ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন ঘোপাল ইউপিস্থ মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় হাজী মোঃ মোস্তাফা গংদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মোঃ বেলায়েত হোসেন বেলাল বাদী হয়ে ছাগলনাইয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ঘোপাল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান চেয়ারম্যান বাড়ীর মৃত সফি উল্যাহর ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাজী মোঃ মোস্তাফা, মৃত আহাম্মদ হোসেনের ছেলে সাহাব উদ্দিন ও মোঃ শাহাজাহান, মৃত আবু আহাম্মদের ছেলে মশিউল আলম মাসুদ এবং মোঃ মোস্তফা ছেলে রাসেল একত্রিত হয়ে মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের গেইট প্রাঙ্গনে বিদ্যালয়ের যে সম্পত্তি রয়েছে তা দখলের চেষ্টা করে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিবাদীগনের সাথে যোগাযোগ করে বাঁধা দিলেও তা আমলে নেয়নি হাজী মোঃ মোস্তফা গংরা। উল্লেখ্য, হাজী মোঃ মোস্তফা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা।

বিবাদীগন প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে ও মুক্তিযোদ্ধার নাম ভাঙ্গিয়ে গত ৮ জুলাই সকাল ১০ টায় মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের উদ্দেশ্যে দোকান নির্মান কাজ শুরু করে। পরবর্তীতে ঘোপাল তদন্ত কেন্দ্রের পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে উপস্থিত বিবাদীরা পালিয়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে কাজ করতে বাঁধা দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। ঐ সময় বিবাদীদের এমন আচার-আচরণ দেখে স্কুল শিক্ষক সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, অভিযোগকারী ও স্বাক্ষীগণ অনেকটা নিরাপত্তাহীনতা ভুগছে। বিবাদীপক্ষ ভূমি দখলের বিষয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করেছে বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মাজহারুল ইসলাম জানান, এটি স্কুলের সম্পত্তি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি না। তারপরও তারা দখলের চেষ্টা করছে। কাজ করতে বাধা দিলে তা তোয়াক্কা না করে কাজ শুরু করেন।

এ বিষয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোস্তফা জানান, আমি মুহুরীগঞ্জ স্কুলের জায়গা দখল করিনি। জায়গাটি সরকারি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের জায়গা। সে জায়গায় ছালে আহাম্মদ নামক এক ব্যক্তি একটি দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করত। আমি ছালে আহমেদের নিকট থেকে ২০১৭ সালে জায়গাটি ক্রয় করেছি। সরকারি জায়গা আপনি ব্যক্তির নিকট থেকে কিভাবে ক্রয় করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ব্যক্তির নিকট থেকে জায়গাটি ক্রয় করলেও ২০১৮ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ থেকে জায়গাটি লিজ নেয়ার জন্য আবেদন করেছি। গত কয়েক বছর ঐ দোকানঘরের ভাড়া আমি নিয়েছি। দোকানঘরের ভাড়াটিয়া ঘরটি মেরামত করার দাবি জানালে আমি কাজ শুরু করি। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোস্তফার দাবি, মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের জায়গা দখলের নামে আমার বিরুদ্ধে বেলাল নামক ব্যক্তি যে ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ করেছে তার মূল কারণ হলো, বেলাল আমার জায়গা দখল করে একটি কোম্পানির নিকট বিক্রি করায় আমি তার বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছিলাম। সেই মামলার প্রতিশোধ নিতে সে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটি করেছে।

মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি ও ঘোপাল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এফএম আজিজুল হক মানিক জানান, এটি কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় স্কুলের জয়গা ঘেষা সরকারি জয়গা। সরকার চাই এ জায়গা স্কুল কর্তৃপক্ষ ছেড়ে দিতে হবে তার মুহূর্ত পর্যন্ত এ জায়গা স্কুলের কাজে ব্যবহার করা যাবে। এ জায়গা মোস্তফা গংরা দখল করতে মরিয়ে হয়ে পড়েছে উল্লেখ্য করে ইউপি চেয়ারম্যান মানিক বলেন, তারা বহুকাল আগ থেকে এমন অন্যায় করে আসছে।

ছাগলনাইয়া থানার অফিসার ইনচার্জ শহীদুল ইসলাম বলেন, শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বিবাদীদের কাগজপত্র দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ও ছাগলনাইয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজিয়া তাহের জানান, আপাতত ঐ জায়গায় কাজ বন্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছি। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

ছাগলনাইয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী বলেন, মুহুরীগঞ্জ স্কুলের সামনের জায়গাটি দখল করার প্রচেষ্টা করছে বলে জেনেছি। তিনি বলেন,
শুধু মুহুরীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নয় উপজেলার যেকোন স্কুলের জায়গা যারা দখল করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হবে।