ফেনীতে কিশোর অপরাধ প্রতিরোধে কঠোরতর হচ্ছে পুলিশ। যে বা যারাই এ অপরাধে জড়িত থাকবে, তাদের কাউকে বিন্দুমাত্র কোনপ্রকার ছাড় দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার খোন্দকার নূরুন্নবী।

শুক্রবার বিকালে শহরের পাঠানবাড়ি রোডে সংঘটিত ঘটনার প্রেক্ষিতে আজ শনিবার (৩ অক্টোবর) সকালে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন পুলিশ সুপার।

তিনি বলেন, জেলা ও উপজেলায় সক্রিয় কিশোর অপরাধী চক্রের তালিকা হালনাগাদ করা হচ্ছে। তলিকা ধরেই অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ কিশোর অপরাধীদের আড়ালের প্রশ্রয়দাতা ‘বড় ভাইদের’ বিরুদ্ধেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে।

পুলিশ সুপার বলেন, জেলা পুলিশের সকল বিভাগের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাকে কিশোর গ্যাং এর তালিকা হালানাগাদ করার ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিশোর অপরাধীচক্রের কারা কোন এলাকায় সক্রিয় রয়েছে, কোন চক্রের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে রয়েছে, কাদের বিরুদ্ধে কী মামলা রয়েছে বা নেই- বিস্তারিত সব তথ্য হালনাগাদ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। ওই তালিকা ধরেই প্রতিটি চক্র ও তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতাদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান পরিচালনা করা হবে।

কিশোরদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, তাদের সামনে ভবিষ্যত জীবন পড়ে আছে। কেউ যদি মামলা-মোকদ্দমায় জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তা ভবিষ্যত জীবনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কেননা একটি মামলার রেফারেন্স শত শত বছর থেকে যেতে পারে। পুলিশ সুপার বলেন, কিশোর অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি মূল ভূমিকা রাখতে পারেন অভিভাবক ও শিক্ষকরা।

কিশোর অপরাধ নির্মূলে পুলিশি পদক্ষেপের পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসন দরকার উল্লেখ করে পুলিশ সুপার বলেন, ‘এখন সামাজিক অনুশাসন বলতে কিছুই নেই। এ অবস্থায় পারিবারিক অনুশাসন নিবিড় ও জোরদার করতে হবে। সামাজিক অনুশাসন প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গেছে, তা পুনরুদ্ধার করতে হবে। কিশোর অপরাধীদের পেছনে কোনও রাজনৈতিক প্রভাবশালীর সহযোগিতা থাকলে তা অবশ্যই বন্ধ অথবা প্রত্যাহার করতে হবে। যেসব ‘বড় ভাই’ কিশোরদের ইন্ধন দিয়ে বিপথগামী করে তাদেরকেই গ্রেফতার করতে হবে।’

অভিভাবকদের প্রতি সন্তানদের সবসময় খেয়াল রাখার আহ্বান পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, আপনার সন্তান সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কোথায় যাচ্ছে, কি করছে, কার সাথে মিশছে, কোন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে কিনা আপনাকে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনি যদি আপনার সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন, তাহলে সে সন্তান আপনার কান্নার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

কিশোর অপরাধ দমনে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতা কামনা করেছেন পুলিশ সুপার।

উল্লেখ্য, গতকাল শুক্রবার বিকালে ফেনী শহরের পাঠানবাড়ি রোডের দারোগা বাড়ির সামনে সংঘটিত হামলার ঘটনায় তিন কিশোরকে আটক করা হয়েছে বলে জানান ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদ্বীপ রায়।

এ ঘটনায় ৫ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন হামলার শিকার মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান। ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, এ মামলা ওই তিন কিশোরকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা হল শহরের নাজির রোডের শাহাবুদ্দিনের ছেলে মোঃ সাকিব (২০), একই এলাকার মোঃ সেলিমের ছেলে মোঃ শাহেদ (২০) ও কাজী জয়নাল আবেদীনের ছেলে কাজী মিনহাজ আবেদীন ফয়সাল (১৯)।

মামলায় মোঃ আবদুল্লাহ আল নোমান উল্লেখ করেন, ফালাহিয়া রোড এলাকায় ওই কিশোরদের ইউটিজিংসহ নানা অপকর্মের প্রতিবাদ করায় তারা ছেনী, লোহার রড ও পাইপ নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমাদের উপর হামলা চালায়।