নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা ও উৎপাদনকারী উভয়পক্ষের সচেতনতা এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, সরকারি কর্মকর্তা ও অংশীজনরা। তারা বলেছেন, খাদ্যে ভেজাল ও অতিরিক্ত রাসায়নিক ব্যবহারের ফলে জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে সচেতনতা, প্রশিক্ষণ এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।

সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য (যুগ্ম সচিব) এ এন এম নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, আমরা ক্ষতির কথা জানি, তবুও সচেতন হই না। মানুষ ভালো খাবারের জন্য দাম দিতে প্রস্তুত, তাই খাবারের মানে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। উৎপাদনস্থল থেকেই নজরদারি বাড়াতে হবে।

জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন, খাদ্যে ভেজাল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। গরুতে ইনজেকশন, মুরগিতে ওষুধ, সবজিতে অতিরিক্ত ফরমালিন ব্যবহার মানুষের স্বাস্থ্যকে হুমকির মুখে ফেলছে। তিনি লাইসেন্সবিহীন হোটেল ও রেস্তোরাঁর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেন এবং খাদ্য নিরাপত্তায় স্থানীয় প্রশিক্ষণ, সচেতনতামূলক প্রচার ও শিক্ষাকার্যক্রম জোরদারের ওপর জোর দেন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সিনিয়র কনসালটেন্ট মো. আইয়ুব হোসেন বলেন, খাবার নিরাপদ রাখতে হলে রেস্তোরাঁগুলোতে পোড়া তেল, অতিরিক্ত সুগন্ধি ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। একই পানি বারবার ব্যবহার করাও স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। তিনি পথখাবার বিক্রির ক্ষেত্রেও বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন।


সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ রুবাইয়াত বিন করিম বলেন, দেশে বছরে প্রায় ২০ থেকে ৩০ লাখ মানুষ ডায়রিয়া ও আমাশয়ে আক্রান্ত হয়, যার বড় অংশ খাদ্যজনিত। খাদ্য প্রস্তুত, সংরক্ষণ ও পরিবেশনের প্রতিটি ধাপে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়, প্রয়োজন ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। অথচ আমাদের দেশে মেয়াদ পরিবর্তন করে প্রতারণা করা হয়। এসব প্রতিরোধে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

হোটেল রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবছার কবির শাহজাদা বলেন, অনেক কর্মচারী অল্প শিক্ষিত হওয়ায় নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তা অধিকারের বিষয়ে জানে না। তাদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করলে সেবার মান আরও উন্নত করা সম্ভব।

কর্মশালায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ইসমাইল হোসেনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মনজুর আহসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (মানবসম্পদ ও উন্নয়ন) রুমেন শর্মা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিক উল্ল্যাহ, নিরাপদ খাদ্য কর্মকর্তা সামছুল আরেফিন, জেলা তথ্য অফিসার আল আমিন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আছাদুল ইসলাম, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রকৌশলী শরিফ আহম্মেদ আজাদ এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক শওকত আরা কলি।
কর্মশালায় সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা, হোটেল ও বেকারির মালিক এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মচারীরা অংশগ্রহণ করেন।