ত্রিশ ফুট দেয়াল জুড়ে স্থান পেয়েছে ধর্ষণ বিরোধী প্রতিবাদ এবং সচেতনতামূলক বিভিন্ন রঙিন চিত্র। ফেনী শহরের ডাক্তারপাড়ার পুরাতন রেজিস্ট্রি অফিস সড়কে একটি বাড়ির দেয়ালে রঙ আর তুলিতে ব্যতিক্রমি এ প্রতিবাদের চিত্র আঁকছেন তানিয়া ফারাবী তিশা। ফেনী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের এ শিক্ষার্থীকে সহযোগিতা করছেন একই বিভাগের তৃতীয় বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি চৌধুরী।

আজ সোমবার (১৬ নভেম্বর) বিকালে ওই স্থানে গিয়ে দেখা গেছে, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে নিবিষ্ট মনে ছবি এঁকে চলেছেন তিশা ও রাব্বি। দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ৫টি চিত্রকর্ম ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। কোনটিতে স্থানে নারীর প্রতি সামাজিক আচরণের চিত্র, কোথাও প্রতিবাদের চিত্র, বাচ্চাদের জনপ্রিয় কার্টুন চরিত্র ‘মীনা’র ভুমিকায় প্রতিবাদী নারী চিত্র, কোনটিতে রয়েছে নারী ও শিশুদের আত্মরক্ষার কৌশল।

চিত্রকর্ম আঁকার কারণ জানতে চাইলে ঢাকা আর্ট ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী তিশা জানায়, ধর্ষণ ও নির্যাতনের প্রতিবাদে নারী সুরক্ষায় সমাজ ও নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এ চিত্রকর্মগুলোর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। চিত্রকর্মগুলো এক ধরনের বার্তা, যা সমাজের প্রতিটি মানুষকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে আলোড়িত করবে বলে আমার ধারণা।

তিশা বলেন, সবার আগে নিজেদের নিরাপত্তার ব্যাপারে নারীদের সচেতন হতে হবে। নারীরা যতক্ষণ নিজেরা সচেতন হবে না, ততক্ষণ অন্য কেউ এসে তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। হোক সে পিতা, ভাই কিংবা প্রশাসন। এমনকি নারী নিজের ঘরেও সুরক্ষিত নয়। সেক্ষেত্রে নারীদের আত্মরক্ষার কৌশল ও পরিস্থিতি অনুযায়ী প্রতিবাদ করতে জানতে হবে।

তিশার সহযোগি ফজলে রাব্বি চৌধুরী বলেন, সারাদেশে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে অভিনব কিছু করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। ফেনী মুহুরী লিও ক্লাবের সহযোগিতায় দেয়াল চিত্রের মাধ্যমে আমাদের প্রতিবাদের ভাষা প্রকাশ করতে চেয়েছি।

ফেনী মুহুরী লিও ক্লাবের সভাপতি তাসিন সোবহান বলেন, আমাদের ক্লাবের পক্ষ হতে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ঘিরে দেয়াল চিত্র আঁকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। তিশা আমাদের ক্লাবের সদস্য হওয়ায় তাকে চিত্রকর্ম আঁকার দায়িত্ব প্রদান করা হয়। এ চিত্রের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও নারীদের সচেতনতা বাড়লে আমাদের এ প্রচেষ্টা স্বার্থক হবে।

তাহমিদা আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, চলাচলের পথে এ ধরনের দেয়াল চিত্র মানুষকে আকৃষ্ট করবে। নারী সহিংসতা বন্ধে প্রতিবাদের এ ব্যতিক্রমী উপস্থাপন দেখে আমি নিজেই নতুন করে ভাবতে শিখেছি।

সুলতানা আক্তার ফারিয়া নামে কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে নানা ধরনের ইভটিজিংয়ের শিকার হতে হয় আমাদের। এ জাতীয় চিত্রকর্ম ইভটিজার ও নারী অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদী করে তুলতে সাহায্য করার পাশাপাশি সচেতনতাও বাড়াবে।