চলতি বছরের জুন মাসে ফেনীতে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করলেও জুলাইয়ে এসে তা উর্ধ্বগতিতে বাড়তে শুরু করেছে । একই সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও তুলনামূলক হারে বেড়েছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১ জুলাই থেকে আজ বুধবার (৭ জুলাই) পর্যন্ত ৭ দিনে ফেনীতে মোট ১ হাজার ২৩০টি নমুনা পরীক্ষা করে ৫৫২ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। মোট নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার প্রায় ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে গত ৭ দিনে করোনা আক্রান্ত হয়ে ফেনীতে আরও ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘন্টায় ফেনীর গত ২৪ ঘন্টায় ফেনীর ১৯৪টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে যার মধ্যে ৯৮টি পজিটিভ এসেছে। নমুনা অনুপাতে শনাক্তের হার ৫০.৫১ শতাংশ। গত মঙ্গলবার ২১৯টি নুমনা পরীক্ষা করে ১২৬ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে, যা এ যাবত কালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
অন্যদিকে গত জুন মাসে ফেনীর ৩ হাজার ৪৯৯টি নমুনা পরীক্ষায় মোট ৭৩৫ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল প্রায় ২১ শতাংশ।

শনাক্তের হার বাড়ার পাশাপাশি ফেনীর সরকারি হাসপাতালগুলোতে কয়েকগুণ বেড়েছে রোগীর চাপ। চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশিরভাগেরই অক্সিজেন প্রয়োজন হচ্ছে। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ফেনীর জেনারেল হাসপাতালের পরিস্থিতি উল্লেখ করে তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ৩০ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছেন ১১১ রোগী, যাদের মধ্যে ৩৮ জন করোনা পজিটিভ। এদের মধ্যে ৮২ জনকে অক্সিজেন দেয়া হচ্ছে। আর আইসিইউতে রয়েছেন ১০ জন।

হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া ইতোপূর্বে জানান, হাসপাতালে ৪শ বেডসাইড ও ১শ মেনিফোল্ড অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। রোগীর চাপ বাড়ার কারণে চাহিদা মোতাবেক অক্সিজেন সরবরাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। চাপ আরও বাড়লে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। তবে হাসপাতালের লিক্যুইড অক্সিজেন প্ল্যান্ট চালু হলে এ সংকট থাকবে না বলে জানান তিনি।

এদিকে ফেনীর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে কোভিড-১৯ পজিটিভ ও উপসর্গজনিত রোগী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছাগলনাইয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: শিহাব উদ্দিন রানা জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ছাগলনাইয়ার ২৫ টি নমুনা পরীক্ষা করে ২১ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের হার ৮৪ শতাংশ। তিনি আরও জানান, হাসপাতালে ১০ বেডের কভিড আইসোলেশান ওয়ার্ডের বিপরীতে ২৮ জন রোগীকে সেবা দেয়া হচ্ছে। এদের মধ্যে ১০ জন পজিটিভ রোগী, যাদের প্রত্যেকের অক্সিজেন লাগছে।

পরশুরাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: আবদুল খালেক জানান, গত ২৪ ঘন্টায় পরশুরামের ৪২ টি নমুনা পরীক্ষা করে ২০ জনের করোনা শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তের হার ৪৭.৬১ শতাংশ। চারজন রোগী হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন।

দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ জুলফিকার হাসান জানান, হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে ১৬ জন রোগী ভর্তি আছেন। কারো শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা ৮৩ শতাংশ, কারো ৮৮ আবার কারো ৯০ শতাংশ। তাদের প্রত্যেকের অক্সিজেন লাগছে। আমাদের যে সক্ষমতা তাতে একদিন পর পরই কুমিল্লা-চট্টগ্রাম পাঠিয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিল করে এনেও কুলাতে পারছি না।

ফুলগাজী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোজাম্মেল হক সোহেল বলেন, কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ একা ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠান এর পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। দেশের প্রতিটি নাগরিকের সচেতনতা আর সহযোগিতা ছাড়া কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ সম্ভবপর নয়।

অন্যদিকে ফেনীতে দ্রুতগতিতে অক্সিজেনের চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবসায়ী রানা ট্রেডার্সের মালিক রানা। তিনি জানান, গত বছর করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শুরুতে মানুষ অতি উচ্চ মূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনলেও রিফিল হয়েছে কম। কিন্তু চলতি বছর রিফিল বোতলের চাহিদা গত বছরের চেয়ে তিনগুণ বেড়েছে। এভাবে চাহিদা বাড়তে থাকলে অক্সিজেন সংকট দেখা দিতে পারে।