বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত ও চিকিৎসা খাতের বৈষম্য দূর করতে চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল ফেনী জেলায় স্থাপনের দাবিতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথে নেমেছেন রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাধারণ মানুষ। হাসপাতাল স্থাপনের এই আন্দোলন এখন রূপ নিয়েছে সর্বজনীন এক ঐক্যবন্ধনে। অন্যদিকে দল-মতের বিভেদ ভুলে এমন রাজনৈতিক নেতাদের এমন কর্মকাণ্ড ইতিবাচক বলছেন সাধারণ মানুষ।
এ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ বাহার দৈনিক ফেনীকে বলেন, দলমতের ঊর্ধ্বে গিয়ে সকলে একই প্ল্যাটফর্মে আসা অত্যন্ত ইতিবাচক। অন্তত ফেনীবাসীর স্বার্থ রক্ষায় এমন কিছু দরকার ছিল। আগামীতেও আমরা এমন সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব প্রদর্শন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহিম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মার্চ ফর গাজা ও চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমরা সকলে একত্রিত হয়েছি। এটি দেশীয় রাজনীতিতে একটি মাইলফলক। দেশের রাজনৈতিক গুণগত পরিবর্তনেও এমন ঐক্যবদ্ধ আচরণ ভূমিকা রাখবে।
একই প্রসঙ্গে কথা হয় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ফেনী জেলার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মুফতি একরামুল হক ভূঞার সঙ্গে। তিনি বলেন, বৃহৎ স্বার্থে আমরা সকলে একত্রিত হয়েছি। আমাদের দাবি আদায়ে আগামীতেও যৌথ কর্মসূচি চালিয়ে নেব। ইতোমধ্যে এসব দাবি আদায়ে রাজধানীতে কর্মসূচি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেখানে সকল রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক শাহ ওয়ালী উল্লাহ মানিক দৈনিক ফেনীকে বলেন, বিগত ১৭ বছর দেশে দুঃশাসন ছিল। মানুষ চাইলেও কথা বলতে পারেনি। ২৪-এ ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। এখন মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলছে, ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরাও ফেনীবাসীর স্বার্থ রক্ষায় সকল দলমত ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। বিষয়টি অত্যান্ত ইতিবাচক।
এদিকে চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য ১০০০ শয্যার বিশেষায়িত একটি হাসপাতাল ফেনীতে স্থাপনের দাবিতে মানববন্ধন করেছে সর্বস্তরের জনগণ। গতকাল শনিবার (১৯ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে শহরের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে ফেনীর সচেতন নাগরিক সমাজের ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন খানের সভাপতিত্বে ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আবদুল আজিজের সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তব্য দেন- জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার, যুগ্ম আহবায়ক এয়াকুব নবী, জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুহাম্মদ আবদুর রহিম, প্রচার সম্পাদক আ.ন.ম আবদুর রহীম, হেফাজতে ইসলামের সেক্রেটারি মাওলানা ওমর ফারুক, জেলা ইসলামী আন্দোলনের সেক্রেটারি একরামুল হক ভূঁইয়া, খেলাফত মজলিসের সভাপতি মোজাফফর আহমদ, এবি পার্টির সদস্য সচিব ফজলুল হক, ডিবিসি নিউজের প্রতিনিধি মুহাম্মদ আবু তাহের ভূঁইয়া, ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি মোহাম্মদ শাহাদাত হোসেন, দৈনিক ফেনী সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী, সময় টেলিভিশনের সিনিয়র সহযোগী রিপোর্টার আতিয়া সজল, ড্যাব ফেনীর সাধারণ সম্পাদক ডা. মোবারক হোসেন দুলাল, এনডিএফ সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন, জাতীয় নাগরিক কমিটির সংগঠক শাহ ওয়ালী উল্লাহ মানিক, অ্যাডভোকেট মনসুর আবদুল্লাহ, স্টার লাইন গ্রুপের পরিচালক মাইন উদ্দিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুম সোহাগ, জেলা কলেজ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোরশেদ আলম, জেলা প্রাইভেট হাসপাতাল-ডায়াগনস্টিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোতালেব হুমায়ুন, ফেনী কেন্দ্রীয় বড় জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ আবদুল্লাহ, দৈনিক ফেনীর সময় সাহিত্য সম্পাদক বকুল আকতার দরিয়া, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠক ওসমান গণি রাসেল প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ফেনী উন্নয়নের সবদিক থেকে অবহেলিত। বিগত সরকারের সময়েও খালেদা জিয়ার জেলা আখ্যায়িত করে ফেনীকে বঞ্চিত করা হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে প্রবাসী অধ্যুষিত এ জেলা গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি মেডিকেল কলেজ কিংবা কোনো বিশেষায়িত হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
তারা আরও বলেন, বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঢাকা-চট্টগ্রাম অথবা পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। এতে সময় ও অর্থ দুটোই অপচয় হয়। পাশাপাশি অনেক সময় দূরত্বের কারণে প্রাণহানিও ঘটে। ফেনী এ অঞ্চলের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত, যেখানে যাতায়াত ব্যবস্থাও ভালো। আশপাশের জেলার লোকজনও সহজেই এখানে এসে চিকিৎসা নিতে পারবে। ১০০০ শয্যার বিশেষায়িত হাসপাতালটি ফেনীতে স্থাপন করা হলে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবায় ইতিবাচক বিপ্লব ঘটবে।
মানববন্ধনে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার বলেন, শুধু একটি রাজনৈতিক দল ব্যতীত অন্য সকলে আমরা এ দাবিতে ঐক্যমত হয়েছি। এ জনপদ দীর্ঘ সময় বৈষম্যের শিকার। চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য বিশেষায়িত হাসপাতালটি ফেনীতে করা গেলে বৃহৎ জনগোষ্ঠী উপকৃত হবে। এজন্য ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছি। দাবি আদায়ে আগামীতে ঢাকাতেও কর্মসূচি পালনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।