বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি ফেনী ইউনিটে আজীবন সদস্যের সংখ্যা অল্প সময়ের ব্যবধানে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ৫ আগস্টের আগে সদস্য সংখ্যা ছিল ৮৪৫। এখন তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৫০ জনে। বিশেষ করে, গত দুইমাসে আজীবন সদস্যপদ গ্রহণে রেকর্ড পরিমাণ আবেদন লক্ষ্য করা গেছে।
গতকাল সোমবার (২০ অক্টোবর) ছিল জেলা কমিটি নির্বাচনে ভোটার হওয়ার সুযোগের শেষ দিন। শেষ মুহূর্তে সদস্য হতে ফরম নিতে গিয়ে অনেকে ফিরে গেছেন। অনেকেই আবেদন ফরম না পেয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং এতে ইউনিট কার্যালয়ে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ফেনী রেড ক্রিসেন্টের নির্বাচন। এর আগে ২৯ অক্টোবর ঘোষণা হবে নির্বাচনের তফসিল। সংগঠনের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আজীবন সদস্যরাই ভোট দিতে পারবেন। এই কারণেই হঠাৎ করে সদস্যপদ নিতে আগ্রহ বেড়েছে। একাধিক সূত্র জানায়, সাধারণ মানুষের তুলনায় রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আজীবন সদস্য হওয়ার আগ্রহ অনেক বেশি। আজীবন সদস্যের কেউ কেউ মনে করছেন, কার্যকরি কমিটির নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে সদস্য বাড়ানো হচ্ছে। অনেকেরই সদস্য হতে দিতে হচ্ছে না টাকা, আবেদন ফি সরবরাহ করছেন অন্য কেউ। দপ্তরটির ফেনী কার্যালয় সূত্র জানায়, রেড ক্রিসেন্টের মূল কাজ হলো-বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে (যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, অগ্নিকাণ্ড) ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা, স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি, রক্ত সংগ্রহ, প্রাথমিক চিকিৎসা প্রশিক্ষণ এবং স্বাস্থ্য ও জনসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা।
একাধিক সূত্র বলছেন, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির এসব সমাজসেবা কর্মযজ্ঞে প্রত্যক্ষ থাকার সুযোগ হলে ব্যক্তিগত টাকা খরচ না করেও মানুষের পাশে থাকার সুযোগ রয়েছে। একইসাথে সমাজে এ কমিটির দৃঢ় গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। ফলে নির্বাচনে জয় নিশ্চিতে নিজেদের মতো করে ভোটার করার প্রকট প্রবণতা দেখা গেছে।
আজীবন সদস্য হতে ফুলগাজী থেকে আসা মো. টিপু অভিযোগ করে বলেন, ফরম নিতে এসে সহকারী পরিচালক জানালেন, ফরম শেষ। বিষয়টি এডহক কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান জিয়াউদ্দিন মিস্টারকে অবহিত করা হয়েছে।
গতকাল আজীবন সদস্য হতে ফরম না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান ক্রীড়া সংগঠক হাসান শাহরিয়ার। তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল ভোটাধিকারসহ আবেদনের শেষদিনে রেডক্রিসেন্ট দপ্তরে গেলে ফরম নেই বলে জানানো হয়। আমি সদস্য হতে চাই, ফরম না থাকা কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতা। এ দায় আমি মেনে নিতে রাজি নই।
এ বিষয়ে ফেনী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৫টা পর্যন্ত ফরম ছিল। সোমবার সকাল থেকে ফরম নেই। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও ভাইস চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। সোমবার দুপুরে ১০০টি ফরমের জন্য চালান জমা দেওয়া হয়েছে, তবে কবে আসবে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। দুই সপ্তাহ আগে ৫০০টি ফরম দেওয়া হয়েছিল, আর ৫ আগস্টের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৮৬০টি ফরম বিক্রি হয়েছে। তিনি আরও জানান, চলতি বছর চব্বিশের ভয়াবহ বন্যায় রেড ক্রিসেন্টের উদ্যোগে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্বাসন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে অর্থ আসে রেড ক্রিসেন্টের ফান্ড এবং দেশি-বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অনুদান থেকে।
ফেনী রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের এক নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদস্য জানান, ২০২৪ সালে একমাত্র একজন আজীবন সদস্য হয়েছিলেন। অথচ ২০২৫ সালে শত শত মানুষ হঠাৎ করে আজীবন সদস্য হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এ বছর যেন হঠাৎ করেই সবাই সদস্য হতে মরিয়া।
আবেদন ফরম না থাকা এবং অস্বাভাবিক সদস্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে রেড ক্রিসেন্ট ফেনী ইউনিটের এডহক কমিটির সেক্রেটারি মেজবাহ উদ্দিন সাঈদ বলেন, দীর্ঘ বছর এটি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল এখন সুযোগ তৈরি হওয়ায় আগ্রহীরা আজীবন সদস্য হচ্ছে। গতকাল বিকেলে শুনেছি আবেদন ফরম সংকটের কথা। কেন্দ্রীয় দপ্তরে কথা বলেছি, আরও একশো প্রেরণ করবে তারা। তিনি বলেন, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। যারা নতুন সদস্য হচ্ছেন তাদের মানবতায় দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে।
হঠাৎ আজীবন সদস্য বেড়ে যাওয়ার কারণ প্রসঙ্গে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি বলেন, অন্যদের মতো আমিও একজন আজীবন সদস্য। আরও কারা সদস্য হচ্ছেন তা জানা নেই।