বাবার কাছ থেকে টাকা হাতাতে নিজেকেই অপহরণের নাটক করল বছর ১৫ বছর বয়সী এক কিশোর। রীতিমতো পরিকল্পনামাফিক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পরে অন্য লোকের মাধ্যমে বাবার কাছে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চেয়ে ফোন করা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। পুলিশের কুশিলতায় বেরিয়ে এল তার সাজানো ‘অপহরণ’ নাটকের কাহিনী।

ওই কিশোরের নাম রিদোয়ান আহমেদ রুপম (১৫)। সে পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া এলাকার মহিউদ্দিন সেলিমের ছেলে ও আল হেলাল একাডেমীর ৭ম শ্রেণীর ছাত্র। আজ বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর দেড়টার দিকে চট্টগ্রাম পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ।

তাঁকে উদ্ধারের পর পুলিশ জানায়, রিদোয়ান নিজেই আত্মগোপনে গিয়ে অপহরণের নাটক সাজিয়েছেন। পরিবারের কাছ থেকে টাকা আদায় করতেই বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে তারা বাবাকে মুক্তিপণের জন্য ফোন দেয়া হয়।

সোনাগাজী থানা পুলিশ জানায়, গত ২৯ আগস্ট বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় রিদোয়ান। এ ব্যাপারে গত শনিবার ( ৫ সেপ্টেম্বর) তার বাবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন। এরপর গত সোমবার বিকাল থেকে মুক্তিপণ দাবি করে তার বাবা মহিউদ্দিন সেলিমের ফোন করতে থাকেন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা। বিষয়টি তিনি পুলিশকে অবহিত করেন।

থানার উপপরির্দশক (এসআই) সাইফুদ্দীন জানান, বিষয়টি পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব সাথে নেয়। দুটি নাম্বার হতে মহিউদ্দিনের সেলিমের মুঠোফোনে ফোন করা হয়। এর মধ্যে একটি রিদোয়ানের ব্যবহৃত মুঠোফোনের নাম্বার। মুক্তিপণ চাওয়া বিকাশ নম্বরগুলো ট্রেকিংয়ের মাধ্যমে যাচাই করে এর অবস্থান ও মালিকের নাম শনাক্ত করা হয়। একপর্যায়ে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি বিকাশ নাম্বারে মুক্তিপণ বাবদ ২৪ হাজার টাকা পাঠানো হয়। কিন্তু আগে থেকেই শনাক্তকৃত স্থানে অবস্থান করছিল পুলিশ সদস্যরা। টাকা আনতে গেলে সেসময় পুলিশের হাতে ধরা পড়ে রিদোয়ান। পরে তাকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতয়ালী থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

রিদোয়ানের বাবা মহিউদ্দিন সেলিম জানান, গত ২৯ আগস্ট সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় সে। অনেক খোঁজাখুজি করে তাকে না পেয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরী করা হয়। এরপর সোমবার বিকেলে এক ব্যক্তি ফোন করে বলে রিদোয়ান লালপোল রয়েছে। ৩০ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। রাতে রিদোয়ানের ব্যবহৃত মোবাইলফোন থেকে ফোন করে আবারও আমার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুটি নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। সর্বশেষ মঙ্গলবার রাতে আরও একটি নম্বর থেকে আমার কাছে বিকাশে ২৪ হাজার টাকা চাওয়া হয়।  বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করে নাম্বারগুলো দেই।

তিনি জানান, এ ব্যাপারে র‌্যাব-৭ ফেনী কার্যালয়েও লিখিত অভিযোগ করেছিলাম।

স্থানীয়রা জানান, গত ফেব্রুয়ারীতে একবার রিদোয়ান নিখোঁজ হয়ে গেছিল। সেবারও তার বাবার কাছে মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছিল। টাকা না দেয়ায় কয়েকদিন পর রিদোয়ান নিজেই বাড়িতে হাজির হয়েছিল। এবার সে একই ঘটনার ঘটিয়েছে।

চট্টগ্রামে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে স্থানীয় এক যুবকের সহায়তায় সে বাবার কাছ থেকে টাকা আদায় করার জন্য এ কান্ড ঘটিয়েছে বলে রিদোয়ান জানায়।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম পলাশ জানান, তাকে চট্টগ্রাম হতে সোনাগাজীতে আনা হচ্ছে। সে স্বেচ্ছায় নিখোঁজ হয়ে গেছিল। আইনী প্রক্রিয়া শেষে তাকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।