বিয়ের ১০ মাস না পেরোতেই ফেনী শহরের রামপুরে মাহমুদা আক্তার শিরিন (২৩) নামে এক গৃহবধূর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। মাহমুদার স্বজনদের দাবি, স্বামী এবং শ্বশুর বাড়ির লোকজন তাকে নির্যাতন করে হত্যা করেছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকাল ৩টার দিকে রামপুরের তনু পাটোয়ারী বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে। মাহমুদা দাগনভূঞার রাজাপুর ইউনিয়নের পশ্চিম রামচন্দ্রপুরের ছলু ভূঁঞা বাড়ির অহিদুর রহমান ও আলেয়া বেগমের মেঝো মেয়ে । রাত ১০ টার দিকে খবর পেয়ে পুলিশ ওই গৃহবধূর লাশ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় পুলিশ মাহমুদার শ্বশুর ও শাশুড়ীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন ফেনী শহর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সুদীপ রায়। তবে তার স্বামী শাহজালাল শাহীন ও ননদ খোদেজা বেগম পালিয়েছেন বলে তিনি জানান।

সুদীপ রায় জানান, আমরা এসে বিছানার উপরে চিৎ করা অবস্থায় মাহমুদার পড়ে থাকতে দেখি। তার গায়ে কম্বল জড়ানো ছিল। তার গলার দুপাশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাবার পর মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করে বলা যাবে। পুলিশ প্রাথমিক সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে তার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠিয়েছে। এ ঘটনার রহস্য উদঘাটনে পুলিশ তদন্ত করছে।

শিরিনের বড় বোন সুলতানা জানান, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীর ৭ তারিখে আগে পারিবারিকভাবে রামপুর পাটোয়ারী বাড়ির বজলের রহমান ও ছালেহা খাতুনের ছেলে শাহজালাল শাহীনের সাথে শিরিনের বিয়ে হয়। শাহীন ফেনী বড় বাজারে ব্যবসা করেন। সেখানে পাটোয়ারী টেলিকম নামে তার একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমার বাবা একজন চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। আমাদের বাড়িঘর না থাকায় বিয়ের পর থেকে শ্বশুর বাড়ির লোকজন শিরিনকে নানাভাবে শারীরীক ও মানসিক নির্যাতন করতে থাকে। এতে সে মানসিকভাবে ভীষণভাবে ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি তারা শিরিনকে বাড়িতেও যেতে দিত না। আজ সকালেও সে আমাকে মোবাইলে জানায় তার স্বামী তাকে বকাঝকা ও গায়ে হাত তুলেছে।

সুলতানা বলেন, আজ বিকেলে বেলায় শিরিন অসুস্থ এবং তাকে হাসপাতালে নেয়া হয়েছে বলে আমাদের ফোন করে শাহীন। ফোন পেয়েই আমরা ছুটে আসি। এখানে এসে দেখতে পাই আমার বোন তার শোবার ঘরের মেঝেতে পরে আছে, তার স্বামী ঘরে নেই। আমার বোনের কি হয়েছে জানতে চাইলে শাহীনের মা ছালেহা খাতুন বলেন, মাহমুদা রুমের দরজা বন্ধ করে আত্মহত্যা করেছে। ছালেহা বেগম আমাদের জানান, তিনি সানশিট দিয়ে ওই রুমের ঢুকে দেখতে পান মাহমুদা গলায় ফাঁস দিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আছে। তিনি তাকে সেখান হতে নামান। এসময় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজনের কথাবার্তা সন্দেহ হলে আমরা পুলিশকে খবর দেই। পরে পুলিশ এসে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে।

সুলতানা বলেন, ছালেহা বেগমের মত স্বাস্থ্যবান একজন মহিলা সানশীট দিয়ে ঢুকে রুমের দরজা খুলতে পারবেন, এ ধরনের কোন আলামত আমরা দেখতে পাইনি। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদেও তিনি তার সদুত্তর দিতে পারেন নি। তিনি বলেন, মাহমুদার গলায়, হাতে এবং কোমরেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোঃ রবিউল ইসলাম ও ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন।

মাহমুদার মা আলেয়া বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মাত্র ১০ মাসের মাঝেই আমার মেয়েকে তারা চিরতরে কেড়ে নিয়েছে। শাহীন, তার মা ও বোন মিলে আমার চাঁদের মত মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি আমার মেয়ে হত্যার বিচার চাই।

ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্ববল হয়ে পড়েন মাহমুদার বাবা অহিদুর রহমান। তিনি জানান, মাত্র ১০ মাস আগে আনুষ্ঠানিকভাবে শাহীনের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। আমার ঘর দুয়ার না থাকায় তারা আমার বাড়ি যেত না। এমনকি শিরিনকে আমাদের সাথেও কোন প্রকার যোগাযোগ করতে দিত না। আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। কিন্তু আমি এ ঘটনায় জড়িত সকলের বিচার চাই।