স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর প্রথম কয়েকদিন শপিংমলগুলো ক্রেতাশূন্য থাকলেও বর্তমানে সেই পরিস্থিতি পুরোপুরি বদলে গেছে। ঈদের কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় পার করছেন ফেনীসহ আশেপাশের উপজেলার মানুষ। বেলা বাড়ার সাথে সাথে শপিংমল, বিপনী বিতানগুলোতে ভিড়ের পরিমাণও বাড়ছে। কোথাও কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক পড়তে দেখা গেলেও অধিকাংশ জায়গায় স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই।

গতকাল রবিবার (২ মে) সারজমিনে শহরের বিভিন্ন শপিংমল, বড় বাজার হতে শুরু করে ছোটখাটো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঘুরে দেখা যায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রেতাদের উপস্থিতিও বেড়ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন করে করোনা ভাইরাসের জন্য সবকিছু আবার বন্ধ না হলে এবার রোজার বেচাকেনা দিয়ে গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারবেন তারা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার প্রথম কয়েকদিনের তুলনায় গত দুইদিনই অনেক বেশী ভিড় দেখা গিয়েছে শপিংমলগুলোতে। গণপরিবহন খুলে দেয়া হলে সে ভিড় আরো বাড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।

আপ্যায়ন আফরোজ টাওয়ারের ব্যবসায়ী সম্রাট হোসেন বলেন, প্রথম কয়েকদিনের তুলনায় এখন অনেক বেশী ক্রেতা আসছেন। সন্ধ্যার পরের তুলনায় সকালে অধিক বেশী ক্রেতা ভিড় করেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করছি।

শহরের শহীদ হোসেন উদ্দিন বিপনী বিতানেও গেল একই চিত্র। মার্কেটের প্রথম তলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সবকটিতেই বিক্রেতারা পসরা সাজিয়েছেন। মার্কেট জুড়ে আছে ক্রেতাদের ভিড়। বেচাকেনাও কমবেশি হতে দেখা গেছে।

শহীদ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তাজুল ইসলাম ভুঞা বলেন, বিগত কয়েকদিনের তুলনায় মার্কেটে প্রচুর মানুষ ভিড় করছেন। ঈদ ঘনিয়ে আসাতে মানুষজন ভিড় করছেন বলে জানান তিনি। এছাড়াও আগামী কয়েকদিনে এই ভিড় আরও বাড়বে বলে জানান এই ব্যবসায়ী নেতা।

তিনি বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানতে আমরা গ্রাহকদের বাধ্য করছি। আমি নিজে গিয়ে সর্বদা মনিটরিং করছি। মাইকিং করা হচ্ছে। শতভাগ না হলেও ৮০ শতাংশ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেটে প্রবেশ করছেন বলে জানান তিনি।

ঈদের শপিং এ ব্যস্ত শহরবাসী কেনাকাটার জন্য হুমড়ে পড়ছেন শহরের বিপনী বিতানগুলোতে। প্রথম কয়েকদিনের তুলনায় গত ৩ দিন ধরে ব্যবসায়ীরা ভালো বেচাবিক্রি করছেন বলে জানিয়েছেন গ্র্যান্ড হক টাওয়ার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনোয়ার হোসেন শাহীন।

তিনি বলেন, বর্তমানে করোনার যে পরিস্থিতি আছে তা একটু ভালোর দিকে। মার্কেটে মানুষজনের উপস্থিতি বেড়েছে তাই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমরা ব্যবসা পরিচালনা করছি। তিনি বলেন, কোন গ্রাহক মাস্ক পড়ে না আসলে আমাদের ব্যবসায়ীরা আগে মাস্ক দিচ্ছে তারপর সেবা দিচ্ছে। ক্রেতা বাড়লেও ব্যবসায়ীরা সচেতন আছেন বলে জানান তিনি।

করোনার ভয় উপেক্ষা করে মার্কেটে আসছেন হাজার হাজার ক্রেতা। কয়েকজনের ক্রেতার সাথে কথা হলে তারা জানান বছরে ঈদে একবার কেনাকাটা করি৷ গতবার পারিনি, তাই এবার এসেছি।

শফিউল আলম নামে এক ক্রেতা বলেন, সামনে ঈদ আসছে। ছেলে মেয়েরা ঈদ মানে বুঝে নতুন জামা কাপড়। তাদের জন্য হলেও শপিং করতে আসতে হচ্ছে।

রাবেয়া নার্গিস নামে আরেকজন ক্রেতা বলেন,করোনার ভয় থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে মার্কেটে এসেছি। ঈদে কিছু কেনাকাটার তো প্রয়োজন হয়। তাই পরিবার নিয়ে কিছু জিনিস ক্রয় করতে এসেছি।

উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
শহরের গ্র্যান্ড হক টাওয়ার, শহীদ মার্কেট, এসি মার্কেট, সমবায় সুপার মার্কেট, গ্রীন টাওয়ার, নিউ মার্কেট সহ শহরের ছোটখাটো মার্কেটসহ ফেনী বড় বাজার, বিভিন্ন ব্যান্ডের শো রুম, ইনফিনিটি, জেন্টেল পার্ক, টুয়েলভ, টপ-টেন, ইজি, এপেক্স, বাটা, বে সহ বেশিরভাগ মার্কেট শোরুমে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গিয়েছে। শহরের শপিংমলগুলোর সামনে জীবাণুনাশক টানেল তো নেই ই। কিছু কিছু শপিংমলে হাত ধোয়ার জন্য বেসিন থাকলেও অধিকাংশ শপিংমলে হাত ধোয়ার সাবান-পানিও নেই। একের অধিক লোকজন একসঙ্গে হুমড়ি খেয়ে মার্কেটে প্রবেশ করছেন।

শহরের বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটে গতকাল রবিবার (২ মে ) ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। সামাজিক দূরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনও চিহ্ন ছিল না। করোনা ভীতি উপেক্ষা করে তারা ব্যস্ত ঈদ কেনাকাটায়। পছন্দের জিনিস কিনতে ক্রেতারা এক শপিংমল থেকে অন্য শপিংমলে ছুটছেন।

বিক্রেতাদের মুখে মাস্ক পরিধান ছাড়া অন্য কোনও নিয়মের বালাই দেখা যায়নি। দোকানের সামনে বজায় রাখা হচ্ছেনা শারীরিক দূরত্ব। বিক্রেতারা ব্যস্ত বিক্রি নিয়ে। ক্রেতারাও হুমড়ে মুচড়ে পড়েছেন পছন্দের জিনিস ক্রয় করতে।কিছু কিছু জায়গায় মাস্ক পড়লেও অধিকাংশ জায়গায় ক্রেতা-বিক্রেতা সঠিকভাবে মাস্ক পরছেন না। শপিংমলগুলোর প্রবেশ দ্বারে কিছু মনিটরিং থাকলেও ভেতরে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোন বালাই নেই।

তবে মার্কেটগুলোর ব্যবসায়ী সমিতি বলছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করছেন তারা। প্রয়োজনে যারা মাস্ক আনেনি তাদেরকে মাস্ক বিতরণ করে মার্কেটে প্রবেশ করানো হচ্ছে।
শহরের একটি শপিংমলের একজন ব্যবসায়ী বলেন ঈদবাজার জমজমাট হয়ে উঠেছে। মানুষজন মার্কেটে ভিড় করছেন আগের চেয়ে অনেক বেশী। তিনি বলেন, ভিড় এড়াতে মার্কেটে আসা মানুষকে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে বলছি, মাস্ক পড়তে বলছি হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিচ্ছি। কিন্তু অনেকে শুনে আবার অনেকে শুনতে চায়না।

শহরতলীর ফাহিমা আক্তার বিথী মাস্ক ছাড়া শপিং করতে এসেছেন। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, যদি আবার মার্কেট বন্ধ হয়ে যায়। তাই তাড়াহুড়া করে কেনাকাটা করতে এসেছি। মাস্ক না আনার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মাস্ক আনতে মনে ছিল না। একদিনে কি আর হবে’

তবে সচেতন রয়েছেন একাধিক ক্রেতা। ফেনী সরকারি কলেজের এক শিক্ষার্থী আয়শা হক পলি বলেন, করোনার জন্য অনলাইন থেকে শপিং করে নিয়েছি। তবে পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্য বের হতে হয়েছে। তিনি বলেন, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দাঁড়াচ্ছি। কিন্তু যখন পোশাক দেখছি তখন সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। তাই যতটুক সম্ভব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছি

জনারণ্য ফেনী বড় বাজার
শহরের অন্যান্য শপিংমলে ভিড় দেখা গেলেও সবচেয়ে বেশী ভিড় দেখা গিয়েছে ফেনী বড় বাজারে। গতকাল রবিবার (২ মে) ফেনী বড় বাজারে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়।

প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি একসাথে থাকায় এবং অন্যান্য শপিংমল থেকে অধিক সাশ্রয়ী মুল্যে পণ্য পাওয়া যায় বিধায় ফেনী বড় বাজারে মানুষজন ভিড় করছেন বেশী। বাজারের সওদাগর পট্টি, দর্জি পট্টি, কমলা পট্টি সহ কোন পট্টিতেই মানুষের তিলঠাঁই নেই।

রোজা রেখে প্রখর রোদের মধ্যে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে দাগনভুঞা উপজেলা থেকে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন সামিয়া রহমান নামে এক নারী। ফেনী বড় বাজারের বিভিন্ন পট্টিগুলো ঘুরে দেখছেন তিনি। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, বড় বাজারে ক্রয় করতে সুবিধা। সব হাতের নাগালে একসাথে পাওয়া যায়। তাই এখানে এসেছি।
তিনি বলেন, ইচ্ছা করেই বাচ্চাদের সঙ্গে করে এনেছি। তাদের পছন্দের পোশাক কেনার জন্য। প্রতি বছর রোজার শুরুতে কেনাকাটা করি। করোনার ঝুঁকি জেনেও কেনাকাটা করতে মার্কেটে এসেছি। বাচ্চাদের শখ মেটাতে অনেক কিছু করতে হয়।

ফেনী বড় বাজারের ব্যবসায়ী পায়েক চৌধুরী বলেন, প্রথম কয়েকদিন কম থাকলেও এখন মানুষের উপচে পড়া ভিড়। ঈদের জমজমাট বেচাকেনা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভালোই বিক্রি করছি। মানুষজন ও আসছে ব্যবসায়ীরা ও ভালোভাবে বেচাবিক্রি করছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক ক্রেতা স্বাস্থ্যবিধি মানছেন আবার অনেকে মানছেন না। আমরা সবাইকে মাস্ক পড়তে উৎসাহিত করছি।