ফেনীর নিরাপত্তা ও পরিবেশ : বল্লামুখা বাঁধ, মুহুরী প্রজেক্ট, ইপিজেড, সেনা বিগ্রেড, বিমানবন্দর ও অন্যান্য প্রসঙ্গ
ফেনী, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা, যা ভূ-রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। ভৌগোলিক ও অবস্থানগত কারণে ফেনী জেলার নিরাপত্তা ও পরিবেশ ইস্যুগুলো দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে কিছু পদক্ষেপ ও উন্নয়ন প্রকল্প যদি না নেয়া হয় তাহলে সম্ভাবনাময় এই জেলাটিকে নিরাপদ ও বাসযোগ্য করে তোলার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসবে।
তাই ফেনীর সম্ভাবনাগুলোকে কাজে লাগাতে নিম্নোক্ত পদক্ষেপ ও উন্নয়ন প্রকল্প সময় ক্ষেপন না করে দ্রুত সময়ে নেয়া জরুরি।
১. পরশুরামের বল্লামুখা বাঁধ নির্মাণ :
২০২৪ সালের ভয়াবহ বন্যা আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছে, প্রকৃতির সঙ্গে অসচেতন আচরণের পরিণতি কতটা ভয়ংকর হতে পারে। দেশের বহু অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়েছিল, জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে যায় এবং কৃষি, বসতবাড়ি, রাস্তাঘাট সহ প্রায় সবখানেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই ধরনের দুর্যোগ থেকে ভবিষ্যতে রক্ষা পেতে আমাদের জরুরি কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। তার মধ্যে অন্যতম হলো — পরশুরামের বল্লামুখা এলাকায় একটি শক্তিশালী ও পরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ।
পরশুরামের বল্লামুখা অঞ্চল ভৌগোলিকভাবে এমন এক জায়গায় অবস্থিত, যেখানকার নদীগুলোর স্রোত বর্ষাকালে অত্যন্ত প্রবল হয়ে ওঠে এবং তা আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে দেয়। বিশেষ করে টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢলের কারণে পানির উচ্চতা দ্রুত বাড়ে এবং তা কোনো বাধাহীনভাবে নিচু অঞ্চলে নেমে এসে বন্যা সৃষ্টি করে। যদি এই স্থানে একটি বাঁধ নির্মাণ করা যায়, তাহলে জলধারণ ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বন্যা পরিস্থিতি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
কিন্তু বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হলেও কোন এক অদৃশ্য কারণে নির্মাণ কাজ আবার বন্ধ হয়ে আছে। তাই দ্রত সময়ের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে —আমরা কি বারবার বন্যার শিকার হবো, না কি এখনই বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের ভবিষ্যৎ রক্ষা করবো?
সুতরাং, ২০২৪ সালের মতো ভয়াবহ বন্যা যাতে পুনরায় না ঘটে, তার জন্য পরশুরামের বল্লামুখা এলাকায় বাঁধ নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। এটি আর বিলম্ব করা যাবে না। সরকার, স্থানীয় প্রশাসন এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি সুপরিকল্পিত প্রকল্প গ্রহণ করা হলে, ভবিষ্যতে এমন দুর্যোগ থেকে অনেকাংশে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে।
২. সোনাগাজীতে মুহুরী প্রজেক্ট ও স্লুইস গেট নির্মাণ:
বাংলাদেশ একটি নদীমাতৃক দেশ। এই দেশের জনজীবন ও অর্থনীতি নদীনির্ভর হলেও, অনেক সময় নদীর অপরিকল্পিত প্রবাহ মানুষের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে সঠিক পানি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে বন্যা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা এবং চাষাবাদে বিপর্যয় দেখা দেয়। ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা ঠিক এমন একটি এলাকা যেখানে পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘমেয়াদী ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। এ কারণে সোনাগাজীতে মুহুরী প্রজেক্ট এবং আধুনিক স্লুইস গেট পুনঃনির্মাণ সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে।
মুহুরী নদী সোনাগাজীর জীবনে এক আশীর্বাদ হলেও, বর্ষা মৌসুমে এই নদীর তীব্র স্রোত আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করে দেয়। অন্যদিকে, শুষ্ক মৌসুমে পানির ঘাটতি এবং লবণাক্ততা কৃষি উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই দুই বিপরীতধর্মী সমস্যার কার্যকর সমাধান হলো একটি পরিকল্পিত মুহুরী প্রজেক্ট ও স্লুইস গেট নির্মাণ। স্লুইস গেটের মাধ্যমে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে, যা বর্ষায় বন্যা প্রতিরোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে সেচের জন্য পানি সংরক্ষণের সুযোগ করে দেবে।
এছাড়া, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা নিয়ন্ত্রণে স্লুইস গেট অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। যদি সঠিক সময় পানি প্রবেশ ও নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা যায়, তবে মিষ্টি পানির আধিক্য বজায় রেখে কৃষির উন্নয়ন সম্ভব। এতে করে সোনাগাজীর কৃষকরা নিরাপদে ধান, সবজি, মাছচাষসহ বিভিন্ন অর্থকরী ফসল উৎপাদন করতে পারবেন।
মুহুরী প্রজেক্টের আওতায় নদী ব্যবস্থাপনা, চর উন্নয়ন, মাটি সংরক্ষণ এবং কৃষির উন্নয়নের মতো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এটি শুধু কৃষি নয়, বরং স্থানীয় পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
সোনাগাজীর সার্বিক উন্নয়নের জন্য মুহুরী প্রজেক্ট এবং আধুনিক স্লুইস গেট নির্মাণ এখন আর বিলম্ব করার মতো বিষয় নয়। এটি শুধু একটি প্রকৌশলগত প্রকল্প নয়, বরং স্থানীয় জনজীবন ও অর্থনীতিকে রক্ষা করার এক মহা উদ্যোগ। সঠিক পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই প্রজেক্ট সোনাগাজীর মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিপুল অবদান রাখতে পারে। তাই এটি বাস্তবায়ন করা অতীব জরুরি ও অপরিহার্য।
৩. ফেনীর নিরাপত্তা রক্ষায় সেনা বিগ্রেড স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত ফেনী জেলা ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। চট্টগ্রাম ও ঢাকার মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকা এই জেলা শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য নয়, বরং সীমান্তবর্তী অঞ্চলের নিরাপত্তার দিক দিয়েও অত্যন্ত স্পর্শকাতর। ভারতীয় সীমান্তের সন্নিকটে অবস্থিত হওয়ায় এখানে প্রায়শই সীমান্ত উত্তেজনা, অনুপ্রবেশ, চোরাচালান ও অন্যান্য নিরাপত্তা হুমকির সৃষ্টি হয়। এসব বিবেচনায়, ফেনীতে একটি পূর্ণাঙ্গ সেনা বিগ্রেড স্থাপন করা এখন সময়ের চাহিদা ও জাতীয় নিরাপত্তার অপরিহার্য অংশ।
বর্তমানে ফেনীতে কোনো স্থায়ী সেনা ঘাঁটি বা বিগ্রেড নেই, ফলে যে কোনো জরুরি মুহূর্তে সামরিক সহায়তা পেতে সময় লাগে এবং পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয় না। অথচ ফেনী এমন এক জেলা যেখানে সীমান্ত সুরক্ষা, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণ তৎপরতা, আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানাতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সেনা বিগ্রেড স্থাপন করলে এর সম্ভাব্য সুফলগুলো হলো—
সীমান্ত নিরাপত্তা: ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় সীমান্ত চোরাচালান, অবৈধ অনুপ্রবেশ ও সংঘর্ষের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।
দ্রুত প্রতিক্রিয়া সক্ষমতা: প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা কোনো অভ্যন্তরীণ সংকটকালে সেনাবাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা করতে পারবে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহযোগিতা: বড় কোনো সামাজিক অস্থিরতা বা সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী পুলিশের সাথে সমন্বয়ে কাজ করতে পারবে।
আঞ্চলিক উন্নয়ন: একটি সেনা বিগ্রেড স্থাপনের মাধ্যমে এলাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়বে।
ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব: কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে সেনা ঘাঁটি স্থাপন দেশকে আঞ্চলিক নিরাপত্তায় শক্তিশালী করবে।
বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী 'ফোর্সেস গোল ২০৩০'–এর আওতায় দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলে সামরিক উপস্থিতি জোরদার করছে। এই প্রেক্ষাপটে ফেনীর মতো কৌশলগত ও ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সেনা বিগ্রেড স্থাপন করা অত্যন্ত যৌক্তিক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হবে।
৪. ফেনীতে বিমানবন্দর পুনরায় চালুর প্রাসঙিকতা:
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের একটি সম্ভাবনাময় জেলা হলো ফেনী। ভৌগোলিক অবস্থান, ব্যবসায়িক সম্ভাবনা, এবং অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) স্থাপনসহ নানাবিধ কারণে ফেনী দ্রুত অগ্রসরমান একটি জনপদে পরিণত হচ্ছে। কিন্তু যোগাযোগ ব্যবস্থার দিক থেকে বিশেষ করে আকাশপথে ফেনী এখনও পিছিয়ে রয়েছে। একসময় ফেনীতে একটি বিমানবন্দর থাকলেও বর্তমানে তা অচল অবস্থায় রয়েছে। দেশের সার্বিক উন্নয়ন এবং ফেনীর কৌশলগত গুরুত্ব বিবেচনায় ফেনী বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা এখন সময়ের দাবি।
নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা দৃষ্টিকোণ:
ফেনী জেলার অবস্থান ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা হওয়ায় এর কৌশলগত গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এ এলাকায় দ্রুত প্রতিক্রিয়া সম্পন্ন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য একটি সক্রিয় বিমানবন্দর অপরিহার্য। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সীমান্ত সুরক্ষা, এবং জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য ফেনীতে বিমানবন্দর থাকা অত্যন্ত জরুরি।
উন্নয়ন ও ইপিজেড-সংযুক্ত যোগাযোগ:
ফেনীতে অর্থনৈতিক অঞ্চল (ইপিজেড) ও শিল্পাঞ্চল দ্রুত গড়ে উঠছে। বিদেশি বিনিয়োগ, মালামাল আমদানি-রপ্তানি, এবং ব্যবসায়িক যোগাযোগের জন্য উন্নত ও দ্রুতগতির পরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য। ফেনীতে একটি সক্রিয় বিমানবন্দর থাকলে ব্যবসায়ীরা ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য অংশ এবং আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সহজে যাতায়াত করতে পারবেন। এতে ফেনীর অর্থনীতি নতুন মাত্রা পাবে।
ব্যবসা সম্প্রসারণ ও কর্মসংস্থান:
বিমানবন্দর চালু হলে ফেনীতে ব্যবসা ও পর্যটনের প্রসার ঘটবে। ব্যবসায়িক পণ্য পরিবহন সহজ হবে, ফলে উৎপাদন ব্যয় কমবে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় সুবিধা পাওয়া যাবে। তাছাড়া বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে হোটেল, পরিবহন, লজিস্টিকস, এবং সেবামূলক খাতে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে, যা স্থানীয় জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা ও আঞ্চলিক সংযুক্তি:
চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার মাঝখানে অবস্থিত হওয়ায় ফেনী হয়ে উঠতে পারে একটি আঞ্চলিক ট্রানজিট হাব। এখানকার বিমানবন্দরটি যদি আধুনিকীকরণ করে পুনরায় চালু করা হয়, তবে তা শুধু ফেনীর নয়, বরং পার্শ্ববর্তী জেলার মানুষ এবং ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোরও উপকারে আসবে।
ফেনীর সার্বিক উন্নয়ন, নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি। তার মধ্যে অন্যতম হলো — ফেনী বিমানবন্দর পুনরায় চালু করা। এটি শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থা নয়, বরং সামগ্রিক উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তাই এখনই সময় ফেনীর ঘুমিয়ে থাকা এই সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা এবং বিমানবন্দরটি আধুনিক সুবিধা সংবলিত করে পুনরায় কার্যকর করার।
৫. সোনাগাজী ইপিজেডের নিরাপত্তা ও পরিবেশবান্ধবকরণ:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বিকাশে রপ্তানিমুখী শিল্পাঞ্চল (ইপিজেড) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। সোনাগাজী-মিরসরাই ইপিজেড এই ধারার একটি প্রতীকী উদ্যোগ, যা দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে সক্ষম। তবে এই ইপিজেডের কার্যকারিতা এবং দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের জন্য নিরাপত্তা, বিদেশি আধিপত্য থেকে মুক্তি এবং পরিবেশবান্ধব নীতিমালার বাস্তবায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ক. নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারকরণ:
১. প্রযুক্তিনির্ভর নজরদারি: সিসিটিভি, ড্রোন, স্মার্ট সেন্সর ও কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার ব্যবহার করে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে।
২. স্থানীয় নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ: আধুনিক নিরাপত্তা হুমকির বিপরীতে কার্যকর প্রতিরোধের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও উপযুক্ত যন্ত্রপাতি সরবরাহ প্রয়োজন।
৩. শ্রমিকদের নিরাপত্তা: ইপিজেডে কর্মরত শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় আইনানুগ পদক্ষেপ নিশ্চিত করতে হবে।
খ. আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তি:
১. স্বাধীন নীতিনির্ধারণ: বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে এবং একচেটিয়া নির্ভরতা এড়াতে বহুপাক্ষিক বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে।
২. স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ: স্থানীয় উদ্যোক্তা ও প্রযুক্তিকে এগিয়ে নিতে সরকারকে সহযোগিতা বাড়াতে হবে।
৩. কূটনৈতিক ভারসাম্য: প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে নীতি গ্রহণ করতে হবে।
গ. পরিবেশবান্ধব করণের পদক্ষেপ:
১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনা: ইপিজেড থেকে নির্গত বর্জ্য ও দূষণ নিয়ন্ত্রণে আধুনিক বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
২. সবুজ প্রযুক্তির ব্যবহার: উৎপাদনে জ্বালানি দক্ষ ও কম কার্বন নির্গমনকারী প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
৩. বনায়ন ও জলাভূমি সংরক্ষণ: ইপিজেড অঞ্চলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানো, জলাভূমি সংরক্ষণ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করতে হবে।
সোনাগাজী-মিরসরাই ইপিজেড কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতীক নয়, এটি ভবিষ্যতের জন্য টেকসই শিল্প ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের একটি মডেল হতে পারে। নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, ভারতীয় আধিপত্য থেকে মুক্ত থাকা এবং পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে এই ইপিজেডকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করা সম্ভব।
লেখক
নির্বাহী পরিচালক
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স এন্ড ডেভেলপমেন্ট - সিজিডি