আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফেনীর তিনটি আসনে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেছে বিএনপি। দীর্ঘ সময় পর নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস দেখা গেছে। তবে ব্যতিক্রম রয়েছে ফেনী-২ আসনে, যেখানে কাঙ্খিত প্রার্থী না পেয়ে জেলা বিএনপির প্রথমসারির নেতাকর্মীদের চাপা ক্ষোভে ভাটা পড়েছে উচ্ছ্বাসের চিত্রে।
স্থানীয় একাধিক নেতাকর্মী জানান, এবার ফেনীর তিনটি আসনেই দলের একাধিক নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। সম্প্রতি তাদের সঙ্গে ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে মতবিনিময় করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। মনোনয়নে ফেনী-১ ও ফেনী-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী নিয়ে নেতাকর্মীরা উচ্ছ্বাসিত। তবে ফেনী-২ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে বিগত সরকারের সময়ে মামলা-হামলা, ত্যাগী ও মাঠের কর্মীদের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি বলে হতাশা প্রকাশ করছেন জেলা বিএনপির শীর্ষপর্যায়ের একাধিক নেতা। গতকাল মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কাছে মৌখিকভাবে জানিয়েছে জেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা।

জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক গাজী হাবিব উল্লাহ মানিক দৈনিক ফেনীকে বলেন, ফেনী-২ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যদি বিগত সরকারের সময়ে মামলা-হামলার শিকার ও মাঠের কর্মীদের মধ্যে যে কাউকে বিবেচনা করা হতো তাহলে আমাদের কোন দ্বিমত থাকতো না। কিন্তু এখানে যারা গা বাঁচিয়ে চলেছে, তারা এখন পুরস্কার পায়। আমরা ফেনী-২ আসনে রিভিউ চাই। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক টিমের কাছে মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে।

জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, ফেনী-১ আসনে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রার্থীতার ঘোষণায় যে আনন্দ-উচ্ছ্বাস, সেদিক থেকে ফেনী-২ আসন একপ্রকার শ্মশানঘাট হয়ে গেছে। প্রত্যাশা করেছিলাম আমরা যারা ১৭ বছর অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছি, শতাধিক মামলার আসামি ও নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি তাদের মধ্যে কাউকে দল মনোয়নয়ন দেবে। দলের হাইকমান্ডের কাছে আমরা এ সিদ্ধান্তের রিভিউর আবেদন করছি। আমরা আশাকরি দল এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবে।

তবে, ফেনী-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপিকে স্বাগত জানিয়ে গতকাল রাতে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক এস এম কায়সার এলিনের নেতৃত্বে একটি মিছিল করতে দেখা গেছে। দলের এমন সিদ্ধান্তে সন্তুষ্টির কথা বলেছেন পৌর বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া।

এসব ব্যাপারে জানতে ফেনী-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া মেলেনি। তার দুই সন্তান একাধিকবার ফোন রিসিভ করলেও তাদের বাবা ব্যস্ত রয়েছেন বলে জানান।

অন্যদিকে, ফেনী-১ ও ফেনী-৩ আসনে দলীয় প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়ে একাধিক স্থানে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গতকাল সকালে ছাগলনাইয়া উপজেলা ও পৌর বিএনপি আয়োজিত একটি মিছিল কলেজ রোড থেকে বের হয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক ও ফেনী-১ সংসদীয় আসনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক রফিকুল আলম মজনু, বিএনপির গ্রাম সরকার বিষয়ক সহ-সম্পাদক বেলাল আহমেদ, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল, ছাগলনাইয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুর আহাম্মদ মজুমদার, সদস্য সচিব আলমগীর বিএ, যুগ্ম আহ্বায়ক কপিল উদ্দিন সরকার, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক ইউছুফ মজুমদারসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিন বিকেলে ফুলগাজীতে ফেনী-১ আসনের প্রার্থী দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পৈত্রিক বাড়ির সামনে থেকে একটি মিছিল বের করা হয়। এসময় রফিকুল আলম মজনু বলেন, অতীতের চেয়ে বেশি ভোটের ব্যবধানে খালেদা জিয়াকে জয়ী করতে আমরা কাজ করব। স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের দেওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করা হবে।

আনন্দ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন-জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব নঈম উল্লাহ চৌধুরী বরাত, ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ফখরুল আলম স্বপন, যুগ্ম আহবায়ক মাস্টার আবুল কালাম, মাস্টার আবুল খায়ের, মো. শহীদুল্লাহ মজুমদার, সিরাজুল ইসলাম মন্টু, আক্তারুজ্জামান আজিম, খালেদা জিয়ার চাচাতো ভাই জাহিদ মজুমদার প্রমুখ। দলের চেয়ারপারসন প্রার্থী হওয়ার খবরে পৃথকভাবে ফুলগাজী উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম রসুল মজুমদার গোলাপের নেতৃত্বে আনন্দ মিছিল করেন তার অনুসারীরা।

একইভাবে ফেনী-৩ আসনের দলীয় প্রার্থীকে স্বাগত জানিয়ে দাগনভূঞা ও সোনাগাজীতে আনন্দ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

এর আগে সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ফেনীর তিনটি আসনে প্রার্থীদের নামের প্রাথমিক তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে ফেনী-১ আসনে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ফেনী-২ আসনে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন ভিপি ও ফেনী-৩ আসনে দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়।