বিয়ের প্রলোভন দিয়ে দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়েই চলেছে। তেমনি একটি ঘটনা ঘটে ফেনীতে। ছেলে ও মেয়ের মধ্যে দুই বছরের প্রণয়ের পর বিয়ের প্রলোভন দিয়ে অভিযুক্ত জিয়াউদ্দিন ধর্ষণ করে মেয়েটিকে। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকার করায় দায়ের হয় মামলা। ঐ মামলায় কারাগার থেকে ভিকটিমকে বিয়ে করার শর্তে জামিন চান আসামি। ভিকটিমের সম্মতি থাকলে কারাফটকে বিয়ের আয়োজন করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। উচ্চ আদালতের এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নারীবাদী সংগঠনগুলো।

সোমবার (৩০ নভেম্বর) এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে ঐ সমালোচনার জবাব দিয়ে হাইকোর্ট বলেছে, যে যাই সমালোচনা করুক, আমরা এ ধরনের বিয়ের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখছি।

আদালত বলেন, প্রযুক্তির কারণে সমাজে মানুষের মধ্যে সম্পর্ক গড়তেও সময় লাগে না, আবার ভাঙ্গতেও সময় লাগে না। এখন আমাদের দেশে ডিভোর্সের সংখ্যা অনেকাংশে বেড়ে গেছে। শিক্ষিত লোকদের মধ্যে এটা বেশি হচ্ছে। বরং সাধারণ মানুষের মধ্যে এই প্রবণতাটা কম। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ সোমবার এ মন্তব্য করেন।

চলতি বছরের ২৭ মে ফেনীর সোনাগাজী থানার জিয়া উদ্দিন (২১) বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তার পার্শ্ববর্তী বাড়ির এক মেয়েকে ধর্ষণ করে। পরদিনই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ৯(১) ধারায় দায়েরকৃত মামলায় জিয়া উদ্দিনকে পাঠানো হয় কারাগারে। তদন্ত শেষে চার্জশিট দেয় পুলিশ। ফেনীর জেলা ও দায়রা জজ গত ২৩ আগস্ট জামিন নামঞ্জুর করলে বিয়ের শর্তে হাইকোর্টে জামিন চান। এরপরই হাইকোর্ট বলেন, ভিকটিমের সম্মতি থাকলে এ বিয়ে হতে পারে। এরপরই গত ১৯ নভেম্বর ফেনী কারাগারে ঐ বিয়ে হয়।

জিয়াউদ্দিনের জামিন শুনানিতে তার আইনজীবী ফারুক আলমগীর চৌধুরী বলেন, দু’বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক শারীরিক সম্পর্কে গড়িয়েছে। দেখতে হবে এখানে জোরপূর্বক কিছু হয়েছে কি না। পৃথিবীতে বেঁচে থাকার জন্য ভালোবাসার বিকল্প নাই।

এ পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেন, আমাদের আদেশ নিয়ে সমালোচনা করেছে নারীবাদী সংগঠনগুলো। আমরা তো নানাভাবে সমালোচিত হচ্ছি। আসলে ব্যক্তিগতভাবে দু একটি পত্রিকার রিপোর্ট দেখে খুব অফেন্ডেড হয়েছি।

পত্রিকার রিপোর্টে লেখা হয়েছে ‘ধর্ষকের সাথে ধর্ষিতার বিয়ে’-এভাবে তো রিপোর্ট করা উচিত নয়। আবার নারীবাদী কিছু সংগঠন তো বলছে-এ ধরনের বিয়েতে ধর্ষকরা উৎসাহিত হবে। আমরা তো ধর্ষকের সঙ্গে ধর্ষিতার বিয়ে দিতে বলিনি। ছেলেটি বিয়ের শর্তে জামিন চেয়েছে। এরপরই আমরা আদেশ দিয়ে বলেছি, মেয়েটির সম্মতি থাকলে বিয়ে হতে পারে। পরে ছেলে ও মেয়ের সম্মতিতেই বিয়ে হয়েছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, এখন মেয়েটি যেন তার সম্মান নিয়ে সংসার করতে পারে সে বিষয়ে কোর্টের দৃষ্টি রাখা দরকার। যাতে পরবর্তীকালে সংসার ভাঙ্গার বেদনায় তাকে পড়তে না হয়। এ পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বলেন, ঘর সংসার কি আইনের কঠোরতা দিয়ে রক্ষা করা যাবে। ১৫/২০ বছর সংসার করার পরও ঘর ভেঙ্গে যাচ্ছে। কেন এমনটা হচ্ছে।

হাইকোর্ট বলেন, আমরা যদি কোন শর্ত দিয়ে দেই, মেয়ের সঙ্গে কোন খারাপ আচরণ করলে জামিন বাতিল হবে তাহলে দেখা যাবে মেয়ে যদি বলে আমাকে আগে ১০ বিঘা সম্পত্তি লিখে দিতে হবে, সমাজে এমন ঘটনা কিন্তু ঘটছে। সব থেকে বড় কথা হলো দুজনের মধ্যে পারস্পারিক বোঝাপড়াটাই আসল। আমরা আশা করবো সংসারটা ভালোভাবে চলুক। এরপরই হাইকোর্ট জিয়াউদ্দিনকে এক বছরের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়। আদালত বলে, অভিযুক্ত যদি শুধু জামিন পাওয়ার জন্যই বিয়ে করে থাকে তাহলে জামিন বাতিল হবে। এ কারণে বিষয়টি আমরা এক বছর পর্যবেক্ষণে রাখলাম।

কৃতজ্ঞতাঃ দৈনিক ইত্তেফাক