মাদককারবারিকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক ফেনীর সাংবাদিদের বিরুদ্ধে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও মামলার বাদী ফুলগাজী উপজেলার আমজাদহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়েছে। গতকাল রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে ফেনী প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) ব্যানারে এ আয়োজন করা হয়েছে।
সভায় বক্তারা বলেন, আত্মস্বীকৃত একজন অপরাধীর বিরুদ্ধে সবধরনের প্রমাণ থাকলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তার বিরুদ্ধে এখনো কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য এর আগে জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিল। সেই সময় শেষ হলেও অপরাধী এখনো স্বাচ্ছন্দ্যে বাইরে ঘুরছে। বিষয়টি গণমাধ্যমের জন্য উদ্বেগজনক। সভায় আত্মস্বীকৃত মাদককারবারি রহিম উল্ল্যাহসহ যারা বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের মামলা দিয়ে হেনস্তা করেছে, সংবাদ প্রকাশ করায় মারধর করে তাদের বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা।
সভায় জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এয়াকুব নবী বলেন, সাংবাদিকরাই পারে দেশকে ঠিক রাখতে।অপরাধীরা তাদের স্বার্থে দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে। অভিযুক্ত রহিম উল্ল্যাহ আমাদের দলের কেউ নয়। দলীয় কেউ এমন কাজ করলে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন ব্যবস্থা নেবে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রহিম বলেন, সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে। কোন নির্দিষ্ট দলের লেজুড়বৃত্তি করা যাবে না। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে তাদের বিরুদ্ধে কোন দলের কেউই কিছু করতে সাহস পাবে না।
বক্তব্যে প্রবীণ সাংবাদিক আবু তাহের বলেন, আমরা ঐক্যদ্ধ থাকলে কেউ আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। প্রভাবশালীদের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অনেকে খারাপ কাজ করছে। এসব বিষয়ে দলীয়ভাবেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এজন্য আমাদের মধ্যে একতা বজায় রাখতে হবে।
ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন, প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন অতিদ্রুত ব্যবস্থা নেবে। তবে আমরা আমাদের কর্মসূচি থেকে সরে যাইনি। সাংবাদিকদের যারা হেনস্তা করছে তাদের বিরুদ্ধে যদি ব্যবস্থা না নেওয়া হয় আমরা আগামীতে কঠোর কর্মসূচি দেব। সাংবাদিকদের সুদিন বা দুর্দিন নেই। আঘাত আসলে আমরা একসাথে থেকে প্রতিবাদ করব।
সভায় দৈনিক ফেনীর সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী বলেন, সংবাদটি দৈনিক ফেনীর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ। রহিম উল্ল্যাহ এ সংবাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু তার আত্মস্বীকৃত কথার কারণে আলোচনায় এসেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য এ তথ্য দেওয়া প্রয়োজন ছিল। দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক ও ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি তারেক চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে মামলাটি করেছেন। এটিও ছিল তাদের একটি কৌশল। তারা গণমাধ্যমকে চাপে রাখার জন্য এমন মামলাগুলো করেন। এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ চক্রের কাজ তাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেন কেউ কথা বলতে সাহস না পায় সেজন্য কাজ করা। যারা এসব কাজে নিজেদের দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে তাদের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত দেওয়ার দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর। আর ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের।
আরটিভির প্রতিনিধি আজাদ মালদার বলেন, সাংবাদিকদের সুরক্ষার জন্য কমিটি গঠন করা উচিত। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে সাংবাদিকরা সংবাদ করবে, আর সেই প্রেক্ষিতে তারা মনের মত করে মামলা করবে তা হতে পারেনা। পুলিশ সুপার এ ঘটনা জানেনা এটি তিনি কিভাবে বললেন। জেলার সকল খবর তার সাথে সাথে জানা উচিত। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে সাংবাদিকদের নামে মামলা করে এ সাহস তারা কিভাবে পায়। বিচারকও সেই মামলা গ্রহণ করে। অতিদ্রুত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় সাংবাদিকরা কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে।
বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম (বিএমএসএফ) কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক জসিম মাহমুদ বলেন, ঐক্যবদ্ধতাই পারে আমাদের সুরক্ষিত রাখতে।প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দেবেনা। আমাদের নিজের নিরাপত্তা নিজেদের নিশ্চিত করতে হবে। এ মামলা প্রত্যাহার ও বাদীর বিরুদ্ধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা না নিলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
ফেনী প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি একেএম আব্দুর রহিমের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফ'র ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এবিএম নিজাম উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন, জেলা মহিলা দলের সহÑসভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস, দৈনিক সুপ্রভাত পত্রিকার সম্পাদক ফিরোজ আলম, সাপ্তাহিক স্বদেশপত্রের সম্পাদক এনএন জীবন, আমার দেশের প্রতিনিধি এসএম ইউছুপ আলী, ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সহ-সভাপতি মাইন উদ্দিন, সাপ্তাহিক ফেনীর গৌরবের সম্পাদক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, ফেনী রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক ও এটিএন নিউজের জেলা প্রতিনিধি দিদারুল আলম, সাপ্তাহিক ফেনীর রবির নির্বাহী সম্পাদক নজির আহমদ রতন, দৈনিক বাংলাদেশ খবরের জেলা প্রতিনিধি এম এমরান পাটোয়ারী, দীপ্ত টিভির জেলা প্রতিনিধি আবদুল্লাহ আল মামুন, ইয়ুথ জার্নালিস্ট ফোরাম ফেনীর সভাপতি শাহজালাল ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান হাজারী ডালিম, দৈনিক নিরপেক্ষ পত্রিকার প্রতিনিধি সৈয়দ মনির, দৈনিক মুক্ত খবরের জেলা প্রতিনিধি মাসুম বিল্লাহ ভূঁইয়া, ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক দুলাল তালুকদার, দৈনিক সমকালে ইমাম হাসান কচি, দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক মো. মোর্শেদ প্রমুখ।
সভায় বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাসহ বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে কর্মরত সাংবাদিকরা অংশ নেন।
এর আগে গত বুধবার (২৩ এপ্রিল) ইউপি সদস্য রহিম উল্ল্যাহ বাদী হয়ে ঢাকা পোস্টের জেলা প্রতিনিধি ও দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তারেক চৌধুরীকে এক নম্বর আসামি করে ফেনী আদালতে এ মামলা করেন। পরে আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে (ডিবি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মামলায় আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে দৈনিক ফেনী পত্রিকার সম্পাদক আরিফুল আমিন রিজভী, দৈনিক ফেনীর রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে মামুনুর রহমানকে, ঢাকা পোস্টের রিপোর্টার হিসেবে দেখানো হয়েছে জামশেদ আলম অনিক ও ওমর ফারুখ নামে দুজনকে।মামলার এজাহারে নিজেকে জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী ও আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের ইউপি সদস্য উল্লেখ করে তাকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন মাদককারবারি রহিম উল্ল্যাহ।
উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ‘সীমান্তে চোরাচালানের সাম্রাজ্যে ইউপি সদস্য, বললেন ব্যবসা এটি’ শিরোনামে মাদক কারবার, চোরাচালান ও মানবপাচার চক্র নিয়ে অনুসন্ধানী সংবাদ প্রকাশ করে দৈনিক ফেনী ও ঢাকা পোস্ট। এতে মাদককারবারি হিসেবে ফুলগাজী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও বিএনপিকর্মী রহিম উল্ল্যাহসহ বেশ কয়েকজনের নাম ওঠে আসে।
