ফেনী সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বালুয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ১৯২৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। শতবর্ষপূর্তির দ্বারপ্রান্তে এ বিদ্যালয়টি শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে। পরিত্যক্ত টিনশেড ভবনে পাঠদান চলছে। পাঠদানে অনুকূল পরিবেশ না থাকা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গ এখন স্থানীয়ভাবে প্রধান আলোচ্য হয়ে উঠেছে। অথচ ২০২৪ সালে বিদ্যালয়টি জেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে এবং ২০২২ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুন্সি দেলোয়ার হোসেন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক হিসেবে নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য, বিদ্যালয়টিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান হয়।

এতসব অর্জনের বিপরীতে বিদ্যালয়ের বাস্তবচিত্র একেবারেই ভিন্ন। শ্রেণিকক্ষের অভাবে পরিত্যক্ত ঘরে পাঠদান দীর্ঘমেয়াদি শিক্ষার পরিবেশ তৈরিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২ সালে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বালুয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ১৭টি বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবনের বরাদ্দ দেওয়া হয়। এ বিদ্যালয়ের জন্য ৭৩ লক্ষ ৯৪ হাজার ৯৩৩ টাকা বরাদ্দ ছিল। অথচ অজানা কারণে এ বিদ্যালয়সহ আরও পাঁচটি বিদ্যালয়ের বরাদ্দ ফেরত চলে যায়। বর্তমানে মাছিমপুর ও দৌলতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ ১২টি বিদ্যালয়ে ভবন নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফিরোজ আহমেদ বলেন, নতুন ভবন নির্মাণের জন্য নামের তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করি, ভবন নির্মাণ শিগগিরই শুরু হবে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বালুয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির এক একর ভূমি রয়েছে। বিদ্যালয়ে ১৯৮৫ সালে তিন কক্ষবিশিষ্ট টিনশেড ঘর নির্মাণ করা হয়, যা ২০১৯ সালে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উপজেলা প্রশাসন। শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে পরিত্যক্ত ঘরেই পাঠদান চলছে।

বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে তিনটি ভবন ও তিনটি টিনশেড ঘর রয়েছে। ২০০৩ সালে এডিবির অর্থায়নে দুটি কক্ষবিশিষ্ট একতলা ভবন নির্মিত হয় যা এখন পরিত্যক্ত। ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি দোতলা ভবনে চারটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়। ২০১৬ সালে ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি একতলা ভবনে তিনটি কক্ষ নির্মাণ হয়। সব মিলিয়ে বিদ্যালয়ে ৯টি শ্রেণিকক্ষ থাকলেও তার মধ্যে তিনটি পরিত্যক্ত।

পরিত্যক্ত কক্ষগুলো বারবার মেরামত করে শ্রেণিকক্ষে রূপান্তর করে পাঠদান চালানো হচ্ছে বলে জানান প্রধান শিক্ষক। তিনি আরও জানান, মেরামতের মাধ্যমে সেগুলো ব্যবহারযোগ্য রাখা হলেও শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৩ জন শিক্ষক রয়েছেন এবং শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ৬০০ জন। প্রাক-প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ৩৫, প্রথম শ্রেণি ৫০, দ্বিতীয় শ্রেণি ৫১, তৃতীয় শ্রেণি ৫৩, চতুর্থ শ্রেণি ৬০, পঞ্চম শ্রেণি ৭০, ষষ্ঠ শ্রেণি ১০০, সপ্তম শ্রেণি ৯৫ ও অষ্টম শ্রেণিতে ৯২জন। বিদ্যালয়ের একটি পুকুর ও আটটি দোকান দীর্ঘদিন বেদখলে রয়েছে।
বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য সরকারিভাবে প্রজেক্টর, স্ক্রিন ও ল্যাপটপ সরবরাহ করা হলেও বর্তমানে প্রজেক্টরটি নষ্ট থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে শিক্ষার্থীরা আধুনিক শিক্ষাপদ্ধতির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। শিক্ষকরা অভিযোগ করেছেন, প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব সরঞ্জাম অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুন্সি দেলোয়ার হোসেন আরও বলেন, বালুয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জেলার একটি অগ্রগামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রয়োজন অনুযায়ী ৯টি শ্রেণিকক্ষ লাগলেও বর্তমানে মাত্র ৬টি ব্যবহারযোগ্য রয়েছে। তিনটি পরিত্যক্ত কক্ষ মেরামত করে কোনোভাবে পাঠদান চালানো হচ্ছে। এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নির্মিত দুটি টিনশেড ঘরও বর্তমানে জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। দ্রুত একটি নতুন ভবন নির্মাণ না হলে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। তিনি আরো বলেন গত ১৪ এপ্রিল দুপুরে প্রভাবশালীরা পুকুরে সেচ দিয়ে মাছ তুলে নিয়ে যায়।

 



একটি শ্রেণিকক্ষ নির্মাণকাজ চলছে

বালুয়া চৌমুহনী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চারটি কক্ষ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৪ লাখ টাকা। এর পরও শ্রেণিকক্ষ সংকট কাটেনি, একই ভবনে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আবারও একটি কক্ষ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয় ভবনটি ২০০৫-০৬ অর্থবছরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অর্থায়নে নির্মাণ করা হয়। ওই সময় ভবনের নিচতলায় দুটি ও দোতলায় দুটি কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছিল। চলতি অর্থবছরে দোতলার একটি অতিরিক্ত কক্ষ নির্মাণে নতুন করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জানা গেছে, স্থানীয় বিএনপির এক নেতা কাজটি পেয়েছেন এবং ইতোমধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করেছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী দীপ্ত দাস গুপ্ত বলেন, বালুয়া চৌমুহনী বিদ্যালয়ের একটি কক্ষ নির্মাণের জন্য ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুন্সি দেলোয়ার হোসেন বলেন, দোতলার একটি কক্ষ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ হয়েছে বলে শুনেছি। আমার মতে, প্রতি বছর এভাবে একটি করে কক্ষ নির্মাণ না করে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করা হলে শ্রেণিকক্ষ সংকট দূর হবে।