চট্টগ্রামের মিরসরাই থেকে কাজ শেষে ফেনীতে ফেরার পথে মাইজবাড়িয়া হাফেজিয়া এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছিল ৬ নির্মাণশ্রমিক। মামলা আপসে নিহত প্রতি ২৫ হাজার টাকা করে ৬ নিহতের পরিবার পেয়েছে দেড় লাখ টাকা ও আহতদের দুইজন পেয়েছেন ৮০ হাজার টাকা। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদী সবুজ শেখ।

উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর দক্ষিণ মাইজবাড়িয়া হাফেজি মাদ্রাসা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় আরও অন্তত ৬-৭ জন আহত হন। এ ঘটনায় বাগেরহাটের বাঁশবাড়িয়া গ্রামের জামাল শেখের ছেলে সবুজ শেখ বাদী হয়ে চালকসহ কয়েকজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও পরবর্তীতে বাদীর সঙ্গে কাভার্ডভ্যানের মালিকপক্ষ ২ লাখ ৩০ হাজার টাকায় রফা-দফা হয়। এর আগে আপসের মাধ্যমে আদালত থেকে কাভার্ডভ্যানটি ছাড়িয়ে নেয় মালিক পক্ষ।

এ বিষয়ে মহিপাল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারুনুর রশিদ বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় সবুজ শেখ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে ফেনী মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় কাভার্ডভ্যানটি (চট্ট মেট্রো-শ-১১-২০০৯) জব্দ করা হয়। পরে বাদীর সঙ্গে আপসের ভিত্তিতে কাভার্ডভ্যানটি আদালত থেকে ছাড়িয়ে নেয় মালিকপক্ষ। পরে তারা টাকার বিনিময়ে মামলাও তারা আপস করেছে বলে শুনেছি।

ফেনী জেলা ও দায়রা আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিজ্ঞ কৌশলী (পিপি) মিজানুর রহমান সেলিম বলেন, আপসযোগ্য ধারা নেই। এটি আইন বহির্ভূত কাজ।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া বা ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালনার কারণে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। এখানে কেউ না কেউ অবশ্যই জড়িত, অথচ নিরীহ শ্রমিকেরা প্রাণ হারিয়েছেন। আপস করা হচ্ছে এমনটি বলা হলেও, আমি সেটির সমর্থন করি না। যারা এ দুর্ঘটনায় জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে বিচারিক আদালতের মাধ্যমে শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় পিকআপ (ভোলা-ন-১১-০২২৩) হঠাৎ থেমে গেলে পেছন থেকে একটি কাভার্ডভ্যান (চট্ট মেট্রো-শ-১১-২০০৯) ধাক্কা দেয়। এতে পিকআপে থাকা শ্রমিকরা ছিটকে পড়ে যান। এরপর কভার্ডভ্যানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাদের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়, ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৬ জন। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গ থেকে নিহতদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মামলার বাদী সবুজ শেখ দৈনিক ফেনীকে বলেন, নিহতদের পরিবারের চাপে হত্যা মামলাটি ২ লাখ ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রত্যাহার করেছি। এর মধ্যে নিহত ৬ জনের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে মোট দেড় লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। গুরুতর আহত ঢাকা পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীরকে (২৮) ৫০ হাজার টাকা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মনির হোসেনকে (২৮) ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। ২৫ হাজার টাকার একটি চেক বিতরণে জটিলতা থাকলেও তা শিগগিরই সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সবুজ আরও জানান, ঈদের পূর্বে অতিরিক্ত সহায়তা হিসেবে বিভিন্ন ব্যক্তির অনুদানে জাহাঙ্গীরকে ৩০ হাজার টাকা, মনিরকে ২০ হাজার টাকা এবং নিহত ৬ পরিবারের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও দুর্ঘটনার পরদিন জেলা প্রশাসন নিহতদের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়।

সেদিন দুর্ঘটনায় নিহত নির্মাণ শ্রমিকরা হলেন, ভোলা জেলার মনপুরা থানার চর ফয়জুদ্দিন এলাকার মো. ফারুকের ছেলে মো. আরিফ হোসেন (৩০), একই থানার দাসেরহাট গ্রামের মো. নুর হোসেনের ছেলে মো. জুবায়ের মনির (২৮) ও তার ভাই মহিউদ্দিন (২২), বাগেরহাট জেলার মোড়লগঞ্জ থানার পাতাবাড়িয়া এলাকার সাবুল শেখের ছেলে নাজমুল হোসেন (২৮), একই জেলার শরণখোলা থানার দক্ষিণ রাজাপুর এলাকার সোবহান ফরায়জীর ছেলে মাকসুদ প্রকাশ সাদ্দাম (২১) ও কিশোরগঞ্জ জেলার বাজিতপুর থানার বালিগাঁও এলাকার আনার উদ্দিনের ছেলে মো. মারুফ মিয়া (১৯)। তারা সকলেই ফেনী শহরের সহদেবপুরে কাশেম মিয়ার কলোনীতে থাকতেন।

উল্লেখ্য, দুর্ঘটনা থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়া এক নির্মাণ শ্রমিক বলেন, সহদেবপুর এলাকার সবুজের সঙ্গে ভবনের ছাদ ঢালাইয়ের কাজ করতে আমরা ১৮ জন শ্রমিক চট্টগ্রামের মিরসরাই গিয়েছিলাম। কাজ শেষে ফেরার পথে লেমুয়া এলাকায় আমাদের পিকআপটি হঠাৎ থেমে গেলে পেছন থেকে একটি কাভার্ড ভ্যান ধাক্কা দেয়। এতে আমরা ছিটকে পড়ে যাই এবং কাভার্ড ভ্যানটি আমাদের অনেকের উপর দিয়ে চলে যায়।