খাঁচার কথা। এটি তরুণ কবির প্রথম কবিতার বই হলেও, ফেনীর ছেলে ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ারের কাছে এটি মোটেও একটি বইয়ে সীমাবদ্ধ থাকে নি। খাঁচার কথা’য় বইটির প্রতিটি কবিতায় নানানভাবে পারিপার্শ্বিক সময়, অবস্থান এবং চরিত্রগুলোর আত্মস্বরূপ উন্মোচনের চেষ্টা করেছেন ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ার। তা না হলে তিনি ‘পাখি ভালোবেসে খাঁচা আবিষ্কারের পর পৃথিবীকে আমি স্বাধীনতার কথা বলেছি’ কিংবা ‘ নেড়ি কুকুরের গর্জনে খাঁচায় বন্দী বনরাজ/ বানর শিকারে শিম্পাঞ্জীর বংশ বাড়ে/ এক দলা মাংস পেলে যে কারো পেশিতে আগুন ধরে’ অথবা ‘এই ঘুম ঘুম সময়ে ক্ষুধা একটি রাজনৈতিক চরিত্র’- তার কবিতার ভান্ডারকে এতটা আধুনিক আর প্রতিবাদের ভাষায় তার পাঠককে উপহার দিতেন না।

হ্যাঁ, ঠিক এভাবেই শ্রম আর মেধা খরচ করে কবি ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ার এই বইটিতে যুক্ত করেছেন ৩৯টি কবিতা, যা পাঠকের ভাবনার জগতে আলোড়ন জাগাবে, আত্মোপলব্ধি তৈরি করবে- যে খাঁচা আমাদের চিন্তাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করছে তা থেকে যতদিন নিজেকে মুক্ত করতে পারবো না, ততদিন স্বল্প এই সময়ে কখনোই সে মহাসময়ের দেখা পাবে না।

বর্তমান সময় মানুষের ব্যস্ততার কারণে অনেক কিছুই পিছিয়ে যায়। না সৃষ্টি না আনন্দ, অস্থি মজ্জা জুড়ে অস্থিরতা আর শংকা। নিজ ছায়ায় বসে কবি ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ার নিজেকে চেনাতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন তার লেখার মাধ্যমে। জবানবন্দী কবিতায় তিনি লিখেন-‘ না আমি মানুষ নই, শতাব্দীর গর্ভে জন্ম নেয়া এক কেঁচো’। পাঠক তার ক্ষমতা আরো বেশি টের পাবে বলে মনে করছি, যখন খাঁচার কথা’র সব ক’টি কবিতা পড়বে, নতুনভাবে আবিষ্কার করবে অনেক কিছুকে।

বইটি সম্পর্কে লেখক বলেন, কবিতাগুলোতে আমাদের সময়, চরিত্র এবং এই সময়ে আমাদের অবস্থানটাকে উপলব্ধির চেষ্টা করেছি মাত্র। বলা যেতে পারে এই সময়টাকে কিভাবে দেখছি আর নিজেরাই কী হয়ে আছি সেটাই দেখতে এবং দেখাতে চেয়েছি। অদম্য ক্ষুধা ও লোভ-লালসা দিয়ে তৈরী যে খাঁচা, যেখানে অর্জন মাত্রই শঙ্কা। আবার এদেরও কিছু সহযোগী রয়েছে, যাদের কেউ প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করছে একান্ত বাসনায়, আবার কেউ পরোক্ষভাবে। এই পরোক্ষ শ্রেণীর আবার পাওয়ার চাইতে না পাওয়ার ব্যঞ্জনাই বেশি; এরা অদৃশ্য এই খাঁচার অস্তিত্ব টের পেলেও অদূরদর্শিতা এবং দূর্বল ধারণ ক্ষমতার কারণে প্রচণ্ড রকমভাবে আত্মসমর্পণ প্রবণ এবং এদের সংখ্যাটাই বেশি অন্তত আমাদের এই সময়টাতে।

প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা কখনো আকৃষ্ট করে নি কবি ইমতিয়াজ হাসান শাহরিয়ারকে। সময় যেদিকে নিয়ে গেছে সেদিকেই গেছেন তিনি। আর সেটা নেহাতই মোহ নয়, নিজের বিচার বিবেচনা নিয়েই। আর সেই পথ ধরে বছর দশেক আগে সিনেমা নির্মাণের পথে যাত্রা শুরুও করেছিলেন। অনেকের সাথে সহযোগি হিসেবে কাজ করেছেন, স্ক্রিপ্ট লিখছেন, আর সাহিত্যের চর্চা করে যাচ্ছেন নিয়মিত।

ইমতিয়াজ বলেন, একেকটা কবিতা বা সিনেমায় সারাজীবনের অভিজ্ঞতার ছাপ থেকে যায়, আর ভাবনা তো থাকেই। অভিজ্ঞতা আর ভাবনা মিলিয়ে একটা শিল্পরূপ দেয়া বা সৃষ্টির সময়টাকে আমি কাজের শুরু বলে বিবেচনায় আনতে চাই না বা আনা উচিৎ বলে মনে করি না।

নিজের অনুপ্রেরণার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সময়টাই বড় অনুপ্রেরণা কারণ এটাই আমাদেরকে বাধ্য করে কিছু বলার বা কিছু করার। ব্যক্তি বিশেষে বলতে গেলে আমাদের অগ্রজ সকলেই আমাদের অনুপ্রেরণা। তাঁরা পথ দেখিয়ে গেছেন, আমরা সেই পথটাকে আরো বিস্তৃত করছি।

ইমতিয়াজ হাসানের জন্ম ফেনীর ছাগলনাইয়া (সাগরনাইয়া) উপজেলার ঘোপাল ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামে। তিনি ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের ২০০৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী। বর্তমানে বসবাস করছেন ঢাকায়।

২০২১ একুশে বইমেলায় বইটি প্রকাশ হয়েছে ‘বুকিশ’ থেকে। প্রচ্ছদ করেছেন শিল্পী রাজীব দত্ত। দাম রাখা হয়েছে ১২০ টাকা। বইটি একুশে বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউটের গেটের দিকে স্টল নাম্বার ৪৩ এবং অনলাইন অর্ডার করা যাবে রকমারিতে এবং বুকিশ এর ফেসবুক পেজে।