ফেনী শহরের পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিসের মনির উদ্দিন সড়কের তাসপিয়া ভবনের দেয়াল-দরজায় এখনো লেগে আছে রক্তের দাগ। বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) কেয়ারটেকারের কক্ষে সংঘটিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে ভবনটি।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে সরেজমিনে ভবনটি পরিদর্শনে গেলে এমনটিই চোখে পড়েছে। এদিন বাবু হত্যা মামলায় গ্রেফতার কেয়ারটেকার মোজাম্মেল হক শাহীনকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। তারা ঘটনাস্থল ও আশেপাশে ঘুরে দেখেন। এসময় তাকে নিয়ে পাঠানবাড়ি সড়কের একটি দোকানে যান।

বৃহস্পতিবার কেয়ারটেকার শাহীনকে নিয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ কর্মকর্তারা

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদ্বীপ রায় জানান, ঘটনার রাতে ওই দোকান হতে ঘরে অবস্থানরতদের জন্য খাবার কিনেছে শাহীন। তার দেয়া তথ্য যাচাই করতেই তাকে সেখানে নেয়া হয়।

সুদ্বীপ রায় জানান, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শাহরিয়ারের অবস্থা গুরুতর। তার চোখ-মুখ ফুলে উঠেছে। ডাক্তার পরামর্শ অনুযায়ী তার সাথে কথা বলা যাচ্ছে না। সেও কথা বলতে পারছে না।

আরও পড়ুন⇒ ‘চাঞ্চল্যকর বাবু হত্যা মামলাঃ শাহীনের ৭ দিনের রিমান্ড’

অন্যদিকে বৃহস্পতিবার রাতে ফেনী পৌরসভায় সাংসদ নিজাম উদ্দিন হাজারীর সাথে দেখা করেছেন নিহত ইউনুছ বাবুর বাবা-মা। এসময় সাংসদের কাছে ছেলে হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি উত্থাপন করেন তারা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সাথে মুঠোফোনে কথা বলেন নিজাম হাজারী এমপি। মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়ে দ্রুত জড়িতদের গ্রেফতারে ও বাবু হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেন তিনি।

সাংসদ নিজাম হাজারীর সাথে দেখা করেছেন নিহত বাবুর বাবা-মা

ঘটনার ৮ দিন অহিতবাহিত হলে এখন পাঠানবাড়ি রোডের ওই ভবনের পরিস্থিতি থমথমে রয়েছে। আতংকে রয়েছেন এর বাসিন্দারা। উৎসুক জনতার ভিড় সারাদিন লেগেই আছে। ভবনটির নাম পাল্টাতে এর নামফলক সরিয়ে ফেলেছেন মালিক হোসেন আহম্মদ।

আরও পড়ুন ⇒ ‘রাকিবই বাবুকে হত্যা করেছেঃ মায়ের অভিযোগ’

স্থানীয়রা বলছেন, পাঠানবাড়ি রোডের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। সেই ফুটেজগুলোর পর্যবেক্ষণ করলে এ ঘটনার রহস্য উম্মোচন করা যেতে পারে।

এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ হত্যা মামলার প্রধান আসামী বাবুর বন্ধু ইউনুছ নবী রাকিব এখনও গ্রেফতার হয়নি। তবে তাকে গ্রেফতার করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ, বলছেন কর্মকর্তারা। এর আগে গত সোমবার পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে কেয়ারটেকার শাহীনের ৭দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। জিজ্ঞাসাবাদে এ হত্যাকান্ড অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে শাহীন। তবে এ ব্যাপারে এখনও মুখ খুলতে রাজি নন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, সময় হলেই সব প্রকাশ করা হবে।

আরও পড়ুন⇒ ‘বাবুর মাথায় ছিল ৫টি কোপের দাগ, গলায় রশি পেঁচানো’

গত শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাসপিয়া ভবনের সেফটি ট্যাংক হতে আর্কিটেক্ট ডিজাইন নিয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ুয়া বাবুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ। সুরতহাল প্রতিবেদনে বাবুর মাথার সামনে ও পেছনে ৫টি কোপের দাগ ও গলার কণ্ঠনালীতে দড়ি দিয়ে গিট দেয়া ছিল বলে উল্লেখ করা হয়।

আরও পড়ুন⇒ ‘তাসপিয়া ভবনের সেপটিক ট্যাংকে মিলল আরও এক যুবকের লাশ’

খুনের ঘটনায় বন্ধু ইউনুছ নবী রাকিবকে হত্যাকারী দায়ী করছেন বাবুর মা রেজিয়া বেগম। ছেলেকে হারিয়ে আহাজারি থামেনি এখনও তারা। রেজিয়া বেগমের দাবি, রাকিবসহ আরও কয়েকজন বাবুকে বাসা হতে ডেকে এনে পরিকল্পিতভাবে হত্যার পর ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংকে নিক্ষেপ করেছে। এ ঘটনায় রবিবার সকালে বাবুর মা বাদী হয়ে রাকিব ও কেয়ারটেকার শাহীনকে আসামী করে ৪/৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

শুক্রবার ভোরে ওই ভবনের সেপটিক ট্যাংক হতে মোঃ শাহরিয়ার নামে আরও এক যুবককে আহতাবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

আরও পড়ুন⇒ ‘পাঠানবাড়িতে যুবককে কুপিয়ে ফেলা হয়েছিল সেফটি ট্যাংকে’