চলতি বছরের শুরু থেকে ইসলামিক ফাউণ্ডেশনের (ইফা) মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রমের দারুল আরক্বাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। ফলে ফেনীতে এ প্রকল্পের ১২ মাদ্রাসার ২ হাজার ২১৩ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা ঝুঁকিতে। প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মরত ২৩ জন শিক্ষক বেতন পাচ্ছেন না গেল ছয় মাস। সবকিছু মিলে অস্বস্তিতে রয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, শিক্ষক এবং অভিভাবক।

ইফা ফেনীর উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল আলম জানান গণশিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় সহজ কোরআন শিক্ষা কেন্দ্র, প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষা কেন্দ্র, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র এবং দারুল আরক্বাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসা চলমান। তবে চলতি বছরের জানুয়াররি মাস হতে শেষোক্ত প্রকল্পটি প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশক্রমে বন্ধ রয়েছে। এতে করে সারা দেশে ১ হাজার ১০টি মাদ্রাসার কার্যক্রম বন্ধ ঘোষিত হয়েছে।

উপ-পরিচালক জানান, মাদ্রাসা শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণে ফেনীর ছয় উপজেলার ১২টি মাদ্রাসায় প্রথম হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থী এখানে পড়ে। প্রকল্প চলাকালীন সময় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠদান, বই, খাতা এবং অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ ইফা হতে সরবরাহ করা হত। বর্তমানে শিক্ষকদের বেতনসহ সব রকম কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

ফেনীর উক্ত ১২ মাদ্রায় কর্মরত রয়েছেন ২৩জন শিক্ষক। তাদের সংগঠন দারুল আরক্বাম শিক্ষক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পূর্ব কাজীরবাগ দারুল আরক্বাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মোঃ জাহিদুল ইসলাম মল্লিক জানান, ফেনীতে ২ হাজার ২১৩জন শিক্ষার্থী মাদ্রাসাগুলোতে পাঠরত আছে। এদের মধ্যে ১৬৫জন ইবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার্থী। তবে আমরা মাদ্রাসায় পাঠদান বন্ধ রাখিনি। কিন্তু এতগুলো শিক্ষার্থীর দায় বড় রকম দুশ্চিন্তার বিষয়।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা ১১ হাজার ৮শ টাকা করে মাসিক বেতন পেত। এখন কোনো আয় নেই ফলে মানবেতর পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

পরশুরাম চম্পকনগর দারুল আরক্বাম ইবতেদায়ী মাদ্রাসার সহকারি শিক্ষক মোঃ ইউনুস জানান, সেখানে ১৩৫জন শিক্ষার্থী বর্তমানে অধ্যয়নরত। তবে তাদের জন্য কোনোরকম সুবিধা নেই। এতগুলো শিক্ষার্থীকে সবরকম শিক্ষা উপকরণ উপহার দিয়ে পড়ানোর সুযোগ অন্য কোথাও নেই। সাধারণত অস্বচ্ছল পরিবারের সন্তানরা এখানে পড়তে আসে। আমরা বিনা বেতনে পড়াচ্ছি, দায় এড়াতে পারছি না। পাশাপাশি নিজেরাও ঋণগ্রস্ত হয়ে যাচ্ছি।

উপ-পরিচালক মঞ্জুরুল আলম জানান, প্রকল্পটি নতুন করে শুরু হবে কিনা এমন নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। তবে এর প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় আনতে নিয়মিত প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। তিনি জানান, সকল শিক্ষককে ফেনী জেলা প্রশাসকের বিশেষ বিবেচনায় সমাজসেবা কার্যালয়ের মাধ্যমে ৩ হাজার টাকা করে সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

পূর্ব কাজীরবাগ দারুল আরক্বাম মাদ্রাসার চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোঃ হাসানের পিতা মোঃ ইউনুস বলেন, আর্থিক সামর্থ না থাকলেও এ মাদ্রাসায় সন্তানকে ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ছিল। এটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেলে সন্তানকে ব্যয়বহুল বেসরকারি মাদ্রাসায় পড়ানো সম্ভব হবে না।

ছবিঃ সংগৃহীত