আজ বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। পৃথিবী রক্ষার অঙ্গীকারে দিনটি পালিত হলেও ফেনী শহরের বাস্তব চিত্র ঠিক উল্টো। শহরে প্লাস্টিক বর্জ্যে এখন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। এসব বর্জ্যের বড় অংশই গিয়ে জমছে শহরের খালগুলোতে, ফলে খালগুলো এখন মৃতপ্রায়।
জানা গেছে, ফেনী শহরের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি খালের মধ্যে দাউদপুর, দমদমা, পাগলিছড়া, পিটিআই ও খাজা আহাম্মদ লেক অন্যতম। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, খালগুলোর মধ্যে কয়েকটি খালের অস্তিত্ব বিলীনের পথে। যেগুলো আছে সেগুলো এখন আর পানি প্রবাহের জায়গা নয় বরং প্লাস্টিক বোতল, পলিথিন, খাবারের প্যাকেটসহ বিভিন্ন বর্জ্যেভর্তি একেকটি ময়লার ভাগাড়ে রূপ নিয়েছে। এসবের ফলে জলাবদ্ধতা, দুর্গন্ধ ও মশার উপদ্রব শহরবাসীর নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে।
ফেনী পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, শহরে প্রতিদিন প্রায় ৭০ থেকে ৭৫ টন বর্জ্য উৎপন্ন হচ্ছে। তবে এর মধ্যে কতটুকু পচনশীল এবং কতটুকু অপচনশীল, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। পৌরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্লাস্টিক-পলিথিনের বর্জ্যগুলোকে সংরক্ষণ করে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে কেটে বর্জ্যগুলোকে শ্রেণিবদ্ধ করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
এদিকে খালগুলো রক্ষা ও সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছেন শহরবাসী। তারা বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই ফেনী শহরে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়, তা প্রতিরোধ করা সম্ভব যদি খালগুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হয়। তারা আরও বলেন, এসব খাল শুধু পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমই নয় বরং শহরের পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। তাই দেরি না করে এখনই কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
শহরের দাউদপুল এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা নুর নবী বলেন, দাউদপুল খালটি দেখে এখন বোঝার উপায় নেই এটি আদৌ একটি খাল, নাকি ময়লার ভাগাড়। খালের চারপাশে যত্রতত্র বর্জ্য ফেলা হচ্ছে, ফলে এটি মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এবং এখানকার বাসিন্দারা নানান ধরনের দুর্ভোগে পড়ছেন। আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যার সমাধান চেয়ে আসছি, কিন্তু এখনো কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা শাহজাহান কবির বলেন, খালটির বর্তমান অবস্থা আমাদের জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আশপাশের বাসিন্দারা প্রতিনিয়ত দুর্গন্ধে ভুগছেন। প্লাস্টিক ও পলিথিন বর্জ্যের কারণে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়, ফলে ময়লার পানি জমে গিয়ে চারপাশে দুর্গন্ধ ছড়ায়।
শহরের ডাক্তার পাড়ার বাসিন্দা সফিকুর রহমান বলেন, একসময় ফেনী শহরে বেশ কয়েকটি খাল ছিল, যেগুলো দখল ও দূষণের কারণে আজ প্রায় হারিয়ে গেছে। এখন এসব খালের অবস্থার দিকে তাকালে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো খাল ছিল। ডাক্তারপাড়া এলাকায়ও খাল ছিল, যা এখন দখল দূষণে অস্তিত্বহীন। এগুলো পরিষ্কারের ক্ষেত্রেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ যদি এই বিষয়গুলোতে আন্তরিক হয় তাহলে একটি জনগোষ্ঠী রক্ষা পাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশেরও ভারসাম্য নিশ্চিত হবে।
সামাজিক সংগঠক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, ফেনী শহরে একসময় বেশ কয়েকটি খাল ছিল, কিন্তু এখন সেগুলোর অধিকাংশই দখল ও দূষণের ফলে প্রায় বিলীন হয়ে গেছে। যে কয়েকটি খাল এখনো কোনোভাবে টিকে আছে, সেগুলোর অবস্থাও খুবই করুণ। এসব খাল প্লাস্টিক, পলিথিনসহ নানা ধরনের বর্জ্যে ভরে গেছে। খালগুলোর স্বাভাবিক পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে পুরো শহরের পরিবেশ ও বাসিন্দাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায়।
পরিবেশ অধিদপ্তর ফেনীর উপপরিচালক মোসাম্মৎ শওকত আরা কলি দৈনিক ফেনীকে বলেন, সাধারণ মানুষের সচেতনতার অভাবেই খালে প্লাস্টিক ও পলিথিন ফেলা হচ্ছে যার ফলে খালগুলো মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, খাল সংরক্ষণ বা পরিষ্কার করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের নয় এটি মূলত পৌরসভার আওতাভুক্ত কাজ। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্লাস্টিক ও পলিথিন ব্যবহার রোধে ভূমিকা রাখতে পারে।
এ ব্যাপারে ফেনী পৌরসভার প্রশাসক গোলাম মো. বাতেন দৈনিক ফেনীকে বলেন, শহরের খালগুলো প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে দূষণের শিকার হচ্ছে। তবে এর মধ্যে মানবসৃষ্ট কারণই সবচেয়ে বড়। তিনি বলেন, খালগুলোতে কচুরিপানা, প্লাস্টিক-পলিথিনসহ বিভিন্ন বর্জ্য জমে থাকছে, যা পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় খালগুলো সংরক্ষণ ও পরিষ্কারের জন্য পৌরসভা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বাস্তবায়ন করা হবে। ইতোমধ্যে কয়েকটি খাল পরিষ্কার করা হয়েছে এবং বাকিগুলোর পরিষ্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।