সূর্য নামলেই বেড়ে যায় ভাড়া, আর এবার তা মোড় নিয়েছে আন্দোলনে। ফেনী-পরশুরাম আঞ্চলিক সড়কে যাত্রীদের যেন জিম্মি করেই চলছে সিএনজি অটোরিকশা চালকদের দৌরাত্ম্য। গতকাল রোববার (১৮ মে) পরশুরাম ও ফুলগাজী সদরে সিএনজি চলাচল বন্ধ রেখে ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষোভ করেছে চালকরা। এতে দুর্ভোগে পড়েন সড়কে বের হওয়া যাত্রীরা।
ফেনী-পরশুরাম সড়কে চলাচল করা যাত্রীদের অভিযোগ, এ দুই উপজেলায় দুই সহস্রাধিক সিএনজি অটোরিকশা থাকলেও রহস্যজনক কারণে প্রশাসনের নিকট তাদের তালিকা নেই। এছাড়া নেই কোনো বৈধ মালিক বা শ্রমিক সংগঠনও। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যাত্রীদের নানাভাবে জিম্মি করে হয়রানি করছেন চালকরা। এবার তারা সিন্ডিকেট করে ভাড়া বাড়ানোর জন্য আন্দোলন করছে।
রাশেদুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, এ সড়কে দিনের সূর্য হেলে পড়ার সঙ্গেই ভাড়া বেড়ে যায়। আবার সড়কে যাত্রী চাপ বাড়লেই স্টেশনে সিএনজি অদৃশ্য হয়ে যায়। চালকদের এতো দৌরাত্ম্যের পরেও এবার তারা ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলন করছে। এখানে আমরা একপ্রকার অসহায়। এ সংকট সমাধানে প্রশাসনও উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা রাখছে না।
সামছুল আলম নামে আরেক যাত্রী বলেন, পরিবহনের যন্ত্রাংশ ও মেরামত খরচ মালিকপক্ষের বিষয়। কিন্তু এখানে চালকরা কেন সেই মালিকের দায় সাধারণ যাত্রীর ঘাড়ে তুলে দিচ্ছেন। এ সড়কে কোনো বৈধ মালিক বা শ্রমিক সংগঠনও নেই। তবুও ভাড়া বাড়ে, আবার গাড়ি বন্ধ করে ধর্মঘট হয়। এটি কোনো যৌক্তিক প্রতিবাদ নয়, বরং একটি সিন্ডিকেট যাত্রীদের জিম্মি করে ভাড়া বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক যাত্রী বলেন, পরশুরাম ও ফুলগাজী সিএনজি স্টেশনে কোনো ধরনের অনুমোদিত সমিতি না থাকলেও প্রতিটি গাড়ি থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয় কথিত লাইনম্যানদের মাধ্যমে। আবার তাদের কেউই পরিচয় প্রকাশ করে না। অথচ দাবি করেন মালিক বা শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধি। প্রশাসনের নাকের ডগায় এমন চাঁদাবাজি আর যাত্রী হয়রানি চললেও কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।
অন্যদিকে সিএনজি চালকদের দাবি, সিএনজি অটোরিকশার প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ ও মেরামত খরচ বেড়ে যাওয়ায় ভাড়া বাড়ানোর আন্দোলনে নেমেছে তারা।
মো. ইব্রাহিম নামে এক সিএনজি চালক বলেন, প্রতিদিন স্টেশনে এসে সিরিয়াল দিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। গ্যাসের খরচ, মালিকের জমাসহ অন্যান্য খরচ বাদ দিয়ে দিনশেষে আমাদের জন্য কিছু থাকেনা। আমরাও বাধ্য হয়ে ভাড়া বাড়ানোর দাবি তুলছি।
এদিকে এদিন ফুলগাজীতে আন্দোলনের খবর পেয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মাশিয়াত আকতার ঘটনাস্থলে গিয়ে চালকদের সঙ্গে কথা বলে আন্দোলন থেকে সরে আসার আহবান জানান। আজ (সোমবার) চালক, সুশীল সমাজ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে বসে আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা নিরসনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি ‘অটোরিকশার মাসোহারা অর্ধ কোটি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ফেনী। যেখানে দেখা যায়, কোনো বৈধ সংগঠন ছাড়াই বছরে প্রায় ৫০ লাখ টাকা চাঁদা তোলা হচ্ছে চালকদের কাছ থেকে। একই বছরের ১২ এপ্রিল ‘সূর্য অস্ত গেলেই বাড়ে অটোরিকশা ভাড়া’ শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে দৈনিক ফেনী।