একটি মাত্র ব্রিজের অভাবে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতো ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরমজলিশপুর ইউনিয়নে ছোট ফেনীর ওপারের ১৫ হাজার মানুষ। তাদের স্বাভাবিক জীবন যাপন, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপট সব কিছুই সীমিত ছিল একটি নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে। নৌকাই ছিল তাদের একমাত্র ভরসা। ইউনিয়নে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকলেও যোগাযোগের সুবিধা না থাকায় পড়ালেখা হতে বঞ্চিত থাকত এলাকার শিশুরা। এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল একটি ব্রীজের, যা তাদের চিরাচরিত প্রেক্ষাপট বদলে দেবে। রবিবার (২৩ আগস্ট) বিকালে তাদের সে চাওয়া পূরণ হয়েছে।

রবিবার ফিতা কেটে ও নামফলক উম্মোচন করে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত মাওলানা ঘাট সেতু উদ্বোধন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ফেনী-৩ আসনের এমপি লেঃ জেনারেল (অবঃ) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী।

উনিয়নের মাওলানা আব্দুল আউয়াল ঘাটে ছোট ফেনী নদীর উপর নির্মিত ৯৬ মিটার দীর্ঘ পিএসসি গার্ডার ব্রীজটি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করেছেন এমপি নিজে উপস্থিত থেকে।

উদ্বোধনকালে সাংসদ মাসুদ চৌধুরী বলেন, ব্রিজটি এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন ছিল। আজ সেটি পূরণ হয়েছে।

এলাকার বিভিন্ন উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ফাজিলের ঘাটে ব্রিজ তৈরির টেন্ডার ও কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। সোনাগাজী ও দাগনভূঞাতে অসংখ্য ব্রিজ এবং রাস্তাঘাট তৈরি করা হচ্ছে। রাস্তাঘাট ও যোগাযোগের ব্যবস্থা উন্নত হলে সে এলাকার উন্নয়ন হতে বাধ্য। তিনি বলেন, এলাকায় যে হারে উন্নয়ন হচ্ছে আগামী দু তিন বছরের মধ্যে রাস্তা করার জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না।

সাংসদ বলেন, এজন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে দেশে এত উন্নয়ন হচ্ছে।

উপস্থিত সকলের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, প্রধানমন্ত্রী ‘রূপকল্প ২০৪১’ যেভাবে প্রণয়ন করেছেন তা বাস্তবায়ন হবে। বাংলাদেশ উন্নতশীল দেশে পরিণত হবে। সর্বস্তরের জনগণ উন্নয়নে সহযোগি হলে দেশের উন্নয়ন তরান্বিত হবে।

তিনি বলেন, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে একটি সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ উপহার দিয়ে যেতে পারি সে ব্যাপারে সরকার সচেষ্ট আছে। কোথায় কি করতে হবে সেটি আমাদের নজরে আছে।

এসময় সোনাগাজীতে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে ৩৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে বলেও জানান মাসুদ চৌধুরী।

ওই এলাকার ষাটোর্ধ্ব কৃষক আবদুল কাদের জানান, সোনাগাজী সদরের সাথে সরাসরি যোগাযোগের কোন ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘকাল ভোগান্তিতে পোহাতে হয়েছে সকলকে। এলাকায় উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ করা ছিল কষ্টকর, অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসার জন্য শহরে যেতে সময় লাগত ঢের। নদীর পাড়েই আমাদের জীবন কেটেছে। ব্রিজটি চালু হওয়াতে এলাকায় নতুন করে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় চর মজলিশপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হোসেন জানান, ব্রিজ না থাকার কারণে নদীর ওপারের ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ড একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিল।

তিনি বলেন, নদীর ওপারে চর মজলিশপুর এবং মজলিশপুর নামে দুইটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওসমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং একটি ফাজেল মাদ্রাসা রয়েছে। ওপারের মানুষের প্রধান পেশা কৃষি। ধান চাষ ও মাছ চাষ প্রধান জীবিকা।

চেয়ারম্যান বলেন, এ ব্রীজের কারনে নদীর ওপারের জনপদের প্রায় ১৫ হাজার মানুষ সরাসরি সোনাগাজী উপজেলা সদরে যাতায়াত করতে পারবে। ব্যবসায় নতুন মাত্রা যোগ হবে। এছাড়াও দাগনভূঞা উপজেলা ও নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সাথে সোনাগাজীর যোগাযোগ সহজ হয়েছে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ফেনীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শাহ আলম পাটোয়ারী জানান, এলবিসি প্রকল্পের আওতায় ৯৬ মিটার পিসি গার্ডার সেতুটি নির্মাণে ব্যায় হয়েছে ৬ কোটি ৮৪ লাখ ৯১ হাজার ৪শ ৭৮ টাকা।

প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান নুর নবী এন্ড হক ট্রের্ডার্সের সত্ত্বাধিকারী ফজলুল হক বাবলু জানান, প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ১ বছর ৬ মাস। নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে ব্রিজটি সম্পন্ন করা হয়েছে।

উদ্বোধনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কাসেম, সোনাগাজী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম, আমিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান জহিরুল আলম জহির, বগাদানা ইউপি চেয়ারম্যান ক.খ.ম ইসহাক খোকন প্রমুখ।