বিয়ে হয়নি তবু সন্তান জন্ম দিয়েছে এক কিশোরী এই অপরাধে কিশোরীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার সিদ্ধান্ত দিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্যরা। সিদ্ধান্ত প্রদানকারীরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত সাময়িক। ধর্ষিতার পরিবারের ওপর এমন আচরণের ঘটনা ঘটেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সিরহাট ইউনিয়নের কুতুবপুর গ্রামে। চলতি মাসের ১৯ তারিখ রাতে ধর্ষিতার পরিবারকে সমাজচ্যুতের সিদ্ধান্ত দেন সমাজপতিরা।

ধর্ষিতার ভাই জানান, স্থানীয় মুরুব্বি কামরুল মাস্টার গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বাড়িতে এসে আমাদের বিরুদ্ধে একটি সভার সিদ্ধান্তের কথা বলে যান। তিনি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, পুকুরের পানি ব্যতিত গ্রামের কোন কিছুই ব্যবহার করা যাবে না। গবাদিপশু বাইরের বাইরে বাঁধা যাবে না। গ্রামের কোন দোকানে যাওয়া যাবে না। কারও সাথে মেশা যাবে না। গ্রামের সবাইকে বলে দেয়া হয়েছে কেউ তোমাদের সাথে মিশতে আসবে না।

তিনি জানান, ছোট ভাই ছাগল নিয়ে মাঠে গেলে কামরুল মাস্টার তাকে মারতে তেড়ে আসে। সে দৌড়ে পালিয়ে নিজেকে রক্ষা করে।
ধর্ষিতার বাবা অভিযোগ করেন, সমাজপতিরা ঘটনার বিচার না করে আমাদের উপর অবিচার করলো। এখন আমরা অমানবিক জীবন যাপন করছি। কেউ আমাদের সাথে কথা বলছে না, কোথাও যেতে পারছি না। আমার আপন ভাই আমার ঘরে আসতে পারছে না, তাকে হুমকি দেয়া হয়েছে।

সমাজচ্যুতির সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে কামরুল মাস্টার বলেন, অবৈধ সম্পর্কের কারণে নবজাতকের জন্ম হয়েছে যা আমাদের সমাজের জন্য লজ্জার বিষয়। তাই ওইদিন এশা নামাজের পূর্বে স্থানীয় মসজিদ প্রাঙ্গনে উপস্থিত সবার মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। তবে মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক না থাকায় ওই পরিবারকে সাময়িকভাবে সমাজচ্যুত করা হয়েছে।

১৯ ফেব্রুয়ারি রাতের সভায় উপস্থিত ছিলেন মসজিদের ইমাম ছালেহ আহমদ পাটোয়ারী। তিনি জানান, এশার নামাজের ৫ মিনিট আগে সিএনজি চালক স্থানীয় যুবক ইস্রাফিল বিপুল আমাকে ফোন করে বলেন, মসজিদের সামনে আসেন সমাজের অনেক লোক আছে, অনাচারের বিচার না হলে আজ এশার নামাজ যথাসময়ে হবে না।

উৎসুক মানুষদের শোরগোলের পর মসজিদ কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে ফোনে আলাপ করেন এলাকার লোকজন। কিছু লোক সাময়িক সিদ্ধান্ত নিয়ে মেয়ের পরিবারকে জানিয়ে দেয়।

মসজিদের ইমাম জানান, শতাধিক উৎসুক মানুষদের উপস্থিতিতে কামাল, মাসুদ, আবু সায়েদ, ইসমাইল হোসেন টিপু, ইকবাল হোসেন মজনু, ইউছুপ, মিজানুর মিয়া, ইস্রাফিল বিপুল ছিলেন।

ইস্রাফিল বিপুল জানান, মেয়ের ভাই বিচার চেয়ে আমার কাছে সহযোগিতা চেয়েছে। কিন্তু সমাজের অন্যান্যরা আমার কথা আমলে নেন নি। পরে ইসলামী শরীয়াহ মেনে বিচার করা হয়েছে।

বিষয়টি জানতে ঢাকায় বসবাসরত মসজিদ কমিটির সভাপতি কায়কোবাদকে ফোন করা হলেও তিনি তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেননি। এসএমএস এর মাধ্যমে তিনি মোবাইল ফোনে চার্জ নেই বলে জানান।

এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন দৈনিক ফেনীকে জানান, আমি ঘটনার অবগত হবার সাথে সাথে ইউএনও ও ফুলগাজী থানার ওসিকে অবহিত করি।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কুতুব উদ্দিন জানান, সমাজচ্যুতির বিষয়ে আমাকে কেউ জানায় নি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় চেয়ারম্যানকে ফোন দিয়েছে। তাকে বলেছি, যদি এই রকম কোন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।

এর আগে গত শুক্রবার ভোরে (২৬ ফেব্রুয়ারি) ওই কিশোরীর মায়ের করা ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী একই উপজেলার বশিকপুর গ্রামের চৌকিদার বাড়ির আমিনুল ইসলামের ছেলে তৌহিদুল ইসলাম শাওন (২১) কে রাঙামাটি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুল হাসানের আদালতে ওই কিশোরীর ২২ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে ভুক্তভোগী কিশোরী। মামলায় উল্লেখ করা হয়, বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে শাওন। এতে সে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। পরে গত ১১ ফেব্রুয়ারি ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় কিশোরীটি। জন্মের তিন দিন পর দুই পরিবারের সম্মতিতে সে সন্তানকে দত্তক দেয়া হয়।