১৪ জানুয়ারী, ২০২০ ।। নিজস্ব প্রতিবেদক ।।

নতুন বইয়ের সাথে ভাগ্য বদলেছে ফেনীর বই বাইন্ডারদের। প্রত্যেক বাইন্ডারের কাছে ভীড় করছে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। তীব্র কাজের চাপে গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে বাইন্ডারদের। বই প্রতি দশ টাকা করে পাচ্ছেন, খুব তারা খুশি।


শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে বাইন্ডাররা বই বাঁধাইয়ের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। ফেনী শহরের বড় মসজিদ রোড এ কাজের জন্য প্রসিদ্ধ। এখানে কাজ করছেন নুরুন্নবী, দুলাল, ইকবাল, বাদশা, মামুনসহ কাগজ ও স্টেশনারি ব্যবসায়ীরা।


বড় মসজিদ রোডে বাঁধাইয়ের কাজ করেন বাইন্ডার নুরুন্নবী, নবী ভাই নামে সমাধিক পরিচিত। তিনি জানান, বছরের শুরুতে নতুন বই দেয়ার পর বই বাঁধাইয়ের খুব চাপ তৈরী হয়। সবাই এসে দ্রুত ডেলিভারী নিতে চায়, ফলে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। তিনি জানান, বছরের প্রথম দুই মাস কাজের খুব চাপ থাকে। এরপর ধীরে ধীরে তা কমতে থাকে। গত বছর তিনি প্রায় ২৫ হাজার বই বাঁধাইয়ের করেছেন বলে জানান।


জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এ বছর ফেনীর ৬টি উপজেলায় প্রাথমিক, ইবতেদায়ি, মাধ্যমিক, দাখিল ও কারিগরি বিদ্যালয়ের ৪ লাখ ৪ হাজার ৬শ ২৩ জন শিক্ষার্থীর মাঝে ৩৩ লাখ ২৬ হাজার ৬শ ৫১টি পাঠ্যবই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।


একই রোডে বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন ইকবাল। একজন ভালো বাইন্ডার হিসেবে যশ থাকলেও এ পেশা পরিবর্তন করেছেন পাঁচ বছর আগে। তবে বছরের শুরুতে নতুন বই এলে তিনমাস বই বাঁধায়ের কাজ করেন। তিনি জানান, নতুন বছর এলে লাভজনক কাজটি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করতে পারি। অল্প সময়ে বেশী আয় করা যায় তাই জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস বই বাঁধাই করি। তিনি আরও জানান, প্রাথমিক শ্রেণির বই বাঁধাইয়ের কাজ আমাদের কাছে বেশি আসে। দুই মাসে তিনি ১০ হাজারের বেশী বই বাঁধাই করে এক লক্ষ টাকার বেশি আয় করেন বলে তিনি জানান।


কাগজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাদিয়া এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী নুরুল হুদা জানান, একসময় বাঁধাইয়ের প্রয়োজনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছিল। সারাবছর আমরা বই, খাতা বাঁধাইয়ের কাজ চালিয়ে নিতাম। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে বেতনভূক্ত একাধিক বাইন্ডার ছিল। এখন বাজার ছোট হয়ে গেছে, বাইন্ডাররা আলাদাভাবে নিজেদের ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে মাঠ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় বড় মসজিদ রোডে রাহাত এন্টারপ্রাইজ, নোমান পেপার, রুমী পেপারসহ শহরে একাধিক প্রতিষ্ঠান বই বাঁধাইয়ের করছে।


কাগজ ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত সোহেল। তিনি জানান, সকলে নতুন বই বাইরে বাঁধাই করে না। অনেকে নিজেদের বই নিজেরাই বাঁধাই করে থাকে। বছরের শুরুতে আমাদের ক্র্যাপ কাগজ, বই বাঁধার সুতো, সুঁই ইত্যাদি বিক্রির পরিমাণ বেড়ে যায়। আগে বিক্রির পরিমাণ বেশি থাকলেও, ইদানীং তা কমে গেছে।


শহরের শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে হোসেনীয়া লাইব্রেরীর সামনে সাময়িকভাবে বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন চৌধুরী ও রমজান নামে দুইজন বাইন্ডার। রাজাঝির দিঘীর পাড়ে বই মার্কেটের সামনে কাজ করছেন দুলাল, রতন ও সাহাবউদ্দিন। এরা সবাই ভাসমান বাইন্ডার, স্থায়ী দোকান কোন নেই। দুলাল বলেন, বছরের শুরুতে যে পরিমাণ কাজ থাকে তাতে আমার দুই লক্ষ টাকা আয় হয়। সারাবছর খাতা বাঁধাই করে চলি।


এছাড়াও শহরের রেলগেটে বাইন্ডিং কাজ করছেন ইছহাক ও বাবলু, শান্তি কোম্পানী রোডের মাথায় ফাতেমা লাইব্রেরী, জিএ একাডেমী স্কুলের সামনে আরও তিনজন বাইন্ডার কাজ বই বাঁধাইয়ের কাজ করছেন।


বড় মসজিদ রোডে বাদশা একজন প্রবীন বাইন্ডার। ছেলে মামুন রয়েছেন বাবার সাথে, দ্রুত সেবা দিতে তিনি ছেলেকে কিছুদিনের জন্য বই বাইন্ডিং কাজে যুক্ত করেছেন। তিনি জানান, সারাবছরে ২০ হতে ২৫ হাজার বই বাঁধতে পারেন তবে নতুন বই বাঁধাইয়ের কাজ বেশী। সহজ কাজ তাই লাভও অনেক বেশী। তিনি আরও জানান, শহরের প্রায় সকল স্কুলের সামনে ভাসমান বাইন্ডার রয়েছে। তারা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাস নতুন বই বাঁধাইয়ের কাজ করে থাকে।


ভাসমান বাইন্ডারদের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বাদশা বলেন, এরা জেলার বাইরে থেকে এসে আমাদের কাজ বাগিয়ে নেয়। তিনি বলেন, আমার সারা বছর ফেনী মানুষদের কাজ করি। অথচ নতুন বই বাঁধাইয়ের সময় হলে এরা আমাদের আর্থিক ক্ষতি করে।