করোনা মহামারীর ক্ষতিকর প্রভাবের কারনে সমগ্র বিশ্ব ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারিতে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ায় চাপের মুখে পড়েছে অর্থনীতি। মহামারীতে পোষাক শিল্প, চিকিৎসা সেবা, পর্যটন খাত, বিমান পরিবহন সেবা, চামড়া শিল্প বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতিতে হয়তো এর বেশ রেশ টানতে হবে কয়েক বছর যাবত। তার পরেও, করোনার প্রভাবে বিশ্বের সমগ্র অর্থনীতির চক্র ভেঙে যাবে বা ভাঙ্গন থেকে বিরত রাখা যাবে না, তা কিন্তু নয়। করোনা'র আঘাতে অর্থনীতি এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেকটা হোচট খেলেও বিভিন্ন দেশের সময়পযোগী পদক্ষেপ, কর্মতৎপরতা, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশনা, কর্মপরিকল্পনা এবং সদস্য রাষ্ট্রসমূহের তা প্রতিপালনে আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বিশ্ব অর্থনীতি এখনও একটি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়িয়ে আছে। অনেকগুলো দেশের সরকারের শক্তিশালী আর্থিক কাঠামো ও আর্থিক নীতি সম্ভবত সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে।

বর্তমান বিশ্ব বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশী ভূমিকা রাখছে গণনচীন। চীন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দুঃসময়কে কাজে লাগিয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে একটি সুউচ্চ আসনে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যা বিশ্ব মোড়ল আমেরিকার জন্য মাথা গরম করার মত কাজ। এই করোনা মহামারী এমন এক সময়ে এসেছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যে পড়ে বিশ্ব বাণিজ্য হুমকির সম্মুখীন। মুক্ত বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ গুরুতর অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছে এই মহামারীর প্রভাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে এটিই সম্ভবতঃ সবচেয়ে কঠিন অর্থনৈতিক ক্রান্তিকাল সমগ্র বিশ্বের জন্য। বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন প্রথম এবং একমাত্র দেশ যাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেমে নেই। করোনা'র আক্রমণ কে সময়পযোগী পদক্ষেপের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে বিশ্ব বাণিজ্যে অভূতপূর্ব সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে চীন। ইউরোপ-আমেরিকা, জাপানসহ উন্নত বিশ্বের এন্টিবায়টিক ঔষধের সবচেয়ে বেশী সরবরাহকারী দেশ হচ্ছে চীন। যাহা বর্তমান বাস্তবতার নিরিখে একটি অতি প্রয়োজনীয় উপাদান। যা রপ্তানী বাণিজ্যে চীনকে সহায়তা করছে। যেহেতু এমন কঠিন পরিষ্থিতিতেও চীন বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎপাদন কার্যক্রম চালু রেখেছে সে জন্য আমদানী নির্ভর দেশ সমূহের আস্থা ধরে রাখতে পেরেছে চীন।

করোনা উৎস বা এর বিস্তার বিষয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যে চীনের প্রতি সন্দেহের আঙ্গুল তা ভিন্ন বিষয়। সেন্টার ফর ইকনোমিক্স এ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ (সিইবিআর) নাম যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি বলছে, “করোনা ভাইরাস মহামারি এবং তার অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া চীনের অনুকুলে কাজ করেছে। করোনা ভাইরাস সংকট চীন যেভাবে সামাল দিয়েছে তার ফলে চীনের অর্থনীতিতে দু‘শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি আগামী বছরই জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, কিন্তু চীনের অর্থনীতিতে ২০২৫ সাল পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি ঘটবে গড়ে ৫.৭ শতাংশ করে”। এক বছর আগেও মনে করা হচ্ছিল যে অর্থনীতির আকারের দিক থেকে চীন ২০৩০ এর দশকের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়িযে যাবে (সূত্রঃ বিবিসি)। রিপোর্টটিতে আরো উল্লেখ করা হয়েছে যে, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে চীনের অংশ ২০০০ সালে ছিল ৩.৬ শতাংশ যা এখন বেড়ে ১৭.৮ শতাংশ হয়েছে। এটা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং ২০২৩ সাল নাগাদ চীন উচ্চ-আয়ের দেশে পরিণত হবে - যখন তার মাথাপিছু আয় হবে ১২,৫৩৬ ডলারের বেশি। তবে তখনও যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোর চাইতে চীনের জীবনযাত্রার মান অনেক নিচুতে থাকবে। এখন যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু আয় ৬৩,০০০ ডলারেরও বেশি।

অতিমারীকালীন প্রতিবেদনটিতে আরো উল্লেখ করা হয়, ২০৩৫ সাল নাগাদ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হবে ভারত। অন্য এশিয়ান দেশগুলোও বৃহৎ অর্থনীতিগুলোর তালিকায় ওপরের দিকে উঠে আসবে। আরো উল্লেখ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ত্যাগ সত্বেও ব্রিটেনের অর্থনীতি ভালো করতে থাকবে এবং আগামী ১৫ বছরে ১.৮ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি হবে। এদিকে, হংকংভিত্তিক ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের বিশ্ব বাণিজ্য বিভাগের প্রধান নিক ম্যারো জানান দক্ষিণ এশিয়ায় ‘পাকিস্তানের অবস্থা বেশ উদ্বেগজনক। অন্যান্য দেশের তুলনায় পাকিস্তানের সরকারি ঋণ অনেক বেশি। অন্যদিকে, মহামারীর কারণে এই বছর পাকিস্তানের জিডিপি প্রায় ১০ শতাংশ কমতে পারে।’

তবে বিভিন্ন গবেষনার ফলাফলে উঠে আসছে যে,করোনার প্রাদুর্ভাবে বিশ্বে বাণিজ্য ক্ষেত্র বিশেষে তুলনামূলক হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) প্রাক্কলন অনুসারে, এ বছর বিশ্বের পণ্য বাণিজ্য ১৩ থেকে ৩২ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। পরিস্থিতির যদি আশাব্যঞ্জক উন্নতি হয়, তা হলে ১৩ শতাংশ কমবে। কিন্তু মহামারি নিয়ন্ত্রণে না এলে তা ৩২ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে বলে জানিয়েছে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (প্রথম আলো)। সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনীতির চলতি বছরের পূর্বাভাস নিয়ে উন্নত দেশগুলোর সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি) প্রকাশিত এক হালনাগাদ প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, পরিস্থিতি যতটা খারাপ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, অবস্থার ততটা খারাপ না-ও হতে পারে। অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থাটি বলছে, কোভিড-১৯-এর প্রভাব থেকে দ্রুত পুনরুদ্ধার হওয়ায় বিশ্ব অর্থনীতি এই বছরে সাড়ে ৪ শতাংশ সংকুচিত হতে পারে। এ ছাড়া আশা প্রকাশ করা হয়েছে যে, আগামী বছর ৫ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে। কিন্তু অবস্থার উন্নতির জন্য ভবিষ্যতে অনেক অনিশ্চয়তা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক বলছেন 'এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক বাজারকে উন্মুক্ত রাখা অপরিহার্য, যা অর্থনৈতিক দৃশ্যত ও টেকসই পুনরুদ্ধারের একটি পূর্বশর্ত। বিশ্বে ন্যায়সঙ্গত এবং দ্রুত ভ্যাকসিন রোল আউট আমাদের সকলের প্রয়োজন ।"

২০২২ সালে জিডিপি বাজার বিনিময় হার বিশ্বে ২০২১ সালে ৫.১% এবং ২০২২ সালে ৩.৮% বৃদ্ধি পাবে, যা ২০২০ সালে ছিল ৩.৮% ছিল। জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেয়েছে ৩৫%, পর্যটন খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৬৩% এবং ২০২০ সালে পণ্য বাণিজ্য ৫.৩% হ্রাস পেয়েছিল। যদিও ২০২০ সালের অক্টোবরে ডব্লিউটিওর পূর্ববর্তী পূর্বাভাসে ৯.২% হবে মর্মে ধারনা করা হয়েছিল সে তুলনায় পূর্বে পূর্বাভাসের বাণিজ্য কমে যাওয়া ধারণ চেয়ে কম (সূত্রঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা)। লকডাউন এবং ভ্রমণ বিধি-নিষেধের কারণে লোকজনকে এই খাতের ব্যয়'কে অ-ব্যবসায়িক পরিষেবাসমূহ এবং পণ্যসমূহের দিকে ব্যয় স্থান্তারিত করছে। বিশ্বব্যাপী আমদানির বেশিরভাগ চাহিদা এশিয়া অঞ্চল থেকে পূরণ করা হয়, এর ফলে ২০২১ সালে রফতানি ৮.৪% বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। জীবন রক্ষাকারী ঔষুধের সব চেয়ে বেশী উৎপাদন হয় এশিয়ার বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশও দেশের চাহিদা পূরণ করে আর্ন্তজাতিক বাজারে ঔষুধ রপ্তানী করে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিষয়ে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বেশ ভালো পূর্বাভাস দিয়েছে। সংস্থাটি ধারণা, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রম গ্রহন করা হয়েছে। তাই চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) বাংলাদেশে ৬ দশমিক ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির ধারনা দেওয়া হয়েছে এই দাতা সংস্থাটি কর্তৃক। এশিয়া অঞ্চলে চীন, ভারত ও মালদ্বীপের পরই সবচেয়ে বেশী প্রবৃদ্ধি হবে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত মূলতঃ তৈরি পোশাক শিল্প এবং বৈদেশিক রেমিন্টেস এর উপর নির্ভরশীল। করোনা অতিমারীর সময়ও সরকারের সাহসিকতায় গার্মেন্টস শিল্প চালু ছিল। অন্যদিকে প্রবাসীদের আগের তুলনায় অনেক বেশী রেমিন্টেস পাঠানোর কারনে দেশের অর্থনীতির উপর খুব বেশী চাপ ছিল না। অধিকন্ত সরকারের নানাবিধ কমিটমেন্ট এবং কমপ্রচেষ্টায় দেশের শিল্প বাণিজ্য সাময়িকভাবে এই দুঃসহ সময়কে সামাল দিয়ে যাচ্ছে। মবর্ধমান করোনা'র প্রভাব আগামীতে দেশের ব্যাবসা-বাণিজ্যকে কঠিন চ্যালেঞ্জর মধ্যে ফেলে দিবে। কিন্ত খারাপ সময় সবসময় সমান ভাবে নাও যেতে পারে। যেহেতু অনেক দিন ধরে বিশ্বব্যাপী করোনা'র আক্রমণের কারনে মানুষের ফ্যাশন ও ভোগ বিলাসিতা হ্রাস পেয়েছিল তাই পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে মানুষ বেশি হারে ভোগ-বিলাসের দিকে ঝুকে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে যে সকল দেশসমূহ উৎপাদন ব্যবস্থা ধরে রাখতে পারবে তাদের দিকে রপ্তানির ক্রয়াদেশ বেশী আসার সম্ভাবনা থাকবে। পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশ কে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে হবে। চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উত্তীর্ণ হতে পারলেই সাফল্য ধরা দিবে।

করোনা'র প্রভাবে পোশাক শিল্প বাদে অন্যান্য আরো কয়েকটি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যেমনঃ চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, পর্যটন খাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র দোকানি, প্লাস্টিক শিল্প, র্নিমাণ খাত, ইলেকট্রনিক্স পন্য, প্রসাধন, বৈদ্যুতিক পণ্য, পাট সুতা, মুদ্রণ শিল্প, চিকিৎসা সরঞ্জাম, চশমা, কম্পিউটার ও যন্ত্রাংশ ইত্যাদি করোনা'র ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খেতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সরকারকে এ বিষয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোকে যেমনঃ ণোদোনা দেওয়ার প্রয়োজন তেমনি ক্ষুদ্র মাঝারিসহ দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অবদান রাখা সকল প্রতিষ্ঠানসমূহের বিষয়েও প্রণোদোনামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন। করোনা সংক্রমণের কারণে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে এবং ভবিষ্যতেও পড়বে কর্মসংস্থানের উপর। বহু মানুষ কাজ হারিয়েছে এবং শিল্প-কারখানা সহ একাধিক উৎপাদন ক্ষেত্রে কর্মী সংকোচন হয়েছে। যার ফলে বেকার হয়েছেন অসংখ্য শ্রমিক। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষ। মহিলাদের কর্মসংস্থানে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে এবং পড়বে।

বাংলাদেশের রফতানি আয়ের শতকরা ৮০ ভাগই আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে এ খাত সংকটে পড়লে দেশের সমগ্র রফতানি খাতই সংকটে পড়বে বলে আশংকা করা হয়। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খাতের পণ্য উৎপাদনের জন্য কমবেশি নির্ভর করেন চীন থেকে আনা কাঁচামাল কিংবা যন্ত্রাংশের উপর। পোষাকখাতে ৬০% কাঁচামাল আসে চীন থেকে। করোনা পরবর্তী চীন হতে আমদানীর জন্য অর্ডার করা পণ্য/মালামাল নির্দিষ্ট সময়ের র্দীঘদিন পরও নিয়ে আসা সম্ভব হয় নাই। দেশে রপ্তানী পণ্যদ্রব্যের চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ এবং উৎপাদন ব্যবস্থা শক্তিশালী না করা হলে যে কোন আপদকালীন সময়ে কঠিন অবস্থার মুখোমুখি/ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে। করোনার দীর্ঘ মেয়াদী এবং মধ্য মেয়াদী ও স্বল্প মেয়াদী ক্ষতির পরিমাণ এ মুহূর্তে হিসাব করা সম্ভব না হলেও তা অনুমান করা কঠিন হবে না। অতিমারীকাল দীর্ঘস্থায়ী হলে বেশির ভাগ ছোট-খাটো ব্যবসা এবং ক্ষুদ্র উৎপাদন প্রতিষ্ঠানসমূহের সহজেই ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব হয়ে যাবে। ফলে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ (Backward linkage) এবং ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজ (Forward linkage) চেইন ব্যবস্থা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে যার ফল সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে । এদিকে করোনাভাইরাস মহামারির প্রাদূর্ভাবে তৈরি পোশাক রপ্তানি এবং রেমিট্যান্স কমে গিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদন ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুকে বলা হয়েছে, করোনা মহামারির কারণে বিশ্বজুড়ে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমে যাওয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ্য কেরা হয়েছে যে, ২০২০ সালে প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের যে দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তার কারণ হলো বৈধ পথে অর্থ পাঠানো বৃদ্ধি, সরকারের প্রণোদনা এবং অভিবাসী কর্মীদের জমানো টাকাসহ দেশে ফিরে আসা। মহামারি থেকে দীর্ঘমেয়াদি পুনরুদ্ধারের অর্থনৈতিক পরিণতি হিসেবে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে অভ্যন্তরীণ ব্যাংক খাতের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে। বর্তমান সময়টা যেমন চ্যালেঞ্জিং,তেমন সম্ভবনাময়ও। আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করে সম্ভবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

মহামারী করোনা বিবেচনায় অর্থনীতিবিদরা বর্তমান সময়ে অর্থনীতিতে ৭টি মৌলিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করছেন। এগুলো হলো- রাজস্ব আদায়, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানো, মুদ্রার মান স্থিতিশীল ও লেনদেনের ভারসাম্য ধরে রাখা, খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণ, করোনায় প্রণোদনার সুষম বণ্টন, সার্বজনীন সামাজিক সুরক্ষা এবং সবার জন্য করোনার ভ্যাকসিন নিশ্চিত করাসহ স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত পুনর্গঠন। বাংলাদেশ এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সাফল্য দেখাতে পারলেই অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান গতি ধরে রাখা সম্ভব। এক সময় বাংলাদেশ ছিল কৃষি নির্ভর দেশ । সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমান্বয়ে কৃষির তুলনায় 'সেবা' ও 'শিল্প' খাত থেকে বাংলাদেশ বেশি পরিমানে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। ২০১৮ সালের তথ্যানুসারে 'সেবা', 'শিল্প' ও কৃষি খাতে বাংলাদেশের জিডিপি যথাক্রমে ৫২.১১; ৩৩.৬৬ এবং ১৪.২৩% (তথ্য সুত্রঃবাংলা ট্রিবিউন,তাংঃ০৪.০৪.২০১৮)। মহামারী করোনায় কৃষির উপর তেমন প্রভাব না পড়লেও আমাদের জিডিপি অন্যতম বাকী দুইটি খাত যথাক্রমেঃ সেবা ও শিল্প খাতের ঊপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। চ্যালেঞ্জ এখানেও….

লেখক :

বি.কম (সম্মান), এম.কম (হিসাব বিজ্ঞান)
মার্ষ্টাস অব ইন্টার ন্যাশনাল বিজনেস (ঢাঃবি)
এম.বি.এ (হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট)
উচ্চতর কোর্স : আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য (ফেডারেশন ইউনিভার্সিটি অব অস্ট্রেলিয়া)