রবিবার (১১ অক্টোবর) ভোরে ফেনী সদরের ফতেহপুর রেলক্রসিংয়ে সংঘটিত দুর্ঘটনায় বাচ্চু মিয়া (৪৮) নামে আরেক ব্যক্তির লাশ পাওয়া গেছে। আজ মঙ্গলবার ( ১৩ অক্টোবর) সকালে স্থানীয়রা লাশটির সন্ধান পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে ফেনী রেলওয়ে পুলিশের সদস্যরা এসে লাশটি উদ্ধার করে ফেনী জেনারেল হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে।

বাচ্চু মিয়া কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলার গুনবতীর বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রামের এনসিসি ব্যাংকের হালিশহর শাখায় অফিস সহকারি ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজ ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে বের হয়েছিলেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম ও মুসল্লীরা। এসময় আশপাশ হতে দুর্গন্ধ টের পেয়ে কারণ অনুসন্ধানে চালালে রেললাইনের পাশের ঝোপের ভেতর পড়ে থাকা একটি লাশ দেখতে পেয়ে রেলওয়ে পুলিশকে খবর দেন। পরে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

জানা গেছে, শনিবার ভোরে চট্টগ্রামে যাবার উদ্দেশ্যে কুমিল্লার পদুয়া থেকে এনআর শ্যামলী পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন তিনি। পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার তৎপরতা চালালেও সেসময় তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। পরে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চলে যান। তিনদিন ধরেই ওই স্থানেই পড়ে ছিল তার লাশ।

নিহতের সহকর্মী এনসিসি ব্যাংক ফেনী শাখায় কর্মরত রসুল আহমেদ বাদশা জানান, সাপ্তাহিক ছুটি কাটিয়ে ওইদিন সকালে চট্টগ্রামের হালিশহরে অফিসে যাবার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলেন তিনি। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে তার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থল, হাসপাতাল ও থানায় গিয়েও তার কোন খোঁজ পায়নি। এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেছিল তার পরিবার। পরে আজ সকালে লাশটি উদ্ধার করা হলে তার সঙ্গে থাকা পরিচয়পত্র ও ব্যবহৃত মোবাইলের মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানালে তারা এসে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বুঝে বাড়িতে নিয়ে যান। আজ বাদ জোহর নামাযে জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাযায় এনসিসি ব্যাংকের কর্মকর্তারাসহ স্বজন ও স্থানীয় এলাকাবাসী অংশ নেন।

বাদশা জানান, বাচ্চু মিয়া ৪ ছেলে ও এক মেয়ের জনক। এরমধ্যে দুইজন সন্তান প্রতিবন্ধী।

ফেনী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রিপন নাথ জানান, ওই দুর্ঘটনায় এ নিয়ে ৪ জনের লাশ ফেনী জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়েছে। এর মধ্যে আজ সকালে বাচ্চু মিয়া নামে ওই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালে আনে রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা।

তিনি জানান, দুর্ঘটনায় মৃত ৪ জনের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। পরিচয় না পাওয়ায় একজনকে গতকাল বেওয়ারিশ হিসেবে স্থানীয় সুলতানপুরে ফেনী পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

ফেনী রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম লাশ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ধারণা করা হচ্ছে উদ্ধারকৃত লাশটি শনিবার দুর্ঘটনায় মারা যান। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। তিনি জানান, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষ হয়েছে। তবে এখনো প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়নি।

ঘটনার তিনদিন পরে লাশ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার অভিযান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন স্থানীয়রা। তারা বলেন, ঘটনার দিন ভালোভাবে খোঁজ চালালে লাশটি সেদিনই উদ্ধার করা যেত।

এর আগে রবিবার (১১ অক্টোবর) ভোর পৌনে ৬টার দিকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে চট্টগ্রামগামী এনআর শ্যামলী পরিবহনের একটি বাসকে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী ঢাকা মেইল ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। ঘটনার খবর পেয়ে উদ্ধার অভিযানে নামে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। সেদিন ঘটনাস্থল থেকে ২ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় ও হাসপাতালে নেবার পথে আরেক জন মারা যান। এ ঘটনায় আরও অন্তত ১৫ জন আহত হন। ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও গেইটম্যানকে বরখাস্ত করে।