ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর লালপোল অংশে ফুলে মোড়ানো সড়ক দ্বীপ পথচারীদের দৃষ্টি কেড়েছে। উঁচুউঁচু গাছে ফুটে থাকা বাহারি ফুল মহাসড়কের সৌন্দর্যে এনে দিয়েছে ভিন্ন মাত্রা। তবে এই সৌন্দর্যের আড়ালেই লুকিয়ে আছে ঝুঁকি। চব্বিশের বন্যায় সৃষ্ট ভাঙনের পর সড়ক দ্বীপের মাটি সরে গিয়ে মাঝে থাকা গাছগুলোর শেকড় দেখা যাচ্ছে। বন্যার ৮ মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত গাছগুলোর জন্য মাটি জোটেনি। এতে অনেক গাছই এখন নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে। সামান্য ঝড়-বাতাসে হলে রয়েছে পতনের আশঙ্কা।
বন্যাপরবর্তী সময়ে সড়ক ও জনপদ বিভাগের বিভিন্ন সড়কের মেরামত ও উন্নয়ন কাজ হলেও মহাসড়কের এ গাছগুলো রক্ষায় বন্যার ৮ মাস পার হলেও নেয়া হয়নি কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে স্থানীয় বাসিন্দা ও চলাচলরত পথচারীরা।
সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যা পরবর্তী সময় থেকে অদ্যাবধি ২ হাজার ২৮৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। এরমধ্যে ৮০ কিলোমিটার রাস্তা মেরামত ও ক্ষতিগ্রস্ত ১৯টি সড়কে ১২০ কিলোমিটার সংস্কার করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন ব্রিজ কালভার্ট রেলিংয়ের কাজ করা হয়েছে এবং ২টি প্রকল্প চলমান রয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কের লালপোল থেকে লেমুয়া ব্রিজের আগ পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় সড়কদ্বীপে থাকা গাছগুলোর আশপাশের মাটি সরে গিয়ে শেকড় বেরিয়ে এসেছে। এর মধ্যে সিলোনিয়া এলাকায় ভাঙনের পরিমাণ ব্যাপক। কিছু কিছু গাছের নিচের অংশ ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় এগুলোর স্থায়িত্ব নিয়েও আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ফলে এসব গাছপালা শুধু যান চলাচলের জন্যই নয়, আশপাশের পথচারীদের জন্যও হুমকিস্বরূপ হয়ে উঠেছে। এছাড়াও বন্যার পানির কারণে বিভিন্ন জায়গায় ভেঙে যাওয়ার ফলে সেসব জায়গা দিয়ে যত্রতত্র ভাবে সড়ক পার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে যেকোন সময় দুর্ঘটনার প্রবল আশঙ্কা রয়েছে।
জানা গেছে,২০২৪ সালের শেষার্ধে প্রবল বৃষ্টিপাত ও আকস্মিক বন্যায় লালপোল এলাকার মহাসড়কের ডিভাইডারের বেশ কয়েকটি অংশ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়। এতে মাটি সরে পড়ে। ক্ষতিগ্রস্ত অংশে সিমেন্ট ও কংক্রিট ভেঙে গিয়ে মাঝখানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। গাছগুলোর আশপাশে নেই কোনো সতর্কতামূলক চিহ্ন বা প্রতিবন্ধক।
কেফায়েত নামে এক বাসচালক বলেন, বন্যার সময় এ জায়গাটি আমরা স্বচোখে থেকে দেখেছি। পানির প্রবল স্রোত ছিল। যার কারণে মাটি সরে গেছে। গাছের গোড়ায় মাটি দেওয়া না হলে গাছ গুলো পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অনেক দূর দূরান্তের ড্রাইভাররা এ সম্পর্কে জানেওনা, কোন গাড়ি যদি বিভাজকে দুর্ঘটনার শিকার হয় গাছ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সিলোনিয়া এলাকার এক পথচারী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বন্যা তো আট মাস আগেই হয়েছে, কিন্তু এখনো মাটি ভরাট করা হয়নি। স্থানীয়দের জন্যও এটা দুর্ভাগ্যজনক। মহাসড়কে ফুলের বাহার নিয়ে আলোচনা হয় অথচ গাছগুলোর এমন বেহাল দশা নজরে আসে না।
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেটগ্লোবালের পরিবেশগত সুবিচার ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বিষয়ক সমন্বয়কারী মোহাইমিনুল ইসলাম জিপাত বলেন, ফুলগাছ শুধু সৌন্দর্যের জন্য নয়, এটি বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ রোধ ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। ডিভাইডারের গাছগুলো পড়ে গেলে একদিকে যেমন পরিবেশের ক্ষতি হবে, তেমনি তা পুনরায় বসাতে সময় ও অর্থ ব্যয় হবে। গাছগুলো রক্ষনাবেক্ষণের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ফেনীর সিনিয়র সাংবাদিক ও নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ফেনী জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান দারা বলেন, সড়কদ্বীপের গাছ পড়ে গেলে চলন্ত গাড়ির ওপরও পড়তে পারে, এতে দুর্ঘটনায় হতাহতের আশঙ্কা আছে। ফুলের সৌন্দর্য আমাদের মুগ্ধ করেছে তবে গাছগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষকে আরও যত্নশীল হতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীতি চাকমা বলেন, আমরা লক্ষ করেছি লালপোল থেকে লেমুয়া পর্যন্ত সড়ক বিভাজকের কিছু জায়গায় মাটি সরে গেছে। এগুলাতে মাটি দেওয়ার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে মাটির একটি সংকট চলছে মাটি পেলে মাটি দেয়া হবে। আমরা চেষ্টা করছি ফুলগাছগুলোর রক্ষনাবেক্ষণ করতে, যেসব জায়গায় ফাঁকা রয়েছে সে জায়গায় গাছ রোপনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বর্ষার আগে মাটি দেয়ার কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, বন্যা পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মেয়াদে নিয়মিত বরাদ্দ আসছে। সেগুলো দিয়ে বন্যা ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক, ব্রীজ কালভার্ট সংস্কার করা হয়েছে। কিছু জায়গায় এখনও প্রয়োজন থাকলে সে অনুপাতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।