চীনের চলমান করোনা ভাইরাস সংকটের প্রভাব পড়েছে দেশের ফল বাজারে। এর প্রভাবে ফেনীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে ফলের দাম লাগামহীন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ফলভেদে প্রতি কেজিতে খুচরা বাজারে দাম বেড়েছে ৪০ হতে ৮০ টাকা। আমদানিকারক সূত্রে জানা যায়, চীন হতে ফল আমদানি এ মুহূর্তে বন্ধ থাকার ফলে দেশের ফল বাজারে বিপর্যয়ের সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।


ফেনীর সর্ববৃহৎ মহিপালের ফল আড়ত ব্যবসায়ীর সমিতির আহ্বায়ক আবদুল মতিন জানান, করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ফল বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে। চায়না হতে হানি ফুজি আপেল, ক্রাউন আপেল, গালা আপেল, লুগাম কমলা, ছোট কমলা, নাশপাতি প্রভৃতি ফল আমদানি করা হত। করোনা ভাইরাসের কারণে ফল আমদানি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে সৃষ্টি হয়েছে এ সংকটের।


মহিপাল আড়তের ফাইভ স্টার ফুড এজেন্সীর মালিক ও ফল আমদানিকারক মোঃ খুরশিদ আলম জানান, জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে চীনের ফল বাজারে বার্ষিক ১৫ দিনের ছুটি ছিল। এর পরপরই চীনে করোনা ভাইরাসের প্রভাব দেখা দেয়। ফলে দীর্ঘসময় ধরে চীন হতে ফল আসছেনা। বাজারে ফলের দাম এ কারণে বেড়ে চলেছে। তিনি জানান, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ১০দিন পর দেশের ফল বাজার চায়না ফল শূন্য হয়ে যাবে।


হাজী নজির আহমেদ গ্রুপের চেয়ারম্যান নুর উদ্দিন বলেন, আমাদের কোল্ড স্টোরেজে গত ২৫ দিন ধরে কোন চায়না ফল সংরক্ষণের জন্য আসেনি। তিনি জানান, আমাদের গ্রাহকদের মাধ্যমে জানতে পারি চীন হতে কোন ফলই দেশে আমদানি হচ্ছে না।


ফল বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগে চায়না হানি ফুজি আপেলের ২০ কেজির কার্টন বিক্রি হচ্ছিল ১৪৫০ টাকা দরে। সপ্তাহের ব্যবধানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৫০ টাকায়। খুচরা বাজারে প্রতিকেজি বিক্রি করা হত ১১০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে ক্রাউন আপেলের ২০ কেজির কার্টন বিক্রি করা হত ১৪৫০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৪৫০ টাকায়। গালা আপেল ২০ কেজির কার্টন বিক্রি হত ২১০০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ টাকায়। ছোট চায়না কমলার ১০ কেজির কার্টন বিক্রি হত ৮০০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকায়। নাশপাতি ৯ কেজির কার্টন বিক্রি হত ৯০০ টাকায়, বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১২০০ টাকায়।


চায়না ফলের পাশাপাশি বাজারে অন্যান্য ফলের দামও একই সাথে বেড়েছে। মাল্টা মিশরীয় ফল হলেও এক সপ্তাহ আগে ১০ কেজির কার্টন বিক্রি হত ১৩৫০ টাকায়, বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০ টাকায়।


ফেনী মহিপালের ফল ব্যবসায়ী সাহাব উদ্দিন জানান, কালো আঙ্গুর আজ বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ২৬০ টাকা ছিল। ট্রাংক রোডের ফল ব্যবসায়ী সাদ্দাম হোসেন জানান, ডালিমের দাম কেজি প্রতি ৫০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। উল্লেখ্য, আঙ্গুল এবং ডালিম দুটো ফলই ভারত হতে আমদানি করা হয়।


ফল ক্রেতা তোফায়েল আহমেদ মিলন বলেন, ফলের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলে তা ক্রমশ আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।


ভারত হতে ফল আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান মৌসুমী ফল বিতানের মালিক রিপন জানান, ভারতে ফলের দাম বেড়ে যাওয়া আমাদের দেশেও এর প্রভাব পড়েছে। চায়না ফল দাম বাড়ার সাথে ভারতের দাম বাড়ার সম্পর্ক নেই। বাজারে সম্ভাব্য ফল সংকট নিরসনে ভারত হতে ফল আমদানির বিষয়ে রিপন জানান, বাজারে চাহিদা থাকলে ফল আসবে। যখন যে দরে ফল কেনা হবে, সে হিসেবে ফল বাজারে বিক্রি করা হবে।