‘দিবস দিয়ে কি হবে, কাজ না থাকলে পেট চলে না’
এমএ আরাফাত
দিনাজপুরের আসলাম উদ্দিন ফেনীর বড় বাজারে লেবারের (শ্রমিকের) কাজ করছেন গত কয়েকবছর ধরে। প্রতিদিন ভোরে বাজারে আসেন, দিনভর কাঁধে করে সবজি, চালের বস্তা, এমনকি ফ্রিজ কিংবা গ্যাস সিলিন্ডার টেনে নিয়ে যান এক দোকান থেকে আরেক দোকানে। এ পরিশ্রমের বিনিময়ে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা আয় হয় তার। কিন্তু এ টাকায় পরিবারের খরচ ও ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় বলে জানান তিনি।
গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে মহান মে দিবস উপলক্ষ্যে জানতে চাইলে আক্ষেপের সুরে আসলাম উদ্দিন বলেন, শুধু দিবস দিয়ে কি হবে? কাজ না থাকলে তো আমাদের পেট চলে না। আমাদের এ কাজে কোনো নিরাপত্তা নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের দেখার কেউ নেই। এ আয়ে পরিবার নিয়ে চলা খুব কষ্টকর। কাজ না থাকলে খাবারও জোটে না।
আসলাম উদ্দিনের মতো এ গল্প যেন ফেনীর বিভিন্ন বাজারের লেবারেরই (শ্রমিক) প্রতিচ্ছবি। শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের দিন পহেলা মে। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসে সরকারি ছুটি থাকলেও এই দিনেও কাজে বের হতে হয় আসলামদের।।
শহরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, শত শত শ্রমিক বিভিন্ন দোকান থেকে পণ্য ওঠানো-নামানো, ভারি জিনিস বহন, ট্রাক লোড-আনলোডের কাজ করছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এ কাজ করে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা মজুরি পান। কিন্তু তা দিয়ে পরিবারের প্রয়োজন মেটানো যথেষ্ট নয়।
বরিশাল জেলার বাসিন্দা মো. সোহাগ গত কয়েকবছর ধরে ফেনীর বড় বাজারে শ্রমিকের কাজ করছেন। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, প্রতিদিন সকাল থেকেই বাজারে পণ্য আনা-নেওয়া, বস্তা ওঠানো-নামানো, দোকানে পণ্য সরবরাহসহ নানা কাজ করতে হয়। কাঁধে ভার, পায়ে ব্যথা সব সয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত খাটতে হয়।
জামাল হাওলাদার নামের আরেক শ্রমিক বলেন, আমি ট্রাক লোড-আনলোডের কাজ করি। এ কাজের মাধ্যমে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পাই। তবে কাজ না থাকলে কোনো আয়ও থাকে না। বেকার বসে সময় পার করতে হয়।
রংপুর থেকে আসা শ্রমিক হারুন মিয়া বলেন, আমি প্রায় দশ বছর ধরে এ পেশায় যুক্ত আছি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। কখনো প্রচ- রোদ, কখনো বৃষ্টি, আবার কখনো ঠা-ায় কাঁপতে কাঁপতে কাজ করি। ট্রাক থেকে মালামাল লোড-আনলোড করি। আবার মাঝেমধ্যে মানুষজনের বাজারের ব্যাগ গাড়িতে তুলে দিই। শরীরের ওপর দিয়ে অনেক সময় ভারি মাল পড়ে আহত হই। কিন্তু চিকিৎসা নেওয়ার সামর্থ্যও থাকে না আমাদের।
এ ব্যাপারে ফেনী জেলার লেবার ইউনিয়নের সেক্রেটারি মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন খান বলেন, ফেনীতে স্থানীয় শ্রমিকের সংখ্যা কম। খুলনা, বরিশাল, রংপুর, দিনাজপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত শ্রমিকরাই মূলত এ পেশায় যুক্ত। এ ধরনের কাজে ঝুঁকি রয়েছে। অসুস্থ হলেও অনেক সময় চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় না। চিকিৎসার অভাবে অনেক শ্রমিক পঙ্গুত্ব বরণ করেছে, কেউ কেউ মৃত্যুবরণও করেছে। বর্তমান সময়ে ব্যয়বহুল জীবনে এ আয় দিয়ে চলা অত্যন্ত কষ্টকর। আমাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
প্রসঙ্গত, ১৮৮৬ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরের হে মার্কেটের শ্রমিকেরা শ্রমের উপযুক্ত মূল্য ও দৈনিক অনধিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। ওই দিন আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশ গুলি চালায়। এতে অনেক শ্রমিক হতাহত হন। তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দৈনিক কাজের সময় আট ঘণ্টার দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে আন্তর্জাতিকভাবে দিনটি মে দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হয়ে আসছে মে দিবস। এবারের মে দিবসের প্রতিপাদ্য হলো- -‘শ্রমিক-মালিক এক হয়ে, গড়বো এ দেশ নতুন করে’।
শ্রমিক দিবস বোঝে না
ফুলগাজীর ইটভাটার শ্রমিক
মোর্শেদ, ফুলগাজী
জরুরি কাজে প্রতিষ্ঠান থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিলেন ফুলগাজীর বৈরাগপুরের এস আলম ব্রিকস ইটভাটার মালিক রাব্বি। কুশল বিনিময়কালে তিনি জানান, পাশের ফরপুল ইটভাটা লোকসানের কারণে বন্ধ।
মেঘাচ্ছন্ন গ্রীষ্মের তাপদহণে শ্রমিকের শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। শ্রমিকরা পালা করে দুপুরের খাবার খেতে যাচ্ছে পাশের বসতঘরে। যারা কাজে ব্যস্ত তাদের দেহ ধুলোয় মাখামাখি। ক্লান্ত শরীরেও কাজের প্রতি খুবই মনোযোগী। মে দিবস শ্রমিকের অধিকার আদায়ের দিবস হলেও তারা জানে না শ্রমিক দিবস কী।
নেত্রকোনা পূর্বধলা থেকে পেটের দায়ে এসেছে মনু। তিনি জানান, কেন পালন করা হয় মে দিবস। নেত্রকোনার মনুর মতো ইটভাটায় কাজ করা বেশিরভাগ শ্রমিকই মে দিবস আর শ্রম দিবস কি তা তারা বোঝে না। তারা বোঝে একদিন কাজ না করলেই সংসার চালানো যাবে না। তাদের সবার লক্ষ্য একটাই, সারাদিন রোদে পুড়ে হাড়ভাঙা খাটুনির পর সংসার চালানোর খরচ তোলা। মে দিবস আসে-যায় কিন্তু তাদের কাজের বিরাম নেই, মুক্তি মিলছে না মজুরি বৈষম্য থেকেও।
ইট পোড়ানো চুল্লীতে কয়লা দিতে দিতে কথা হয় নোয়াখালীর কামাল ও নুরে আলমের সাথে। শ্রমিক দিবস সম্পর্কে জানতে পেরে সকল শ্রমিকদের শুভকামনা জানিয়ে বলেন কর্মঘণ্টা নেই, তারপরও যে টাকা বেতন পাই এতে নিজেরই চলে না পরিবার চলবে কেমন করে?
নেত্রকোনা থেকে কাজের সন্ধানে আসা ইটভাটার শ্রমিক সর্দার ফারুক কোথাও শ্রমিকদের অধিকার নেই বলে জানান।
ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর, মুন্সীরহাট জিএমহাট ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ইটভাটায় স্থানীয়রা ছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকে এসে শ্রমিকরা কাজ করে।
মেসার্স এস আলম ব্রিকস এর মালিক রাব্বি বলেন, শ্রমিকদের অধিকারের প্রতি সম্মান দেখিয়ে ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রম দিবসে উপজেলায় প্রতিবছরের মতো ইটভাটা বন্ধ থাকে। মালিকরা ইট সরানোসহ কাজের জন্য সর্দারের সঙ্গে চুক্তি করে থাকে। সর্দার প্রয়োজন অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগ করে। শ্রমিকদের নিয়োগ, মুজুরি, ছুটি সব সর্দারই দেখেন।
মশলা ভাঙার ঘরে নারীর নীরব যুদ্ধ
‘মরিচ ও বিদ্যুৎ, কাউকে ওস্তাদ মানে না’
মোস্তাফিজ মুরাদ
‘মরিচ ও বিদ্যুৎ কাউকে ওস্তাদ মানে না। এ কাজের ঝাঁজ বেশি। চোখে পানি চলে আসে। আবার কখনো গলা শুকিয়ে যায়। আমার মতো অনেক নারী এখানে কাজ করছে। সকলেরই একই দশা। মাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হয়, তাও কখনো পুরো টাকা পাই না। এ কাজের কষ্ট বলে বোঝানো যাবে না।’
এভাবেই মে দিবস অথবা বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে নিজের জীবনের গল্প বলছিলেন ফেনীর তাকিয়া রোডের এক মশলা কারখানার শ্রমিক শাহেদা আক্তার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফেনী শহরের নাজির রোড, মহিপাল ও বড় বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ছোটবড় মশলা ভাঙার কারখানাগুলোতে এ নারীরা কাজ করছেন। তাদের কাজের নেই নির্দিষ্ট কোন কর্মঘণ্টা। বেশিরভাগ সময় প্রতিদিন টানা ১০-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত তারা। যাদের বেশিরভাগই দরিদ্র, স্বামীহীন বা একক পরিবার পরিচালনাকারী। এসব সংগ্রামী নারীদের কর্মক্ষেত্রে নেই নূন্যতম সুযোগ-সুবিধা।
বিশ্ব শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে দৈনিক ফেনীর সঙ্গে কথা হয় ৩৫ বছর বয়সী শাহেদা আক্তারের। একসময় গার্মেন্টসে কাজ করতেন নোয়াখালী জেলার এ বাসিন্দা। পরে নদী ভাঙনে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি। অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিলে বন্যায় নষ্ট হয়েছে সেটিও। নিজের পরিশ্রমে ১২ বছরে জমাকৃত ৫ লাখ টাকা হারিয়েছেন অন্যকে ধার দিয়ে।
নিজের জীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরে শাহেদা বলেন, আমার চার সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে তার স্ত্রী নিয়ে আলাদা থাকে৷ মেঝো ছেলেও তার মতো আছে। আমি এখন ছোট দুই সন্তান নিয়ে সংসার চালাচ্ছি। গার্মেন্টসে কাজ করে কিছু টাকা জমা করছিলাম। সবকিছু হারিয়ে এখন ফেনীতে খালার বাসায় থেকে মশলা কারখানায় কাজ করছি।
শাহেদা সঙ্গে মশলা ভাঙার কারখানায় কাজ করছেন ৪০ বছর বয়সী কাজল বেগম। কর্মপরিবেশ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। যখন মরিচ ভাঙি, তখন শুধু চোখের পানি আসে। ধোঁয়ায় শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, গলা ফুলে যায়। মেশিনের তাপও সহ্য করা কঠিন। কিন্তু আমাদের তো আর কোনো পথ নেই। অসুস্থ হলেও ছুটি নেওয়া যায় না। একদিন কাজে না এলে চাকরি চলে যেতে পারে। আবার অসুস্থতায় কয়েকদিন কাজে না আসলেও মজুরি কেটে রাখা হয়।
তিনি বলেন, দেড় বছর ধরে এ কাজ করছি। এবার তেমন কাজ নেই। পরিবার নিয়ে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। ৫ সন্তানের পরিবারে কাজ না থাকলে ধারদেনা করে চলতে হয়। স্বামীও অসুস্থতায় সবসময় কাজ করতে পারে না। এখানে ৩০০ টাকার জন্য ১২ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। শ্রমিক দিবসের দিন অনেকেই কাজ করে না, ছুটিতে থাকে। কিন্তু আমাদের তো পেটের দায় আছে। কাঁধে সংসারের দায়িত্ব আছে। কাজ করে ঘরে বসে থাকার সুযোগ নেই।
মশলা কারখানার আরেক শ্রমিক জেসমিন আক্তার। দৈনিক ফেনীকে তিনি বলেন, এখানে শ্বাস নেওয়াই কষ্টকর, তবুও বসে থাকার উপায় নেই। পেটের দায়ে কাজ করতে হয়। পরিবারে আমার ৩ মেয়ে রয়েছে। এখানকার আয় থেকে কিস্তি, ঘরভাড়াসহ সব খরচ দিতে হয়। গত ১০ বছর ধরে এ কাজ করছি। আমাদের কোনো উৎসবে বোনাস দূরের কথা কেউ খোঁজও নেয়না। এসব দিবস বড়লোকদের জন্য।
ওহাব মিয়া নামে এক মালিক বলেন, সামনে কুরবানির মৌসুম, তবে সে অনুপাতে কাজ নেই। যেদিন মেশিন চলে সেদিনই শ্রমিকদের কাজ করতে হয়।
শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মাস্ক তারা নিজেরা ব্যবহার করে কিংবা ওড়না দিয়ে মুখ বেঁধে রাখে। মশলা ভাঙার কাজ কঠিন, কষ্ট করেই কাজগুলো করতে হয়।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের ফোকাল পার্সন নাজমুল হক শামীম বলেন, আমাদের দেশের নারীরা অবহেলিত। তারা যথাযথ শ্রমের মূল্য পায়না। একইসময় কাজ করে পুরুষ তার থেকে বেশি বেতন পাচ্ছে। নারীরা এখন কলকারখানা, রাস্তা সংস্কার কাজসহ বিভিন্ন জায়গায় কাজ করছে। কিন্তু মজুরিতে সমান অধিকার পাচ্ছেনা। বৈষম্যহীন বাংলাদেশে এ বিষয়ে বৈষম্য দূর করতে হবে। সরকারের উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের নজর দিতে হবে।
তিনি বলেন, একজন মানুষের কর্মঘণ্টা ৮ ঘন্টা। তার বেশি কাজ করলে সেই অনুযায়ী পারিশ্রমিক দিতে হবে। এ বিষয়ে মালিকপক্ষকে সচেতন থাকতে হবে। পাশাপাশি কাজ করার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা সামগ্রী সরবরাহ করতে হবে।
মুচির হাতে শ্রমিক দিবসের রঙ
বাবার স্মৃতি ধরে রেখে সংসার চালাতে উত্তম রবির সংগ্রাম
এমএ হাসান, পরশুরাম
কঠোর পরিশ্রম ও সৎ পথে সংসার চালানোর এক অনন্য সংগ্রামে সহযাত্রী উত্তম রবি দাস। ১৬ বছর বয়সে বাবাকে হারানোর পর, তার ব্যবহৃত মুচির বাক্সের উপকরণে আঁকড়ে ধরে সংসারের হাল ধরেছেন তিনি। প্রায় ২৫ বছর ধরে পরশুরাম উপজেলা সড়কের পূর্ব পাশে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস উপলক্ষ্যে শ্রমের মর্যাদা ও সংগ্রামী জীবনের নানা গল্প দৈনিক ফেনীর কাছে তুলে ধরেছেন উত্তম রবি দাস।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তম রবি দাসের পাশে রাখা একটি কাঠের বাক্স। বক্সটির ভেতরে তিনভাগে ভাগ করা। উপরের সারিতে ডানদিকে চামড়া, বহু ব্যবহারে ক্ষয় হওয়া কাঠের আয়তাকার ছোট তক্তা। নিচের সারিতে বাঁ দিকে রাখা পেরেক, সুতো, সুঁচ, চিমটে ও ছুরি। জুতোয় ব্যবহার করার জন্য কৌটায় রয়েছে রঙ। বাক্সের একটি অংশে আছে চামড়ার কাজ করার জন্য নানা সরঞ্জাম। বাক্সটি রাস্তার পাশে রেখে উপরে সরঞ্জামগুলো সাজিয়ে রাখা হয়েছে। বাবা মারা যাওয়ার পর এগুলোর উপর ভরসা করে সংসারের হাল ধরেন তিনি।
গতকাল বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় উপজেলার পৌর এলাকার দক্ষিণ কোলাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা উত্তম রবির। তিনি বলেন, ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই বাবার সঙ্গে থেকে জুতাই সেলাইয়ের কাজ শেখা। ২০০৫ সালে বাবা রাখাল রবি দাস মারা যান। তখন আমার বয়স ১৬ বছর। বাবা মারা যাওয়ার পর তার স্মৃতি আঁকড়ে ধরে তার ব্যবহৃত বাক্স আর সরঞ্জামাদি দিয়ে কাজ শুরু করি। এ কাজের মাধ্যমেই সংসারের হাল ধরেছি।
সংগ্রামী জীবনের কথা তুলে ধরে উত্তম রবি বলেন, কোনোদিন আয় হয়, আবার কোনোদিন হয় না। আজ ৩০০ টাকার মতো আয় হয়েছে। অভাবের কারণে মাঝেমধ্যে অন্য কাজেও যেতে ইচ্ছা করে। ঝড়বৃষ্টি বা তীব্র গরমের দিনে আয় একদমই কম হয়। টানাপোড়েনের মাঝে কোন রকমে সংসার চলছে। বর্তমান সময়ে এতো অল্প আয়ে সংসার চলে না।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিবস দিয়ে কি হবে? প্রতিদিন যেমন কাজ করতে হয়, দিবসের দিনেও কাজ করতে হয়। আমাদের কাছে দিবসের কোন বিশেষ গুরুত্ব নেই। কাজ করে যা অল্প টাকা আয় হয় তা দিয়েই কোনোমতে সংসার চালানোর চেষ্টা করি।
নিজের ব্যক্তিগত জীবনের চিত্র তুলে ধরে উত্তম রবি বলেন, বাবা ৩৫ বছর ধরে এ কাজ করে সংসার চালাতেন। অভাবের কারণে লেখাপড়া শিখতে পারিনি। ছোট একটি টিনশেডের ঘরে স্ত্রী, এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে থাকি। বড় মেয়ে পরশুরাম মডেল সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ছে। একমাত্র ছেলের বয়স ৪ বছর।