চলতি বছরের জুলাই মাসে কেজি ৩০ টাকায় আলু বিক্রি হলেও খুচরা বাজারে আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। সরকার দুই দফায় আলুর দাম সর্বশেষ ৩৫ টাকা নির্ধারণ করলেও খুচরা ও পাইকারী বাজারে তা কার্যকর হয়নি। বরং আলুর মূল্যবৃদ্ধির কারণে ক্রেতাশূণ্যতা দেখা দিয়েছে বাজারে।

আজ মঙ্গলবার (২৭ অক্টোবর) সকালে ফেনীর ইসলামপুর রোডে আলুর আড়তে দেখা যায়, পাইকারী দরে রাজশাহী ও মুন্সিগঞ্জ হতে আসা আলু কেজি প্রতি ৩৮-৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ইসলামপুর রোডে আলুর কমিশন এজেন্ট বাচ্চু মিয়া, মোঃ ইব্রাহিম ও সাহাব উদ্দিন জানান, দাম বাড়ার কারণে খুচরা দোকানিরা আলু কেনার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে আগে প্রতি আড়ত হতে গড়ে ৭০ থেকে ৮০ বস্তা আলু বিক্রি হত, এখন সারাদিনে ২০ বস্তাও বিক্রি হচ্ছে না।

পৌর হকার্স মার্কেটের খুচরা আলু ব্যবসায়ী বশর, রশিদ ও আল আমিন জানান, আগে গড়ে প্রতিদিন ৩ হতে ৪ বস্তা আলু বিক্রি হত। কিন্তু দাম বাড়ার পর থেকেই আলুর চাহিদা কমতে থাকে। এখন প্রতিদিন এক বস্তা আলু বিক্রি করতেও কষ্ট হচ্ছে। তারা বলেন, নিয়মিত ক্রেতারা বাজার করতে এলে অনেকেই আলুর প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

দাম বাড়ায় খুচরা ক্রেতারাও আলু কিনতে হিসেব করছেন। বাজার করতে আসা মুনতাসির হাসান নামে একজন ভোক্তা জানান, গত ৪ দিনে আমাদের পরিবারের কোন আলুর তরকারি রান্না করা হয়নি। আগে বাজারের তালিকায় আলু নিত্য খাদ্য হিসেবে থাকলেও, দাম বাড়ার পর থেকে আলু কেনা অর্ধেক কমিয়ে দিয়েছি।

আনোয়ার হোসেন নামে আরেক ভোক্তা জানান, আগে প্রতি সপ্তাহে পরিবারের জন্য ৭ কেজি আলুর প্রয়োজন হত। দাম বাড়ায় এখন ৪ কেজি আলু কিনছি।

আলুর দাম বাড়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইসলামপুর রোডের মেসার্স মোঃ ইব্রাহিম ট্রেডার্সের মালিক মোঃ ইব্রাহিম বলেন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে গত মৌসুমে আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। এছাড়া করোনায় ত্রাণ সামগ্রীর সাথে অধিক পরিমাণে আলু বিতরণ করায় বাজারে এর প্রভাব পড়েছে।

সরকারের দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে মেসার্স এসবি ট্রেডার্সের মালিক বাচ্চু মিয়া বলেন, সরকার ঘোষিত মূল্যে বিক্রি করলে বস্তাপ্রতি ২৫০ টাকা ক্ষতি হচ্ছে, আবার সরকার ঘোষিত মূল্যে বিক্রি না করলে আমাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এখন আমরা উভয় সংকটের মধ্যে রয়েছি।

মেসার্স সাহাবউদ্দিন ট্রেডার্সের মালিক সাহাবউদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার হিমাগারে মূল্য নিয়ন্ত্রণ না করে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কম মূল্যে বিক্রিতে বাধ্য করছে। ফলে পাইকারি বাজারে ক্রেতা সংকট দেখা দিয়েছে।

সরাসরি কৃষক হতে আলু সংগ্রহকারী মুন্সিগঞ্জের বেপারী মোঃ ফারুক জানান, ২০১৬ সাল থেকে বিগত ৪ বছর ধরে আলু চাষীরা লোকসান গুনতে গুনতে অনেকে সর্বস্বান্ত হয়ে ঘর-বাড়ি পর্যন্ত হারিয়েছে। তখন সরকার চাষীদের জন্য কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। মূলধনের সংকটে অনেক চাষী চলতি মৌসুমে আলু চাষ করতে পারেন নি। এর মধ্যে বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে আশানুরূপ ফসলও হয়নি। এর প্রভাব পড়েছে আলুর বাজারে।

তিনি আরও বলেন, হিমাগারে মজুত থাকা আলু সিন্ডিকেটের মাধ্যমে আটকে রেখে বাজারে সংকট তৈরি করা হচ্ছে। এতে করে ছোটখাটো বেপারীদের অধিক হারে লোকসান গুনতে হচ্ছে।