ছাগলনাইয়ায় করোনাকালীন সময়ে দীর্ঘ দেড় বছর ধরে উপজেলার সকল স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ থাকাকালীন সময়ে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বক্তারা।
সভায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ আল মমিন বলেন, করোনাকালীন দেড় বছর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উপজেলার মোট ৫২টি মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল ও মাদ্রাসার ৮ম থেকে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রীদের মাঝে ৩ শতাংশের বাল্য বিয়ে দিয়েছেন অভিভাবকরা। তিনি বলেন, এসময়ে শুধুমাত্র পাঠাননগর অগ্রণী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেনীর ১০জন ছাত্রীর মধ্যে ৩ জনের বিয়ে হয়ে গেছে।
বিভিন্ন এলাকার বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাজে নিয়োজিত কাজীদের গাফেলতি ও অভিভাবকদের অসচেতনাকে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন বক্তারা।
পাঠাননগর ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েল তার বক্তব্যে বাল্য বিয়ে বৃদ্ধির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, অভিভাবকরা দেশের প্রচলিত আইনের তোয়াক্কা না করে ইসলাম ধর্মে মেয়েদের বিবাহের বিষয়ে কোন বয়সসীমা নির্ধারণ নেই দাবি করে অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে। তিনি বলেন, যদি প্রতিটি অভিভাবক ও মসজিদের ইমাম এবং সকল এলাকায় বিবাহ রেজিস্ট্রারের কাজে নিয়োজিত কাজীরা দেশের আইন অনুযায়ী মেয়েদের বিয়ে কার্য সম্পাদন করে তবে বাল্য বিবাহ অনেকাংশে রোধ হবে।
যুগান্তর পত্রিকার ছাগলনাইয়া উপজেলা প্রতিনিধি নুরুজ্জামান সুমন তার বক্তব্যে বাল্য বিবাহ বন্ধ হচ্ছেনা উল্লেখ্য করে বলেন, বাল্য বিয়ে সম্পাদনে কাজীদের গাফলতি অনেকাংশে দায়ি। তিনি অভিযোগ করেন, অধিকাংশ কাজী বিবাহ অনুষ্ঠানে নিকাহ রেজিস্ট্রারের মূল নথিতে বর ও কনের তথ্য না তুলে আলাদা একটি কাগজে নোট করেন। পরে কনে প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর মূল নথিতে বর কনের তথ্য নথিভূক্ত করেন। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তিনি।
তবে উপজেলার ৮নং রাধানগর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হক চৌধুরী মাহবুব তার বক্তব্যে দাবি করেন, ছাগলনাইয়ায় পুর্বের তুলনায় বাল্য বিয়ের হার অনেকাংশে কমেছে। তার মতে বাল্য বিবাহ শতভাগ রোধ করা সম্ভব নয়।

এ বিষয়ে উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোমেনা বেগম বলেন, শুধু ছাগলনাইয়ায় নয় সারাদেশে বাল্য বিয়ে বেড়েছে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে অভিভাবকগণ গোপনে ঘরোয়া পরিবেশে অপ্রাপ্ত বয়স্ক স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্রীদের বিবাহের কাজ সম্পাদন করেছে। উক্ত সময়ে অভিযোগের প্রেক্ষিতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৩টি বাল্য বিয়ে বন্ধ করা হয়েছে এবং অভিভাবকদের জরিমানা করা হয়েছে বলেও জানান মোমেনা বেগম।


আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভার প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল বলেন, করোনাকালীন সময়ে ছাগলনাইয়ায় যেসব শিক্ষার্থীদের বাল্য বিবাহ হয়েছে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের পড়ালেখা মুখী করতে হবে। এসময় তিনি আরো বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে পাঠদান কর্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একই সাথে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে আনতে বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান সোহেল চৌধুরী।
সভায় গত রবিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দৈনিক ফেনী পত্রিকায় প্রকাশিত বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় ছাগলনাইয়া উপজেলায় বহুমুখী দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তিনটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সাইক্লোন সেন্টার-কাম-বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ কাজের অবহেলার বিষয়টি উত্থাপিত হয়। প্রকল্পের কাজগুলো দ্রুত সমাপ্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান উপজেলা চেয়ারম্যান সোহেল চৌধুরী। এছাড়াও মাদক, কিশোর গ্যাং, পৌর এলাকার ময়লা আবর্জনা অপসারণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ ও জন্ম নিবন্ধন সনদ সংশোধনীর বিষয়ে সহজ পদ্ধতি গ্রহণের প্রস্তাব উত্থাপন করা হয়।
উপজেলা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হোমায়রা ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র এম মোস্তফা, উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান এনামুল হক মজুমদার, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান বিবি জুলেখা শিল্পী, থানার পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত কাজী রফিক আহমেদসহ উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্যরা।