জুলাই গণহত্যার দায়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সর্বোচ্চ সাজা পেয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। দণ্ডিত হয়েছেন রাজসাক্ষী হওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও। তবে, মৃত্যুদণ্ড হওয়ায় কিছুটা অখুশি হাসিনা-কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এ রায়ে কষ্ট পেয়েছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ ঐতিহাসিক এ মামলার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা জানান।
আইনানুযায়ী রায় ঘোষণার পর ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করতে হয়। এক্ষেত্রে পলাতক আসামিকে অবশ্যই আত্মসমর্পণ বা গ্রেপ্তার হতে হবে। নয়তো আপিলের সুযোগ হারাতে হয়। স্টেট ডিফেন্স আইনজীবীদেরও কোনো এখতিয়ার নেই। ফলে, পলাতক থাকায় শেখ হাসিনা-কামালও হারাচ্ছেন এ সুযোগ। আর এজন্যই কষ্টের কথা জানান দিলেন তাদের হয়ে আইনি লড়াই করা সরকারি খরচে নিয়োগ পাওয়া আইনজীবী আমির হোসেন।
এই আইনজীবী বলেন, আমার ক্লায়েন্টের (হাসিনা-কামাল) বিরুদ্ধে রায়টা ভিন্নভাবে হলেও হতে পারতো, কিন্তু হয়নি। এটা আমার বিপক্ষে গেছে। এজন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি। কারণ আমার পক্ষে এ মামলায় কোনো আপিল করার সুযোগ নেই, অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আত্মসমর্পণ না করবেন কিংবা গ্রেপ্তার হবেন।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এজলাসে ওঠেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। ঠিক দুই মিনিট পর মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানানো হয়। এরপর ১২টা ৪০ মিনিট থেকে ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের প্রথম অংশ পড়া শুরু করেন বিচারিক প্যানেলের সদস্য মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। তার পড়া শেষে শুরু করেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ। সবশেষ পড়েন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার।
দুই ঘণ্টা ১০ মিনিটের সংক্ষিপ্ত রায় পড়া শেষে দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে প্রথমেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল। আলাদা অভিযোগে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের পাশাপাশি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আসাদুজ্জামান খান কামালও পান মৃত্যুদণ্ডের সাজা।
তবে, রাজসাক্ষী হয়ে সত্য উদঘাটন তথা বিচারকাজে সহায়তা করায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল-১। হাসিনা-কামাল পলাতক থাকলেও গ্রেপ্তার রয়েছেন মামুন।
এদিন সকাল ৯টা ১০ মিনিটের পর কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।
শেখ হাসিনার এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়। আর ৯ কার্যদিনে চলে প্রসিকিউশন-স্টেট ডিফেন্সের যুক্তিতর্ক-পাল্টা যুক্তিখণ্ডন। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্য এবং চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের তারিখ নির্ধারণে সময় দেওয়া হয়।
হাসিনা-কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। এর মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো।
