা পাশে ছিলেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন তারা দুজনেই। এছাড়া আক্রান্ত হলে ভয় নয়, দৃঢ় মনোবল নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। একইসাথে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেছেন।

ফেনীতে বিভিন্ন সময়ে ৪জন গণমাধ্যমকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদের মধ্যে আরও দুজন হচ্ছেন সময় টিভি’র ক্যামেরাপারসন মীর হোসেন রাসেল ও দৈনিক ইনকিলাব-এর দাগনভূঞা প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াছিন সুমন।

গত ৩১ মে নমুনা দিলে সময় টিভি-এর ক্যামেরাপারসন মীর হোসেন রাসেলের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। তিনি সদর উপজেলার শর্শদী ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে আইসোলেশনে ছিলেন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাঁকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শ্বাসকষ্টের কারণে তাঁকে অক্সিজেন দেওয়ায় এখন অনেকটা সুস্থ আছেন।

এছাড়া দৈনিক ইনকিলাব-এর দাগনভূঞা প্রতিনিধি সৈয়দ ইয়াছিন সুমন করোনায় আক্রান্ত হয়ে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে রাজধানীর কুর্মিটোলায় প্রেরণ করা হয়। বর্তমানে দাগনভূঞা পৌর শহরের বাসায় হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।